নির্বাচনী বাজেটে কার্পণ্য নেই, সারের সরবরাহ বাড়ানো হবে

আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনের জন্য অর্থ বরাদ্দে কোনো ধরনের কঞ্জুসি বা কার্পণ্য করা হবে না বলে জানিয়েছেন বাংলাদেশ সরকারের অর্থ উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদ। আজ মঙ্গলবার, সরকারি ক্রয় সংক্রান্ত উপদেষ্টা পরিষদ কমিটির বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি এ তথ্য নিশ্চিত করেন
অর্থ উপদেষ্টা বলেন, “নির্বাচনী বাজেটে জনগণের জন্য প্রয়োজনীয় সকল খাতের জন্য যথাযথ অর্থ বরাদ্দ রাখা হবে। দেশের উন্নয়ন ও জনগণের সার্বিক কল্যাণে আমরা কোনো আপস করব না।”
চট্টগ্রাম বন্দরে কনটেইনার হ্যান্ডেলিংয়ে নীতিগত অনুমোদন
আজকের বৈঠকে চট্টগ্রাম বন্দরে কনটেইনার হ্যান্ডেলিংয়ের বিষয়েও গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। অর্থনৈতিক বিষয় সংক্রান্ত উপদেষ্টা পরিষদ কমিটির বৈঠকে এই বিষয়টি নীতিগতভাবে অনুমোদিত হয়েছে। এতে বন্দরের কার্যক্রম আরও দ্রুততর ও সুচারুভাবে পরিচালিত হবে বলে আশা করা হচ্ছে।
অর্থ উপদেষ্টা আরও জানান, “চট্টগ্রাম বন্দরে যে স্থবিরতা ছিল, সেটি কাটিয়ে ওঠার জন্য আমরা প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিয়েছি। বন্দরে পণ্য আমদানি-রফতানি প্রক্রিয়া স্বাভাবিকভাবেই দ্রুত হবে, যা দেশের বাণিজ্য ও অর্থনীতিকে বড় ধাক্কা থেকে রক্ষা করবে।”
ডিএপি, ইউরিয়া সার ও এলএনজি কেনার সিদ্ধান্ত
বৈঠকে ডিএপি ও ইউরিয়া সারের আমদানির বিষয়েও সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। এছাড়াও, এলএনজি (তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস) কেনার বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হয়েছে, যা দেশের সার শিল্পে নতুন গতি এনে দেবে।
অর্থ উপদেষ্টা বলেন, “এলএনজি আসার মাধ্যমে সার উৎপাদন বেড়ে যাবে, ফলে কৃষকদের জন্য সার সরবরাহ আরও সহজ ও পর্যাপ্ত হবে। এটি কৃষি খাতের উন্নয়নে বিশেষ ভূমিকা রাখবে।”
শ্রম ও কর্মসংস্থান উপদেষ্টা এম সাখাওয়াত হোসেনের বক্তব্য
অন্যদিকে, শ্রম ও কর্মসংস্থান উপদেষ্টা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) এম সাখাওয়াত হোসেনও আজ সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে উল্লেখ করেন, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) কে অত্যাবশ্যকীয় সেবা ঘোষণা সম্পর্কিত প্রজ্ঞাপনের বিষয়টি চূড়ান্ত করা হয়েছে।
তিনি বলেন, “আপনারা যে প্রজ্ঞাপন দেখেছেন, সেটাই চূড়ান্ত। অতিরিক্ত কোনো প্রজ্ঞাপন নেই, আগেও ছিল না। এ বিষয়ে আমরা প্রয়োজনীয় সিদ্ধান্ত নিয়েছি এবং সেই অনুযায়ী প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়েছে।”
বন্দরের স্থবিরতার পরিপ্রেক্ষিতে ক্ষতি সীমিত
চট্টগ্রাম বন্দরের সাম্প্রতিক স্থবিরতা এবং তার ফলে যে আর্থিক ক্ষতি হয়েছে সে প্রসঙ্গে তিনি জানান, পণ্য পরিবহন সম্পূর্ণরূপে বন্ধ ছিল না। বন্দরে ঢুকেছে এমন পণ্য এখন দ্রুত জাহাজে তোলা হচ্ছে। ক্ষতির পরিমাণ এখনো সঠিকভাবে নিরূপণ করা যায়নি, তবে এ পর্যন্ত ক্ষতি খুব বেশি হয়নি।
নির্বাচনী বাজেটে বিশেষ গুরুত্ব দেশের অর্থনীতি ও কৃষি খাতের জন্য
বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে বলাই যায়, বাংলাদেশে প্রতি পাঁচ বছর অন্তর অনুষ্ঠিত জাতীয় সংসদ নির্বাচনের সময় অর্থনৈতিক পরিকল্পনা ও বাজেট প্রণয়নে বিশেষ মনোযোগ দেয়া হয়। দেশের রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা এবং জনগণের কল্যাণে বাজেটের যথাযথ বরাদ্দ জরুরি।
অর্থ উপদেষ্টার এই বক্তব্য প্রমাণ করে, আগামী নির্বাচনেও দেশের অর্থনীতি এবং কৃষিক্ষেত্রে বিনিয়োগ অব্যাহত থাকবে। সারের পর্যাপ্ত সরবরাহ কৃষকদের উৎপাদন বৃদ্ধিতে সহায়তা করবে, যা খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণে বিশেষ ভূমিকা রাখবে।
দেশের অর্থনীতি ও সার সরবরাহের গুরুত্ব
বাংলাদেশের কৃষি প্রধান দেশ হওয়ায় সারের যথাযথ সরবরাহ কৃষকদের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। ডিএপি এবং ইউরিয়া সার দেশের প্রধান সার যা ফসল উৎপাদনে ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত হয়। সরবরাহ কমে গেলে কৃষক উৎপাদন কমিয়ে দেয়, ফলে দেশে খাদ্যের অভাব দেখা দিতে পারে।
তাই এলএনজি ও সার আমদানির বিষয়ে নেওয়া সিদ্ধান্ত বাংলাদেশের কৃষিক্ষেত্রে নতুন দিগন্ত উন্মোচন করবে। দেশের খাদ্য উৎপাদন সক্ষমতা বৃদ্ধি পাবে এবং কৃষকের আয় বাড়বে।
বন্দরের আধুনিকীকরণ ও কার্যকারিতা বাড়ানো
চট্টগ্রাম বন্দর বাংলাদেশের প্রধান বাণিজ্যিক প্রবেশদ্বার। দেশের মোট আমদানি-রফতানির প্রায় ৯০% পণ্য এই বন্দরের মাধ্যমে আসে। তাই বন্দরের দক্ষতা বৃদ্ধির মাধ্যমে দেশের অর্থনীতিকে বড় ধাক্কা থেকে রক্ষা করা যায়।
বর্তমান সময়ে বন্দরের আধুনিকীকরণ ও অবকাঠামো উন্নয়ন অত্যন্ত জরুরি। কনটেইনার হ্যান্ডেলিং প্রক্রিয়া দ্রুত ও দক্ষতার সাথে সম্পন্ন হলে বাণিজ্যিক খরচ কমে যাবে এবং পণ্য পরিবহনে দ্রুততা আসবে।
সারসংক্ষেপ
- নির্বাচনী বাজেট: কার্পণ্য বা কঞ্জুসি করা হবে না, জনগণের উন্নয়ন অগ্রাধিকার পাবে।
- সার আমদানি: ডিএপি ও ইউরিয়া সারের আমদানির সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
- এলএনজি ক্রয়: এলএনজি আসার ফলে সার উৎপাদন বৃদ্ধি পাবে।
- বন্দর কার্যক্রম: চট্টগ্রাম বন্দরে কনটেইনার হ্যান্ডেলিংয়ে নীতিগত অনুমোদন।
- শ্রম উপদেষ্টার বক্তব্য: এনবিআরকে অত্যাবশ্যকীয় সেবা ঘোষণা প্রজ্ঞাপন চূড়ান্ত।
- বন্দরের স্থবিরতা: সম্পূর্ণ বন্ধ ছিল না, ক্ষতি সীমিত।