অর্থনীতি

হুতি ক্ষেপণাস্ত্র আতঙ্কে ফের বন্ধ ইসরায়েলের প্রধান বিমানবন্দর

ইসরায়েলের প্রধান আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর বেন গুরিয়ন আবারও সাময়িকভাবে বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে ইয়েমেন থেকে ছোড়া হুতি ক্ষেপণাস্ত্রের আতঙ্কে। শনিবার রাতের এই ঘটনায় গোটা ইসরায়েলজুড়ে ছড়িয়ে পড়ে নিরাপত্তা উদ্বেগ, বিশেষত রাজধানী জেরুজালেম ও আশপাশের গুরুত্বপূর্ণ এলাকায়।

ইসরায়েলি সেনাবাহিনী (আইডিএফ) জানিয়েছে, ইয়েমেনের হুতি বিদ্রোহীদের ছোড়া একটি ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র সফলভাবে ভূপাতিত করা হয়েছে। যদিও ক্ষেপণাস্ত্রটি লক্ষ্যস্থলে পৌঁছার আগেই প্রতিরক্ষা ব্যবস্থার মাধ্যমে ধ্বংস করা সম্ভব হয়েছে, তবুও এর ফলে বিমানবন্দরে সাময়িক কার্যক্রম বন্ধ ঘোষণা করতে হয়েছে।

বিমান হামলার সাইরেনে জনমনে আতঙ্ক

শনিবার গভীর রাতে ইসরায়েলের কেন্দ্রস্থলে হঠাৎ করে বিমান হামলার সাইরেন বাজতে শুরু করে। সেই মুহূর্তে জেরুজালেমসহ আশপাশের বসতিগুলোর বাসিন্দারা দিগ্বিদিক ছোটাছুটি শুরু করে নিরাপদ আশ্রয়ের খোঁজে। বেন গুরিয়ন বিমানবন্দরের সব ওঠানামা তাৎক্ষণিকভাবে স্থগিত করে যাত্রীদের আশ্রয় কেন্দ্রে সরিয়ে নেওয়া হয়।

ইসরায়েলি সামরিক সূত্রের বরাতে জানানো হয়েছে, হামলায় কেউ হতাহত না হলেও বিস্তীর্ণ অঞ্চলে আতঙ্কের ছায়া নেমে আসে। পশ্চিম তীরের কিছু অংশ এবং ডেড সি-সংলগ্ন এলাকাতেও নিরাপত্তা সতর্কতা জারি করা হয়। ক্ষেপণাস্ত্র ছোড়ার মাত্র চার মিনিট আগেই নাগরিকদের মোবাইলে সতর্কবার্তা পাঠানো হয়, যাতে তারা দ্রুত সুরক্ষিত স্থানে চলে যেতে পারে।

হামলার পেছনে হুতি বিদ্রোহীরা

হুতিরা দাবি করেছে, তাদের লক্ষ্য ছিল ইসরায়েলের বেন গুরিয়ন আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর। যদিও ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা বাহিনী সফলভাবে ক্ষেপণাস্ত্রটি ধ্বংস করেছে, তথাপি এধরনের আক্রমণ ইসরায়েলের ওপর হুতিদের কৌশলগত চাপে রাখছে। জানা গেছে, গত ১৮ মার্চ গাজায় হামাস বিরোধী অভিযান আবার শুরু হওয়ার পর থেকে হুতি বিদ্রোহীরা ইসরায়েলের দিকে ৩৩টি ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র এবং অন্তত ১০টি ড্রোন ছুঁড়েছে।

এই ক্ষেপণাস্ত্রগুলোর বেশিরভাগই ইসরায়েলি আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থার মাধ্যমে মাঝপথে ধ্বংস করা হয়েছে। কিছু ক্ষেপণাস্ত্র পতিত হয়েছে ইসরায়েলের সীমান্ত এলাকায়, তবে অধিকাংশ ক্ষেত্রেই বড় ধরনের ক্ষয়ক্ষতি থেকে রক্ষা পাওয়া গেছে।

আকাশ প্রতিরক্ষায় উচ্চ প্রস্তুতি

সবশেষ হামলার পর ইসরায়েলি সেনাবাহিনী সর্বোচ্চ সতর্ক অবস্থানে রয়েছে। আইডিএফ জানিয়েছে, ইয়েমেন থেকে আরও ক্ষেপণাস্ত্র ছোড়া হতে পারে এমন সম্ভাবনাকে সামনে রেখে আকাশ প্রতিরক্ষা বাহিনী সর্বোচ্চ প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছে। বেন গুরিয়ন বিমানবন্দরের নিরাপত্তা ব্যবস্থা আরও জোরদার করা হয়েছে এবং বিমান চলাচল পুনরায় চালুর আগে প্রতিটি নিরাপত্তা দিক খতিয়ে দেখা হচ্ছে।

পাল্টা হামলার আগাম সতর্কতা

ইসরায়েল এখনো কোনো পাল্টা বিমান হামলা চালায়নি। তবে আইডিএফ-এর আরবি মুখপাত্র কর্নেল আবিচাই আদরায়ি এক বিবৃতিতে ইয়েমেনের সাধারণ জনগণকে সতর্ক করে জানান, রস ইসা, হুদাইদা ও সালিফ — এই তিনটি হুতি-নিয়ন্ত্রিত বন্দর অঞ্চল থেকে দ্রুত সরে যাওয়ার জন্য তিনি আহ্বান জানিয়েছেন। এটি একটি স্পষ্ট ইঙ্গিত যে, সম্ভাব্য পাল্টা হামলার প্রস্তুতি ইতোমধ্যেই শুরু হয়েছে।

এই তিনটি বন্দর ইয়েমেনের পশ্চিম উপকূলে অবস্থিত এবং হুতিদের জন্য কৌশলগতভাবে গুরুত্বপূর্ণ। এ অঞ্চল থেকে ক্ষেপণাস্ত্র উৎক্ষেপণের প্রমাণ পাওয়ার পর আইডিএফ সম্ভবত এসব এলাকায় টার্গেটেড বিমান হামলা চালাতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

আন্তর্জাতিক প্রতিক্রিয়া ও উদ্বেগ

ইসরায়েলের ওপর হুতি হামলার ঘটনা আন্তর্জাতিক অঙ্গনে নতুন করে উদ্বেগ তৈরি করেছে। ইতোমধ্যেই যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের পক্ষ থেকে হুতিদের এমন কর্মকাণ্ডের নিন্দা জানানো হয়েছে। মধ্যপ্রাচ্যের নিরাপত্তা পরিস্থিতি আরও জটিল আকার ধারণ করতে পারে যদি ইয়েমেনের সংঘাত ইসরায়েলকে সরাসরি টেনে আনে।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, হুতিদের এই হামলা মূলত ইরানের প্রভাব বিস্তারের একটি ছায়া যুদ্ধের অংশ। গাজায় হামাসবিরোধী অভিযানের ফলে মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন বিদ্রোহী গোষ্ঠী এক ধরনের প্রতিক্রিয়াশীল মনোভাব নিয়ে ইসরায়েলের বিরুদ্ধে সক্রিয় হয়ে উঠেছে।

উপসংহার

ইসরায়েলের আকাশে হুতি ক্ষেপণাস্ত্রের হুমকি নতুন কিছু নয়, তবে এর ধারাবাহিকতা এবং প্রধান স্থাপনাগুলোকে লক্ষ্যবস্তু করার প্রবণতা ভবিষ্যতের জন্য গভীর উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়াচ্ছে। নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞদের মতে, এধরনের ঘটনা শুধু সাময়িক সঙ্কট সৃষ্টি করছে না, বরং ইসরায়েল ও হুতিদের মধ্যে ভবিষ্যৎ সংঘাতের ইঙ্গিতও বহন করছে।

ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা বাহিনীর কার্যকর প্রস্তুতি ও আগাম সতর্কতা বহু প্রাণহানি এড়াতে সহায়তা করছে বটে, তবে এই সংকটের স্থায়ী সমাধান না হলে পরিস্থিতি আরও খারাপের দিকে যেতে পারে বলেই আশঙ্কা করছেন বিশ্লেষকরা।

মন্তব্য করুন

Related Articles

Back to top button