অর্থনীতি

বড় পরিবর্তন সর্বজনীন পেনশন স্কিমে, ইসলামিক সংস্করণ চালুর উদ্যোগ

বাংলাদেশের নাগরিকদের জন্য চালু হওয়া সর্বজনীন পেনশন স্কিমে এসেছে কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তন।
জাতীয় পেনশন কর্তৃপক্ষের সর্বশেষ পরিচালনা পর্ষদ সভায় এই পরিবর্তনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়, যার মধ্যে রয়েছে এককালীন অর্থ উত্তোলনের সুযোগ, প্রবাস ও প্রগতি স্কিমে চাঁদার হার হ্রাস, এবং ইসলামিক সংস্করণ চালুর পরিকল্পনা।

৩০% অর্থ এককালীন উত্তোলনের সুযোগ

জাতীয় পেনশন স্কিমে অংশগ্রহণকারী কেউ যদি নির্ধারিত পেনশনযোগ্য বয়সে উপনীত হন, তিনি চাইলে নিজের জমা করা টাকার সর্বোচ্চ ৩০ শতাংশ এককালীন উত্তোলন করতে পারবেন।
এটি বিশেষ করে চিকিৎসা, বড় কেনাকাটা বা জরুরি প্রয়োজন মেটাতে সহায়ক হবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।

এই সিদ্ধান্তটি এসেছে ১৪ মে বুধবার, অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত পরিচালনা পর্ষদের বৈঠকে।

প্রবাস ও প্রগতি স্কিমে চাঁদার হার কমেছে

অনেক প্রবাসী এবং অনানুষ্ঠানিক খাতে কর্মরত ব্যক্তিরা আগে মাসে ২ হাজার টাকা চাঁদা দিতে গিয়ে সমস্যায় পড়ছিলেন। তাই সভায় সিদ্ধান্ত হয়,
প্রবাস এবং প্রগতি স্কিমে সর্বনিম্ন মাসিক চাঁদা কমিয়ে এক হাজার টাকা নির্ধারণ করা হবে।

এতে এসব নিম্নআয়ের নাগরিকরা এখন আরও সহজে এই স্কিমে অংশগ্রহণ করতে পারবেন।

উচ্চ আয়ের জন্য চাঁদার সীমা বৃদ্ধি

যাঁরা প্রগতি স্কিমে আছেন এবং যাঁদের মাসিক আয় বেসরকারি খাতের গড় আয়ের চেয়েও বেশি, তাঁদের জন্য মাসিক সর্বোচ্চ চাঁদা ১০ হাজার টাকা থেকে বাড়িয়ে ১৫ হাজার টাকা করা হয়েছে।
এই সিদ্ধান্তের ফলে মধ্যম ও উচ্চবিত্ত পেশাজীবীরাও এখন পেনশন সঞ্চয়ে বেশি অবদান রাখতে পারবেন।

আউটসোর্সিং কর্মীদের অন্তর্ভুক্তি

সভায় আরও সিদ্ধান্ত হয় যে, আউটসোর্সিং ভিত্তিতে নিয়োজিত চুক্তিভিত্তিক কর্মীদের প্রগতি স্কিমে অন্তর্ভুক্ত করা হবে।
এটি একটি সময়োপযোগী পদক্ষেপ, কারণ দেশের অনেক তরুণ ও দক্ষ কর্মী এই ধরনের চুক্তিভিত্তিক কাজের সঙ্গে যুক্ত।

ইসলামিক পেনশন স্কিম চালুর প্রাথমিক পরিকল্পনা

বাংলাদেশের একটি বড় অংশের নাগরিক ইসলামি শরিয়াভিত্তিক আর্থিক সেবা গ্রহণে আগ্রহী। সেই বাস্তবতায়, জাতীয় পেনশন কর্তৃপক্ষ সর্বজনীন পেনশন স্কিমের ইসলামিক ভার্সন চালু করার সম্ভাব্যতা যাচাই করছে।
পরবর্তী বোর্ড সভায় এটি উপস্থাপন করা হবে বলে জানা গেছে।

সার্বিক দৃষ্টিকোণ: অংশগ্রহণ বাড়ানোর কৌশল

এই পরিবর্তনগুলো পেনশন স্কিমে অংশগ্রহণকারীদের সংখ্যা বাড়ানোর লক্ষ্যে নেওয়া হয়েছে।
সরকার চায়, দেশের প্রতিটি শ্রেণি-পেশার মানুষ যাতে সুরক্ষিত বার্ধক্য নিশ্চিত করতে পারে, আর এই স্কিম তারই একটি পদক্ষেপ।
এটি দেশের সামাজিক নিরাপত্তা বলয়ের অংশ হিসেবেও বিবেচিত।

জাতীয় পেনশন স্কিমে বড় পরিবর্তনগুলো দেশের লাখো মানুষের জীবনযাত্রার মান উন্নয়নে কার্যকর ভূমিকা রাখবে।
বিশেষ করে প্রবাসী, প্রগতি ও ইসলামিক সংস্করণের মতো উদ্যোগের মাধ্যমে সবার জন্য গ্রহণযোগ্য ও অংশগ্রহণমূলক একটি পেনশন ব্যবস্থা গড়ে তোলার পথেই এগোচ্ছে সরকার।

মন্তব্য করুন

Related Articles

Back to top button