ইসরাইল ও নেতানিয়াহুর পতন আসন্ন: ইরানি জেনারেল

তেহরানে এক অনুষ্ঠানে ইরানের শীর্ষ সামরিক উপদেষ্টা মেজর জেনারেল ইয়াহিয়া রহিম সাফাভি হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেন, “ইহুদিবাদী সরকার ও নেতানিয়াহুর পতন এখন সময়ের ব্যাপার মাত্র।” ইসরাইলের যে কোনো ভুল সিদ্ধান্ত তাদের অস্তিত্বকেই চ্যালেঞ্জে ফেলবে বলেও সতর্ক করেন তিনি।
ইরানি জেনারেলের কড়া বার্তা
ইরানের শীর্ষ সামরিক উপদেষ্টা এবং ইসলামী প্রজাতন্ত্রের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলী খামেনির ঘনিষ্ঠ সহকারী মেজর জেনারেল ইয়াহিয়া রহিম সাফাভি সম্প্রতি ইসরাইল এবং তার প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর বিরুদ্ধে জোরালো হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেছেন।
তিনি বলেন, “ইসরাইলি শাসনব্যবস্থা এবং নেতানিয়াহুর পতন আসন্ন। তারা যদি আরেকটি ভুল করে, তবে তাদের সব ঘাঁটি ও স্বার্থ বড় ধরনের হুমকির মুখে পড়বে।”
এই বক্তব্য তিনি দেন তেহরানে ইরানের সাবেক চিফ অব স্টাফ লেফটেন্যান্ট জেনারেল মোহাম্মদ হোসেইন বাকেরির স্মরণে আয়োজিত এক আনুষ্ঠানিক অনুষ্ঠানে। তাসনিম নিউজ এজেন্সির মতে, এই বক্তব্য সরাসরি একটি বার্তা বহন করে — ইরান আর প্রতিক্রিয়া নয়, বরং প্রতিরোধের অবস্থানে।
যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরাইল ব্যর্থ
জেনারেল সাফাভি বলেন, “বড় শয়তান (যুক্তরাষ্ট্র) এবং ছোট শয়তান (ইসরাইল) ইরানের বিরুদ্ধে সাম্প্রতিক আগ্রাসনে ব্যর্থ হয়েছে।” তিনি দাবি করেন, ইসরাইলের আগ্রাসন বরং তাদের নিজেদের ধ্বংস ডেকে আনছে।
এই বক্তব্য মধ্যপ্রাচ্যের উত্তেজনাপূর্ণ পরিস্থিতিতে এক নতুন মাত্রা যোগ করেছে। তিনি আরও বলেন, “যুদ্ধবিরতি হলে সংঘাত থেমে যাবে ঠিকই, কিন্তু আমাদের শত্রুদের ঘাঁটি, স্বার্থ ও কাঠামো সম্পর্কে আমাদের পূর্ণ ধারণা রয়েছে।”
ইসরাইলের বিপদ ঘনিয়ে আসছে?
মেজর জেনারেল সাফাভি হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেন, “ইসরাইল যদি আরেকবার ভুল করে, তবে তাদের সব ঘাঁটি আরও তীব্র প্রতিক্রিয়ার মুখে পড়বে।”
তিনি সরাসরি উল্লেখ করেন, ইরান এখন শুধু প্রতিরক্ষামূলক অবস্থানে নয়, বরং আগ্রাসনের মুখেও জবাব দিতে প্রস্তুত। এই ধরনের মন্তব্য ভবিষ্যতে ইরান ও ইসরাইলের মধ্যে সরাসরি সংঘাতের ইঙ্গিতও বহন করছে।
ইসরাইলি শাসনের টালমাটাল অবস্থা
নেতানিয়াহুর নেতৃত্বাধীন সরকার বর্তমানে অভ্যন্তরীণ ও আন্তর্জাতিক চাপে রয়েছে।
একদিকে গাজা পরিস্থিতি এবং অন্যদিকে আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থাগুলোর চাপ, তার ওপরে ইরান ও অন্যান্য আঞ্চলিক শক্তির চাপ — সব মিলিয়ে নেতানিয়াহুর সরকার রাজনৈতিকভাবে দুর্বল হয়ে পড়ছে।
ইসরাইলের অভ্যন্তরে সরকারবিরোধী আন্দোলন, রাজনৈতিক অস্থিরতা ও সেনাবাহিনীর মধ্যেও মতভেদ লক্ষ্য করা যাচ্ছে।
ইরানের শক্ত অবস্থান ও প্রস্তুতি
ইরানি সামরিক বিশ্লেষকরা বলছেন, ইসরাইলের প্রতিটি ভুল সিদ্ধান্ত ইরানের জন্য একটি সুযোগ। ইরান কেবল প্রতিক্রিয়াশীল নয় — তারা যুদ্ধ কৌশলে নিজেদের আধিপত্য প্রতিষ্ঠার চেষ্টায় আছে।
বিশ্লেষকদের মতে, ইসরাইল যদি ভুল করে, তবে তেহরান থেকে সরাসরি সামরিক প্রতিক্রিয়া না এলেও হিজবুল্লাহ, হুথি বা অন্যান্য মিত্র গোষ্ঠীর মাধ্যমে চাপ বাড়ানো হবে।
আন্তর্জাতিক প্রতিক্রিয়া
মধ্যপ্রাচ্যে যেকোনো উত্তেজনা দ্রুতই আন্তর্জাতিক ইস্যুতে পরিণত হয়। যুক্তরাষ্ট্র, রাশিয়া, চীনসহ অনেক রাষ্ট্র এ সংঘাতকে পর্যবেক্ষণ করছে।
যদিও ইরান সরাসরি যুদ্ধ চায় না বলেই দাবি করে, তবে তাদের সাম্প্রতিক কড়া বার্তাগুলো যুদ্ধের সম্ভাবনা একেবারে উড়িয়ে দিচ্ছে না।
“ইহুদিবাদী শাসনব্যবস্থা ও নেতানিয়াহুর পতন এখন সময়ের ব্যাপার। যদি তারা আরেকটি ভুল করে, তাহলে তাদের অস্তিত্বই হুমকির মুখে পড়বে।” — মেজর জেনারেল ইয়াহিয়া রহিম সাফাভি
সারসংক্ষেপঃ
ইরানি জেনারেলের এমন কড়া হুঁশিয়ারির পর মধ্যপ্রাচ্য আবারও উত্তেজনার নতুন স্তরে পৌঁছেছে। ইসরাইলের সাম্প্রতিক কর্মকাণ্ড ও নেতানিয়াহুর রাজনৈতিক অবস্থান নিয়ে প্রশ্ন উঠছে আন্তর্জাতিক অঙ্গনেও।
এখন দেখার বিষয়, ইসরাইল কি পরিস্থিতি সামাল দিতে পারবে নাকি এই হুঁশিয়ারি আরও বড় সংঘাতের ইঙ্গিত দিচ্ছে?
এম আর এম – ০১২০, Signalbd.com