চট্টগ্রামে আইনজীবী আলিফ হ’ত্যা , চিন্ময় দাসসহ ৩৮ জনকে অ’ভি’যু’ক্ত করে চার্জশিট

চট্টগ্রাম আদালত প্রাঙ্গণে আইনজীবী সাইফুল ইসলাম আলিফকে নির্মমভাবে হত্যার ঘটনায় সনাতনী জাগরণ জোটের মুখপাত্র চিন্ময় দাসসহ ৩৮ জনের বিরুদ্ধে চার্জশিট দাখিল করেছে পুলিশ। এই মামলায় তদন্তে চাঞ্চল্যকর সব তথ্য উঠে এসেছে।
হত্যাকাণ্ডের চার্জশিট দাখিল
চট্টগ্রামের আলোচিত আইনজীবী সাইফুল ইসলাম আলিফ হত্যাকাণ্ডে ৩৮ জনকে আসামি করে চার্জশিট দাখিল করেছে নগর পুলিশ। মঙ্গলবার (১ জুলাই) চট্টগ্রামের ৬ষ্ঠ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট এস এম আলাউদ্দিন মাহমুদের আদালতে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা, সহকারী কমিশনার (কোতোয়ালি অঞ্চল) মাহফুজুর রহমান এ অভিযোগপত্র জমা দেন।
নগর পুলিশের অতিরিক্ত উপকমিশনার (প্রসিকিউশন) মফিজ উদ্দিন বলেন, “চিন্ময় দাসের নির্দেশেই এ হত্যাকাণ্ড সংঘটিত হয়েছে। ফলে তাকে মূল অভিযুক্ত করে চার্জশিটে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।”
কীভাবে ঘটে হত্যাকাণ্ড
২০২৪ সালের ২৬ নভেম্বর চট্টগ্রাম আদালত প্রাঙ্গণে আইনজীবী সাইফুল ইসলাম আলিফকে কুপিয়ে ও পিটিয়ে হত্যা করা হয়। জানা যায়, সেদিন সনাতনী জাগরণ জোটের মুখপাত্র চিন্ময় দাসের জামিন শুনানিকে কেন্দ্র করে সংঘর্ষের সূত্রপাত হয়।
পুলিশ ও আদালত সূত্র জানায়, সংঘর্ষ চলাকালে সাইফুল ইসলামকে বঁটি, কিরিচ, লাঠি, ইট ও বাটাম দিয়ে নির্মমভাবে আক্রমণ করে প্রায় ১৫–২০ জনের একটি দল।
এ ঘটনায় নিহত সাইফুলের বাবা জামাল উদ্দিন কোতোয়ালি থানায় ৩১ জনের নাম উল্লেখ করে হত্যা মামলা করেন। পরবর্তীতে তদন্তে আরও ৭ জনের নাম যুক্ত হয়, যার ফলে মোট আসামির সংখ্যা দাঁড়ায় ৩৮ জনে।
কারা দিল স্বীকারোক্তি, কী জানালেন তারা
আদালত সূত্রে জানা যায়, মামলার তিন অভিযুক্ত—চন্দন দাস, রিপন দাস এবং রাজীব ভট্টাচার্য—আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন।
তারা জানিয়েছেন, রিপন দাস প্রথমে আলিফের ঘাড়ে বঁটি দিয়ে কোপ দেন। এরপর চন্দন দাস কিরিচ দিয়ে আঘাত করেন। পরে রাস্তায় পড়ে থাকা অবস্থায় তাকে একযোগে আক্রমণ করে আরও অনেকে।
জবানবন্দিতে বলা হয়, “আমরা সবাই একসঙ্গে ওকে মারি। কেউ ইট ছুড়ে, কেউ লাঠি দিয়ে, কেউ আবার কিরিচ দিয়ে কোপায়।”
চিন্ময় দাসের ভূমিকা ও অতীত মামলা
চিন্ময় কৃষ্ণ দাস ব্রহ্মচারী, সনাতনী জাগরণ জোটের মুখপাত্র, এই মামলার অন্যতম মূল পরিকল্পনাকারী বলে অভিযোগ তদন্তে উঠে এসেছে।
তদন্ত কর্মকর্তা মাহফুজুর রহমান বলেন, “চিন্ময়ের পরিকল্পনা ও উসকানিতেই হামলা সংঘটিত হয়। আদালতের নির্দেশে তাকে ৫ মে এ মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো হয়।”
এর আগে ৩১ অক্টোবর ২০২৪, জাতীয় পতাকা অবমাননা ও রাষ্ট্রদ্রোহের অভিযোগে বিএনপির নেতা ফিরোজ খান কোতোয়ালি থানায় চিন্ময়ের বিরুদ্ধে আরেকটি মামলা করেন। সে মামলায় ২৫ নভেম্বর ঢাকা থেকে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছিল।
আরও মামলা ও গ্রেপ্তার
এই হত্যাকাণ্ড ছাড়াও ওইদিন আদালত চত্বরে পুলিশের ওপর হামলা, বিচারপ্রার্থীদের উপর ককটেল ছোড়া, সরকারি কাজে বাধাসহ মোট ৫টি পৃথক মামলা হয়।
এই ৬টি মামলায় এখন পর্যন্ত মোট ৫১ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে, যাদের মধ্যে ২১ জন সরাসরি হত্যাকাণ্ডে জড়িত বলে পুলিশের ভাষ্য।
চার্জশিটে উল্লেখিত আসামির সংখ্যা
চার্জশিটে এজহারভুক্ত ৩১ জনের সঙ্গে আরও ৭ জনের নাম যুক্ত করা হয়েছে। তদন্তে প্রমাণ না মেলায় ৪ জনকে অব্যাহতির সুপারিশ করেছে পুলিশ। বর্তমানে ২০ জন আসামি পুলিশের হেফাজতে থাকলেও ১৮ জন এখনও পলাতক রয়েছেন।
পরবর্তী পদক্ষেপ কী?
আদালত এখন চার্জশিট যাচাই–বাছাই শেষে পরবর্তী শুনানির তারিখ নির্ধারণ করবে। এই মামলায় দোষীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানিয়েছেন চট্টগ্রামের আইনজীবী সমাজ ও নিহতের পরিবার।
একজন সিনিয়র আইনজীবী বলেন,
“আইনজীবী যদি নিজেই আদালতের প্রাঙ্গণে নিরাপদ না থাকেন, তবে সাধারণ বিচারপ্রার্থীদের কী হবে?”
সারসংক্ষেপঃ
চট্টগ্রামের আদালত প্রাঙ্গণে ঘটে যাওয়া আইনজীবী সাইফুল ইসলাম আলিফ হত্যাকাণ্ড কেবল একটি হত্যার ঘটনা নয়—এটি দেশের আইনশৃঙ্খলা, বিচারব্যবস্থা ও নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিয়ে বড় প্রশ্ন তোলে।
তদন্ত এখন শেষের দিকে। এখন দেখার বিষয়—আদালত কত দ্রুত বিচার কার্য সম্পন্ন করে, এবং দোষীরা কী আদৌ দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি পায়।
এম আর এম – ০১২৭, Signalbd.com