অর্থনীতি

ট্রাম্পের হাতে লেখা চিঠি ফেড চেয়ারম্যানকে, সুদের হার কমাতে অনুরোধ

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প আবারো ফেডারেল রিজার্ভের বিরুদ্ধে সরব হয়েছেন। তিনি ফেডের বর্তমান চেয়ারম্যান জেরোম পাওয়েল ও পরিচালনা পর্ষদকে তীব্র সমালোচনা করে সুদের হার কমানোর আহ্বান জানিয়েছেন।

ফেডের কাছে ট্রাম্পের কড়া বার্তা

২০২৫ সালের ১ জুলাই, সোমবার, মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রকাশ করেন এক হাতের লেখা চিঠি, যা তিনি সরাসরি ফেডারেল রিজার্ভের চেয়ারম্যান জেরোম পাওয়েল ও বোর্ড সদস্যদের উদ্দেশ্যে প্রেরণ করেছেন। এতে তিনি স্পষ্টভাবে দাবি করেন, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সুদের হার ‘অত্যন্ত নিম্ন’ পর্যায়ে নিয়ে আসতে হবে। ট্রাম্প বলেন, বর্তমান উচ্চ সুদের হার দেশের অর্থনীতির জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর এবং ফেডের কর্মকর্তাদের উচিত আরও কার্যকরী পদক্ষেপ নেওয়া।

ট্রাম্পের এই আহ্বান একদিকে যেমন অর্থনীতির দুর্বলতাকে সামনে এনে দেয়, অন্যদিকে ফেডারেল রিজার্ভের স্বাধীনতা ও নীতিনির্ধারণ প্রক্রিয়ার ওপর বিরোধিতার নতুন দিক নির্দেশ করে।

সুদের হার নিয়ে ট্রাম্পের সমালোচনা ও তালিকা প্রকাশ

ট্রাম্প একটি তালিকা প্রকাশ করেছেন, যেখানে বিশ্বের প্রধান প্রধান কেন্দ্রীয় ব্যাংকের বর্তমান সুদের হার তুলনামূলকভাবে দেখানো হয়েছে। তালিকায় দেখা যায়, যুক্তরাষ্ট্রের সুদের হার অন্যান্য দেশের তুলনায় অনেক বেশি। তিনি মন্তব্য করেন, ফেডারেল রিজার্ভের চেয়ারম্যান জেরোম পাওয়েল মার্কিন অর্থনীতির জন্য ক্ষতিকর সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছেন এবং এখনো করছেন।

হোয়াইট হাউসের প্রেস সচিব ক্যারোলিন লেভিট জানান, ট্রাম্প এই তালিকাটি ফেডের পরিচালনা পর্ষদে পাঠিয়েছেন এবং দ্রুত সুদের হার কমানোর জন্য দাবি তুলেছেন।

ট্রাম্পের অভিযোগ: ‘ফেড কর্পোরেট ও সরকারি ঋণ ব্যয় বাড়িয়েছে’

বিগত কয়েক মাস ধরে ট্রাম্প ফেডারেল রিজার্ভ ও তার চেয়ারম্যানকে উদ্দেশ্য করে একের পর এক সমালোচনা করছেন। কখনও তাঁকে ‘বোকা’, ‘নির্বোধ’ বা ‘মূর্খ’ বলেন। ২০১৮ সালে নিজে যাকে চেয়ারম্যান হিসেবে নিয়োগ দিয়েছিলেন, আজ তার বিরুদ্ধে এত তীব্র সমালোচনা আসার পেছনে মূলত ফেডের স্থির অবস্থান, বিশেষ করে সুদের হার কমাতে না পারাকে দোষারোপ করছেন তিনি।

ট্রাম্পের মতে, উচ্চ সুদের হার সরকারি ঋণের পরিশোধ ব্যয় বৃদ্ধি করছে, যা অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির জন্য ব্যাঘাত ঘটাচ্ছে। তিনি দাবি করেন, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সুদের হার এক শতাংশের নিচে নেমে আসা উচিত, যা ঋণগ্রহীতাদের জন্য সহায়ক হবে।

ফেডের অবস্থান: মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে মনোযোগ

অন্যদিকে, ফেডারেল রিজার্ভ চেয়ারম্যান জেরোম পাওয়েল এখনও পর্যন্ত ট্রাম্পের এই সমালোচনার কোনো জবাব দেননি। তাঁর বক্তব্য, ফেডের একমাত্র লক্ষ্য হল মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ ও শ্রমবাজারের স্থিতিশীলতা রক্ষা করা। আর্থিক নীতিনির্ধারণে রাজনীতির প্রভাব ফেলা যায় না বলে তিনি উল্লেখ করেন। গত ২৪ জুন সিনেটে দেওয়া বক্তব্যে তিনি বলেন, “আমরা রাজনৈতিক চাপের কারণে সুদের হার নির্ধারণ করি না।”

বিশ্বব্যাপী সুদের হার ও কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নীতি

বিশ্বের অন্যান্য প্রধান কেন্দ্রীয় ব্যাংক যেমন ইউরোপীয় সেন্ট্রাল ব্যাংক ও মেক্সিকোর কেন্দ্রীয় ব্যাংক কয়েক দফা সুদের হার কমিয়েছে। কিন্তু যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল রিজার্ভ তা করেনি। তারা বলছে, নীতিগত পরিবর্তনের প্রভাব পর্যবেক্ষণ করে তারপর সিদ্ধান্ত নেয়া হবে।

পর্তুগালে অনুষ্ঠিত কেন্দ্রীয় ব্যাংকারদের সম্মেলনে ইউরোপীয় সেন্ট্রাল ব্যাংকের প্রেসিডেন্ট ক্রিস্টিন লাগার্দ বলেন, জেরোম পাওয়েল সাহসী কেন্দ্রীয় ব্যাংকারদের একজন। তার নেতৃত্ব বিশ্বব্যাপী প্রশংসিত। পাওয়েল মঙ্গলবার এই সম্মেলনে অংশগ্রহণ করবেন।

ট্রাম্পের ‘ছায়া চেয়ারম্যান’ ঘোষণা

২০২৬ সালের মে মাসে জেরোম পাওয়েলের মেয়াদ শেষ হতে চলেছে। কিন্তু ট্রাম্প ইতিমধ্যে ঘোষণা দিয়েছেন, তিনি শীঘ্রই নতুন ফেড চেয়ারম্যান মনোনীত করবেন। এতে ফেডারেল রিজার্ভের ইতিহাসে নজিরবিহীন ঘটনা ঘটবে কারণ সাধারণত মেয়াদ শেষের কয়েক মাস আগে মনোনয়ন দেওয়া হয়।

ট্রাম্প যেকেউ মনোনয়ন দিলেও তিনি কার্যত ‘ছায়া চেয়ারম্যান’ হিসেবে কাজ করবেন বলে বিশ্লেষকরা মনে করছেন। যদি নতুন চেয়ারম্যান বর্তমান নীতির বিপরীতে পদক্ষেপ নেন, তাহলে মার্কেটের অনিশ্চয়তা বাড়বে, ডলারের মান দুর্বল হবে এবং দীর্ঘমেয়াদি সুদের হার বৃদ্ধি পেতে পারে।

সম্ভাব্য নতুন চেয়ারম্যানের নাম

ফেডের চেয়ারম্যান পদে যাদের নাম আলোচনা হচ্ছে তাদের মধ্যে আছেন:

  • বর্তমান অর্থমন্ত্রী স্কট বেসেন্ট
  • সাবেক গভর্নর কেভিন ওয়ার্শ
  • বর্তমান গভর্নর ক্রিস্টোফার ওয়ালার
  • জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের পরিচালক কেভিন হ্যাসেট
  • ট্রাম্প মনোনীত সাবেক বিশ্বব্যাংক প্রেসিডেন্ট ডেভিড ম্যালপাস

রবিবার ফক্স বিজনেসকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে ট্রাম্প বলেন, “আমরা এমন কাউকে নিয়ে আসবো যিনি সুদের হার কমাবেন।” তিনি কেভিন ওয়ার্শের প্রশংসা করে বলেন, “তিনি অত্যন্ত মেধাবী, যদিও মনোনয়ন পাবেন কি না, তা জানি না। ওরা কখনো জেরোম পাওয়েলের মতো করবেন না।”

অর্থনীতির জন্য সুদের হার নিয়ন্ত্রণের গুরুত্ব

সুদের হার অর্থনীতির অন্যতম প্রধান চালিকা শক্তি। কম সুদের হার ঋণ গ্রহণ সহজ করে, ব্যবসা সম্প্রসারণ ও বিনিয়োগ বাড়ায়, যা অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিতে সহায়ক। অপরদিকে, উচ্চ সুদের হার মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে সহায়তা করে, কিন্তু ঋণগ্রহীতাদের ওপর চাপ ফেলে।

ফেডারেল রিজার্ভের সঠিক ও সময়োপযোগী নীতিনির্ধারণ অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা বজায় রাখতে এবং মার্কিন অর্থনীতিকে বৈশ্বিক প্রতিযোগিতায় এগিয়ে রাখতে গুরুত্বপূর্ণ।

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের হাতে লেখা চিঠি ও তার সুদের হার কমানোর আবেদন অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক মহলে ব্যাপক আলোচনা সৃষ্টি করেছে। ফেডারেল রিজার্ভের স্বাধীনতা, সুদের হার নিয়ন্ত্রণ নীতিমালা এবং সরকারের অর্থনৈতিক পরিকল্পনার মধ্যে সমন্বয়ের প্রয়োজনীয়তা আবারও সামনে এসেছে।

আগামী মাসগুলোতে ফেডের নীতি পরিবর্তন ও নতুন চেয়ারম্যান মনোনয়ন মার্কিন অর্থনীতি ও

মন্তব্য করুন

Related Articles

Back to top button