বিশ্ব

যুক্তরাষ্ট্রে উড্ডয়নের ৭ মিনিটেই বিমান বিধ্বস্ত, সব আরোহী নিহত

ওহাইও রাজ্যের আকাশে উড্ডয়নের কয়েক মিনিটের মধ্যেই ভয়াবহ দুর্ঘটনার শিকার হয় একটি ব্যক্তিগত বিমান। ছয়জন আরোহীর সবাই প্রাণ হারিয়েছেন, যাদের মধ্যে রয়েছেন একই পরিবারের চার সদস্য এবং দুইজন বিমানচালক।

উড্ডয়নের ৭ মিনিটেই বিধ্বস্ত সেসনা-৪৪১

যুক্তরাষ্ট্রের ওহাইও অঙ্গরাজ্যের আকাশে উড্ডয়নের মাত্র ৭ মিনিটের মধ্যেই বিধ্বস্ত হয়েছে একটি ব্যক্তিগত উড়োজাহাজ। স্থানীয় সময় রোববার (৩০ জুন) সকাল বেলায় ওহাইওর মারিয়ন মিউনিসিপাল বিমানবন্দরের কাছেই ঘটে এ মর্মান্তিক দুর্ঘটনা।
সেসনা-৪৪১ কনক্লেস্ট-টু মডেলের ওই বিমানটিতে থাকা ছয় আরোহীর সবাই ঘটনাস্থলেই নিহত হন।

নিহতদের মধ্যে একই পরিবারের চার সদস্য

মার্কিন সংবাদমাধ্যম ও স্থানীয় প্রশাসনের বরাত দিয়ে জানা গেছে, বিমানটিতে থাকা ছয়জনের মধ্যে চারজনই ছিলেন একটি পরিবারের সদস্য। নিহতরা হলেন—

  • ভেরোনিকা ওয়েলার (৬৮)
  • জেমস ওয়েলার (৬৭)
  • জন ওয়েলার (৩৬)
  • মারিয়া ওয়েলার (৩৪)

এই পরিবারের চার সদস্যই যুক্তরাষ্ট্রের ওহাইওরই বাসিন্দা ছিলেন এবং তারা একটি পারিবারিক ভ্রমণে যাচ্ছিলেন বলে জানানো হয়।

পাইলট ও কো-পাইলটের পরিচয়

অপর দুইজন ছিলেন বিমানটির চালক ও সহকারী চালক। তাদের মধ্যে পাইলট ছিলেন জোসেফ ম্যাক্সিন (৬৩) এবং কো-পাইলট ছিলেন টিমোথি ব্লেক (৫৫)।
প্রাথমিক তদন্তে জানা গেছে, দুইজন পাইলটই ছিলেন দক্ষ এবং লাইসেন্সধারী। তবে দুর্ঘটনার প্রকৃত কারণ সম্পর্কে এখনো কিছু জানায়নি কর্তৃপক্ষ।

ঠিক কোথায় ও কীভাবে ঘটল দুর্ঘটনাটি?

স্থানীয় সময় সকাল ১১টার কিছু আগে বিমানটি মারিয়ন মিউনিসিপাল বিমানবন্দর থেকে উড্ডয়ন করে। উড্ডয়নের মাত্র সাত মিনিট পরে এটি বিমানবন্দরের উত্তর-পূর্ব দিকের একটি খোলা মাঠে বিধ্বস্ত হয়।
বিমানটির বিধ্বস্ত হওয়ার সময় আকাশে আবহাওয়া তুলনামূলকভাবে ভালো ছিল এবং কোনো বজ্রপাত বা ঘূর্ণিঝড়ের সতর্কতা জারি ছিল না।

স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, তারা হঠাৎ একটি বিকট শব্দ শুনতে পান। এরপর আগুন ও ধোঁয়ার কুন্ডলী উঠতে দেখেন। অনেকেই ঘটনাস্থলের দিকে দৌড়ে যান, কিন্তু ততক্ষণে আগুনের তীব্রতায় কিছুই করা সম্ভব ছিল না।

তদন্তে কী বলছে কর্তৃপক্ষ?

বিমান দুর্ঘটনার পর পরই ঘটনাস্থলে ছুটে যায় ফেডারেল এভিয়েশন অ্যাডমিনিস্ট্রেশন (FAA) এবং ন্যাশনাল ট্রান্সপোর্টেশন সেফটি বোর্ড (NTSB)। তারা এখনো ঘটনাটির তদন্ত চালিয়ে যাচ্ছে।
NTSB এর পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, প্রাথমিকভাবে যান্ত্রিক ত্রুটি, মানবিক ভুল কিংবা আবহাওয়া—সবকিছুই সম্ভাবনার আওতায় রাখা হয়েছে।
একজন কর্মকর্তা জানান, “বিমানটি রাডার থেকে হঠাৎ অদৃশ্য হয়ে যায়, এর কিছুক্ষণ পরেই বিধ্বস্ত হওয়ার খবর আসে।”

অতীতে এমন দুর্ঘটনা কতবার ঘটেছে?

যুক্তরাষ্ট্রে ব্যক্তিগত বিমান দুর্ঘটনার ঘটনা নতুন নয়। বিশেষ করে ছোট আকারের বিমান, যেমন সেসনা বা পাইপার মডেলের উড়োজাহাজ, প্রায়ই দুর্ঘটনার শিকার হয়।
২০২৩ সালে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ছোট বিমান দুর্ঘটনায় মোট ৩৯৮ জনের মৃত্যু হয়েছিল। FAA এবং NTSB প্রতিটি ঘটনাকেই গুরুত্ব সহকারে তদন্ত করে, তবে অনেক সময়েই এসব দুর্ঘটনার পিছনে থাকে যান্ত্রিক ত্রুটি বা প্রশিক্ষণের অভাব।

সামাজিক মাধ্যমে শোকের ছায়া

এই দুর্ঘটনার পর সামাজিক মাধ্যমে গভীর শোক প্রকাশ করেছেন স্থানীয় বাসিন্দা ও পরিবারের বন্ধু-বান্ধবরা।
একজন স্থানীয় বাসিন্দা টুইটারে লেখেন, “এটা খুবই হৃদয়বিদারক ঘটনা। ওই পরিবারটিকে আমরা সবাই চিনতাম, তারা খুব ভালো মানুষ ছিলেন।”

শেষ কথা

একটি সুখের পারিবারিক ভ্রমণ যে এত দ্রুত মর্মান্তিক পরিণতির দিকে চলে যাবে, তা কেউই কল্পনা করতে পারেনি। বিমানটি উড্ডয়নের মাত্র সাত মিনিটের মধ্যে বিধ্বস্ত হওয়া অনেক প্রশ্নের জন্ম দিয়েছে।
NTSB ও FAA তাদের পূর্ণাঙ্গ তদন্তের প্রতিবেদন প্রকাশ করলে হয়তো জানা যাবে প্রকৃত কারণ। তবে এর আগ পর্যন্ত ওই পরিবারের বেঁচে থাকা সদস্যরা এবং স্থানীয় সমাজ রয়ে গেছে গভীর শোক আর বিস্ময়ের মধ্যে।

তবে প্রশ্ন রয়ে যায়—সেসনা-৪৪১ মডেলের এয়ারক্র্যাফটগুলো কতটা নিরাপদ, এবং ভবিষ্যতে এ ধরনের দুর্ঘটনা রোধে আরও কী পদক্ষেপ নেওয়া উচিত?

এম আর এম – ০১২১, Signalbd.com

মন্তব্য করুন

Related Articles

Back to top button