যুদ্ধবিরতি কার্যকর হওয়ার পরই শ্রীনগরে বিস্ফোরণ

ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে সদ্য ঘোষিত যুদ্ধবিরতির পরপরই কাশ্মীরের শ্রীনগরে বিস্ফোরণের জোরালো শব্দ শোনা গেছে। এই ঘটনার পর থেকেই দুই দেশের মধ্যে ফের শুরু হয়েছে পারস্পরিক অভিযোগ-পাল্টা অভিযোগ। যুদ্ধবিরতির ঘোষণাকে কেন্দ্র করে বিশ্বে শান্তির আশার আলো দেখা গেলেও এই বিস্ফোরণ সেই আশায় নতুন করে শঙ্কা তৈরি করেছে।
এই ঘটনা এমন এক সময়ে ঘটল, যখন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প নাটকীয়ভাবে ঘোষণা করেছিলেন—“ভারত ও পাকিস্তান অবিলম্বে যুদ্ধবিরতিতে সম্মত হয়েছে”।
যুদ্ধবিরতি নিয়ে বিতর্ক: কে প্রথম ভেঙেছে চুক্তি?
শনিবার রাত ১১টার কিছু আগে নয়াদিল্লিতে এক জরুরি সংবাদ সম্মেলনে ভারতের পররাষ্ট্রসচিব বিক্রম মিশ্রি বলেন, “যুদ্ধবিরতির শর্ত পাকিস্তান বারবার লঙ্ঘন করছে। ভারতের সেনাবাহিনী যথাযথ ও উপযুক্ত জবাব দিচ্ছে।”
পাল্টা বিবৃতিতে পাকিস্তানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, তারা যুদ্ধবিরতির শর্ত মেনেই চলেছে। উল্টো ভারতের বিরুদ্ধে যুদ্ধবিরতি ভঙ্গের অভিযোগ তোলে ইসলামাবাদ।
এই বিবৃতিগুলোর মধ্যেই শ্রীনগরের আকাশে বিকট বিস্ফোরণের শব্দ। কোনো পক্ষই এ ঘটনার দায়িত্ব স্বীকার করেনি, তবে কাশ্মীরি জনগণের মধ্যে ছড়িয়ে পড়েছে আতঙ্ক।
ওমর আবদুল্লাহর উদ্বেগ: যুদ্ধবিরতির ভবিষ্যৎ কোথায়?
জম্মু ও কাশ্মীরের মুখ্যমন্ত্রী ওমর আবদুল্লাহ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে (সাবেক টুইটার) লিখেছেন—
“সবে হওয়া যুদ্ধবিরতি কি তবে ছাইয়ে পরিণত হলো? শ্রীনগরজুড়ে বিস্ফোরণের শব্দ শোনা যাচ্ছে।”
তার এ মন্তব্য আরও জল্পনা সৃষ্টি করেছে, যুদ্ধবিরতি চুক্তি আদৌ কার্যকর থাকবে কিনা।
যুদ্ধবিরতির হঠাৎ ঘোষণা: যুক্তরাষ্ট্রের কূটনৈতিক সাফল্য?
শনিবার সন্ধ্যায় মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এক হঠাৎ ঘোষণায় জানান,
“ভারত ও পাকিস্তান অবিলম্বে যুদ্ধবিরতিতে সম্মত হয়েছে।”
এ ঘোষণার পরপরই ভারত ও পাকিস্তানের সীমান্ত এলাকা, বিশেষ করে কাশ্মীর অঞ্চলে উৎসবমুখর পরিবেশ তৈরি হয়। সংবাদমাধ্যম, রাজনৈতিক বিশ্লেষক এবং সাধারণ মানুষ এতে স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলেন।
আলোচনার জায়গা নিরপেক্ষ হবে: মার্কো রুবিও
মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও দুই দেশের নেতাদের অভিনন্দন জানিয়ে বলেন—
“প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ও প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফ যুদ্ধবিরতিতে সম্মত হয়ে দায়িত্বশীলতার পরিচয় দিয়েছেন। পরবর্তী আলোচনা নিরপেক্ষ কোনো স্থানে হওয়ার কথা উল্লেখ আছে।”
তবে কোনো নির্দিষ্ট তারিখ বা আলোচনার ভেন্যুর নাম এখনো জানানো হয়নি।
পাকিস্তানের কূটনৈতিক প্রচেষ্টা: ৩০টির বেশি দেশের সহযোগিতা
পাকিস্তানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ইসহাক দার জানান, যুদ্ধবিরতি প্রতিষ্ঠায় ৩০টিরও বেশি দেশ সহায়তা করেছে। এর মধ্যে রয়েছে যুক্তরাষ্ট্র, চীন, সৌদি আরব, সংযুক্ত আরব আমিরাত, কাতার, তুরস্কসহ আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলো।
কাশ্মীরে স্থল বাস্তবতা ভিন্ন: শ্রীনগর বিস্ফোরণকে ঘিরে নানা মত
এখন পর্যন্ত জানা গেছে, বিস্ফোরণের ঘটনায় হতাহতের কোনো সুনির্দিষ্ট তথ্য পাওয়া যায়নি। তবে স্থানীয় প্রশাসন ও সেনাবাহিনী সতর্ক অবস্থান নিয়েছে। বিশ্লেষকরা বলছেন, যুদ্ধবিরতি ঘোষণার পরপরই এমন বিস্ফোরণ স্বাভাবিক নয় এবং এর উৎস খুঁজে বের করা জরুরি।
বিশ্লেষক মতামত: যুদ্ধবিরতি কি কাগজেই সীমাবদ্ধ?
রাজনৈতিক বিশ্লেষক প্রফেসর নেহা আনন্দ বলেন,
“যুদ্ধবিরতির ঘোষণায় কূটনৈতিক সাফল্য থাকলেও মাটিতে তার প্রতিফলন না ঘটলে তা কেবল কাগুজে চুক্তি হয়ে থাকবে।”
অন্যদিকে পাকিস্তানি নিরাপত্তা বিশ্লেষক মেজর (অব.) আদনান গুল বলেন,
“ভারতের অভ্যন্তরীণ রাজনীতি ও নির্বাচনী হিসাব নিকাশের কারণে কাশ্মীর পরিস্থিতি অস্থিতিশীল রাখা হতে পারে।”
জনগণের প্রতিক্রিয়া: ‘শান্তির কথা শুনি, গুলির আওয়াজ পাই’
কাশ্মীরের সাধারণ মানুষদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, যুদ্ধবিরতির ঘোষণায় তারা আশাবাদী হলেও বাস্তবতার সঙ্গে মিল খুঁজে পাচ্ছেন না।
একজন শ্রীনগরবাসী বলেন,
“শান্তির কথা শুনি, কিন্তু রাতে গুলির শব্দে ঘুম ভাঙে। এতদিন পর আবার বিস্ফোরণ আমাদের আতঙ্কিত করেছে।”
সামনে কী?
ভারত ও পাকিস্তান উভয় দেশ যুদ্ধবিরতির ব্যাপারে নিজেদের প্রতিশ্রুতি পুনর্ব্যক্ত করলেও শুরুতেই এই ধরনের ঘটনা সেই প্রতিশ্রুতি রক্ষার প্রশ্নে সন্দেহ তৈরি করেছে।
বিশ্ব সম্প্রদায়ের নজর এখন কাশ্মীর সীমান্তে। কূটনৈতিক স্তরে যুদ্ধবিরতির অগ্রগতি ঘটলেও, মাঠপর্যায়ে কার্যকর বাস্তবায়ন ছাড়া এই শান্তি প্রচেষ্টা কতটা টেকসই হবে, তা নিয়ে সংশয় থাকছেই।
সংক্ষেপে মূল পয়েন্টসমূহ:
- মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের ঘোষণায় যুদ্ধবিরতি শুরু
- এরপরই শ্রীনগরে বিস্ফোরণের শব্দ
- ভারত-পাকিস্তানের পারস্পরিক অভিযোগ
- মার্কিন ও আন্তর্জাতিক সহায়তায় আলোচনার উদ্যোগ
- কাশ্মীরবাসীর মধ্যে আতঙ্ক ও শঙ্কা
- বিশ্লেষকদের মতে, মাঠের বাস্তবতা না বদলালে চুক্তির ফল শূন্য