বানিজ্য

প্রথম প্রান্তিকে শেয়ারপ্রতি আয় বেড়েছে ব্যাংক এশিয়ার

পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত আর্থিক খাতের প্রতিষ্ঠান ব্যাংক এশিয়া পিএলসি চলতি অর্থবছরের প্রথম প্রান্তিকে (জানুয়ারি-মার্চ ২০২৫) শেয়ারপ্রতি আয় (ইপিএস) ১১২ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে। প্রতিষ্ঠানটির ৩১ মার্চ, ২০২৫ তারিখে সমাপ্ত প্রথম প্রান্তিকের অনিরীক্ষিত আর্থিক প্রতিবেদন থেকে এ তথ্য জানা গেছে।

আর্থিক ফলাফল

  • শেয়ারপ্রতি আয় (ইপিএস): ১ টাকা ৪২ পয়সা (গত বছর: ৬৭ পয়সা)
  • ক্যাশ-ফ্লো: ২৯ টাকা ২৬ পয়সা (গত বছর: ১৭ টাকা ৪৪ পয়সা)
  • নিট সম্পদ মূল্য (এনএভিপিএস): ২৯ টাকা ৩৪ পয়সা

ব্যাংক এশিয়ার কৌশল

ব্যাংক এশিয়া বিদ্যুৎ, ইস্পাত, টেলিযোগাযোগ, এবং অবকাঠামোগত উন্নয়ন খাতে সিন্ডিকেশন অর্থায়নের পাশাপাশি ভোক্তা খাতে ক্রেডিট কার্ড, গৃহঋণ, এবং ভার্চুয়াল কার্ড সেবা প্রদান করছে। ইসলামী ব্যাংকিং এবং ডিজিটাল ব্যাংকিংয়ে উদ্ভাবন ব্যাংকটির প্রতিযোগিতামূলক সুবিধা বাড়িয়েছে।

শেয়ারবাজারে প্রভাব

প্রথম প্রান্তিকের ইতিবাচক ফলাফল বিনিয়োগকারীদের মধ্যে আশাবাদ সৃষ্টি করেছে। ব্যাংকটির পারপেচুয়াল বন্ডের কুপন রেট ঘোষণা এবং ধারাবাহিক ব্যবসায়িক প্রবৃদ্ধি বাজারে এর আকর্ষণ বাড়াবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

ব্যাংক এশিয়া পিএলসি’র প্রকাশিত ৩১ মার্চ, ২০২৫ তারিখে সমাপ্ত প্রথম প্রান্তিকের অনিরীক্ষিত আর্থিক প্রতিবেদন থেকে এ তথ্য জানা গেছে। বুধবার (১৪ মে) অনুষ্ঠিত প্রতিষ্ঠানটির পরিচালনা পর্ষদের বৈঠকে এই আর্থিক প্রতিবেদন পর্যালোচনা ও অনুমোদন করা হয়। বৃহস্পতিবার (১৫ মে) ব্যাংক এশিয়া সূত্রে বিষয়টি নিশ্চিত করা হয়েছে।

আর্থিক কর্মক্ষমতার বিস্তারিত বিশ্লেষণ

চলতি অর্থবছরের প্রথম প্রান্তিকে ব্যাংক এশিয়ার শেয়ারপ্রতি আয় (ইপিএস) দাঁড়িয়েছে ১ টাকা ৪২ পয়সা, যা গত বছরের একই সময়ে ছিল মাত্র ৬৭ পয়সা। এই বৃদ্ধির ফলে ইপিএস-এ ০.৭৫ টাকা বা ১১২ শতাংশ বেড়েছে, যা ব্যাংকের আয় বৃদ্ধির ধারাবাহিকতা এবং ব্যবস্থাপনার দক্ষতার ইঙ্গিত দেয়।

এছাড়া, আলোচিত সময়ে ব্যাংকের শেয়ারপ্রতি অর্থের প্রবাহ বা ক্যাশ-ফ্লো উল্লেখযোগ্যভাবে উন্নত হয়েছে। প্রতিবেদন অনুযায়ী, ক্যাশ-ফ্লো ছিল ২৯ টাকা ২৬ পয়সা, যা গত বছরের একই সময়ে ছিল ১৭ টাকা ৪৪ পয়সা। এই বৃদ্ধি ব্যাংকের তারল্য ব্যবস্থাপনা এবং নগদ প্রবাহের স্থিতিশীলতার প্রতিফলন ঘটায়।

গত ৩১ মার্চ, ২০২৫ তারিখে ব্যাংক এশিয়ার শেয়ারপ্রতি নিট সম্পদ মূল্য (এনএভিপিএস) ছিল ২৯ টাকা ৩৪ পয়সা। এটি ব্যাংকের সম্পদের মূল্য এবং আর্থিক স্থিতিশীলতার একটি গুরুত্বপূর্ণ সূচক, যা বিনিয়োগকারীদের কাছে প্রতিষ্ঠানটির আকর্ষণ বাড়ায়।

ব্যাংক এশিয়ার ব্যবসায়িক কৌশল

ব্যাংক এশিয়া পিএলসি বাংলাদেশের বেসরকারি খাতের একটি শীর্ষস্থানীয় বাণিজ্যিক ব্যাংক। ১৯৯৯ সালে প্রতিষ্ঠিত এই ব্যাংকটি কোম্পানি আইন ১৯৯৪-এর অধীনে নিবন্ধিত হয়ে একই বছরের ২৭ নভেম্বর থেকে ব্যবসায়িক কার্যক্রম শুরু করে। প্রতিষ্ঠার পর থেকে ব্যাংকটি বিভিন্ন কৌশলগত উদ্যোগের মাধ্যমে তার ব্যবসায়িক পরিধি প্রসারিত করেছে। ২০০১ সালে কানাডাভিত্তিক নোভা স্কোশিয়া ব্যাংকের বাংলাদেশ শাখা এবং পরবর্তীতে মুসলিম কমার্শিয়াল ব্যাংকের বাংলাদেশ শাখার দায়-সম্পদ ক্রয়ের মাধ্যমে ব্যাংকটি বাজারে নিজের অবস্থান শক্তিশালী করেছে।

ব্যাংক এশিয়া বিদ্যুৎ, ইস্পাত, টেলিযোগাযোগ, অবকাঠামোগত উন্নয়নসহ বিভিন্ন খাতে সিন্ডিকেশন অর্থায়নের মাধ্যমে ব্যবসায়িক প্রবৃদ্ধি অর্জন করছে। এছাড়া, ভোক্তা খাতে ঋণের বিস্তৃতি এবং গ্রাহকদের চাহিদার সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে ব্যাংকটি বিভিন্ন উদ্ভাবনী পণ্য ও সেবা প্রবর্তন করেছে। ২০০৬ সালে ‘কাভারেজ’ ব্র্যান্ডের আওতায় ব্যক্তিগত খাতে অর্থায়ন শুরু করে ব্যাংকটি ক্রেডিট কার্ড, গৃহঋণ, গাড়ি ক্রয় ঋণ, পেশাজীবী ঋণ এবং বয়োজ্যেষ্ঠ নাগরিকদের জন্য বিশেষ ঋণের মতো পণ্য সরবরাহ করছে।

ব্যাংক এশিয়া ভার্চুয়াল কার্ড সেবার মাধ্যমে শিক্ষার্থী ও পেশাজীবীদের জন্য বিদেশি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ভর্তি, পরীক্ষার ফি (যেমন TOEFL, SAT) এবং সদস্যপদ ফি প্রদানের সুবিধা প্রদান করছে। এই উদ্যোগ ব্যাংকের ডিজিটাল ব্যাংকিং খাতে উদ্ভাবনী অবদানের প্রমাণ।

শেয়ারবাজারে ব্যাংক এশিয়ার অবস্থান

ব্যাংক এশিয়া পিএলসি দীর্ঘদিন ধরে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত একটি প্রতিষ্ঠান হিসেবে বিনিয়োগকারীদের আস্থা অর্জন করেছে। ২০০৩ সালে আইপিও’র মাধ্যমে শেয়ারবাজার থেকে মূলধন সংগ্রহের পর ব্যাংকটি ধারাবাহিকভাবে ব্যবসায়িক প্রবৃদ্ধি অর্জন করছে। সম্প্রতি, ২০২৪ সালের ডিসেম্বরে ব্যাংক এশিয়া ফার্স্ট পারপেচুয়াল বন্ডের কুপন রেট ১০ শতাংশ ঘোষণা করে, যা বিনিয়োগকারীদের মধ্যে ইতিবাচক সাড়া ফেলেছে।

তবে, ২০২৪ সালের তৃতীয় প্রান্তিকে (জুলাই-সেপ্টেম্বর) ব্যাংকটির শেয়ারপ্রতি লোকসান হয়েছিল, যা বাজারে কিছুটা উদ্বেগ সৃষ্টি করেছিল। তবে চলতি অর্থবছরের প্রথম প্রান্তিকের ইতিবাচক ফলাফল বিনিয়োগকারীদের মধ্যে নতুন করে আশাবাদ জাগিয়েছে।

অর্থনৈতিক প্রেক্ষাপট ও ভবিষ্যৎ সম্ভাবনা

বাংলাদেশের অর্থনীতি বর্তমানে মুক্তবাজার অর্থনীতি এবং তথ্যপ্রযুক্তি নির্ভর ব্যবসায়-বাণিজ্যের সঙ্গে তাল মিলিয়ে এগিয়ে চলছে। সরকারের ৮ম পঞ্চম বার্ষিক পরিকল্পনা এবং প্রেক্ষিত পরিকল্পনা ২০৪১-এর লক্ষ্য বাংলাদেশকে উন্নত ও সমৃদ্ধ দেশে পরিণত করা। এই প্রেক্ষাপটে ব্যাংক এশিয়ার মতো আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে।

ব্যাংক এশিয়ার সাম্প্রতিক আর্থিক প্রতিবেদন প্রকাশের পর শেয়ারবাজারে এর শেয়ারের প্রতি বিনিয়োগকারীদের আগ্রহ বাড়তে পারে বলে বিশ্লেষকরা মনে করছেন। ব্যাংকের ডিজিটাল ব্যাংকিং, ইসলামী ব্যাংকিং, এবং গ্রাহককেন্দ্রিক সেবার প্রতি জোর দেওয়া এর ব্যবসায়িক কৌশলের অন্যতম শক্তি। ২০০৮ সালে ইসলামী ব্যাংকিং চালু এবং ডাচ-বাংলা ব্যাংকের সঙ্গে এটিএম নেটওয়ার্ক শেয়ারিং চুক্তির মতো উদ্যোগ ব্যাংকটির বাজারে প্রতিযোগিতামূলক অবস্থান তৈরি করেছে।

উপসংহার

ব্যাংক এশিয়া পিএলসি’র চলতি অর্থবছরের প্রথম প্রান্তিকের আর্থিক ফলাফল ব্যাংকটির ব্যবসায়িক দক্ষতা এবং বাজারে শক্তিশালী অবস্থানের প্রমাণ। শেয়ারপ্রতি আয়, ক্যাশ-ফ্লো এবং নিট সম্পদ মূল্যের উন্নতি বিনিয়োগকারীদের জন্য ইতিবাচক সংকেত। ভবিষ্যতে ব্যাংকটি তার উদ্ভাবনী সেবা এবং কৌশলগত পরিকল্পনার মাধ্যমে আরও প্রবৃদ্ধি অর্জন করবে বলে আশা করা যায়।

মন্তব্য করুন

Related Articles

Back to top button