বিশ্ব

ভারত-পাকিস্তান সীমান্তে পাল্টাপাল্টি হামলায় নিহত শতাধিক, আন্তর্জাতিক উদ্বেগ

কাশ্মীরের পেহেলগামে ভয়াবহ হামলার পর টানা দুই সপ্তাহ ধরে ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে উত্তেজনা তুঙ্গে। পাল্টাপাল্টি ড্রোন ও ক্ষেপণাস্ত্র হামলার মধ্যে দুই দেশের সেনাবাহিনী একে অপরের ওপর দায় চাপিয়ে যাচ্ছে। সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, এই সংঘাতে দুই দেশের মোট ১০০ জনের বেশি মানুষ প্রাণ হারিয়েছেন, আহত হয়েছেন অন্তত ১০০ জনের বেশি। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় ইতোমধ্যে সংযম প্রদর্শনের আহ্বান জানিয়েছে।

কী ঘটেছে?

২২ এপ্রিল পেহেলগামে বন্দুকধারীদের হামলায় ২৬ জন নিহত হওয়ার পর ভারত অভিযোগ করে, পাকিস্তান এই হামলার পেছনে রয়েছে। পাকিস্তান এই অভিযোগ নাকচ করে দেয়। এরপর থেকে সীমান্তে উত্তেজনা বেড়েই চলেছে।

সবচেয়ে আলোচিত হামলাগুলোর মধ্যে ছিল ভারতের ‘অপারেশন সিঁদুর’, যা মঙ্গলবার রাতভর চালানো হয় পাকিস্তানশাসিত কাশ্মীরের নয়টি স্থানে। পাকিস্তানের দাবি, এ অভিযানে অন্তত ৩২ জন নিহত এবং ৫০ জন আহত হয়েছে। ভারত যদিও কোনো হতাহতের কথা স্বীকার করেনি, তবে দাবি করেছে—সন্ত্রাসী ঘাঁটিতে হামলা চালিয়ে ১০০ জন জঙ্গিকে হত্যা করেছে তারা।

ড্রোন ও যুদ্ধবিমান ধ্বংসের পাল্টা দাবি

পাকিস্তানের সেনাবাহিনীর মুখপাত্র জেনারেল আহমেদ শরিফ চৌধুরী জানিয়েছেন, করাচি, লাহোর ও রাওয়ালপিন্ডি শহরের আকাশে উড়ন্ত অবস্থায় ভারতের ২৯টি ড্রোন ধ্বংস করা হয়েছে। এর মধ্যে একটি ড্রোন লাহোরের একটি সামরিক স্থাপনায় আঘাত করে চারজন সেনাকে আহত করে। ইসলামাবাদের দাবি, ধ্বংস হওয়া ড্রোনগুলো ইসরায়েলের তৈরি।

অন্যদিকে, ভারতের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় জানায়, পাকিস্তান ড্রোন ও ক্ষেপণাস্ত্রের মাধ্যমে উত্তর ও পশ্চিম ভারতের অন্তত ২০টি সামরিক স্থাপনাকে লক্ষ্য করে হামলার চেষ্টা করে। ভারতের বিমান প্রতিরক্ষা বাহিনী এসব হামলা প্রতিহত করে। লাহোরে পাকিস্তানের একটি আকাশ প্রতিরক্ষাব্যবস্থা ধ্বংস করার কথাও জানায় নয়াদিল্লি।

জম্মুতে বিস্ফোরণ, হামলায় নিহত ১৬

গতকাল রাতেই ভারতনিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরের জম্মু অঞ্চলে বিস্ফোরণের শব্দ শোনা যায়। বিদ্যুৎ বিভ্রাট, সাইরেন ও আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে শহরজুড়ে। ভারতীয় সেনাবাহিনীর দাবি, জম্মুর সাতওয়ারি, সাম্বা, রণবীর সিং পুরা ও আরনিয়া এলাকায় পাকিস্তানের ছোড়া আটটি ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিহত করা হয়েছে। হামলায় কমপক্ষে ১৬ জন ভারতীয় নিহত এবং ৫৯ জন আহত হয়েছেন।

পাকিস্তানও পাল্টা দাবি করেছে, ভারতের হামলায় তাদের নিয়ন্ত্রিত আজাদ কাশ্মীরে ৩২ জন নিহত হয়েছে। দুই দেশের মধ্যকার পাল্টাপাল্টি হামলার ফলে সীমান্তবর্তী বহু মানুষ ঘরবাড়ি ছেড়ে নিরাপদ স্থানে চলে গেছেন।

বিমানবন্দর ও হাসপাতালের জরুরি অবস্থা

সংঘাতের প্রেক্ষিতে পাকিস্তানের করাচি, লাহোর ও ইসলামাবাদ বিমানবন্দর সাময়িকভাবে বন্ধ করা হয়েছে। ভারতের ২০টিরও বেশি বিমানবন্দরের কার্যক্রম স্থগিত রয়েছে। পাকিস্তানের পাঞ্জাব প্রদেশে সব হাসপাতালে জরুরি অবস্থা জারি করা হয়েছে। ইসলামাবাদের সব চিকিৎসাকর্মীর ছুটি বাতিল করা হয়েছে।

রাজনৈতিক প্রতিক্রিয়া ও কূটনৈতিক পদক্ষেপ

নয়াদিল্লিতে অনুষ্ঠিত সর্বদলীয় বৈঠকে বিরোধী দলগুলো ভারত সরকারের প্রতি পূর্ণ সমর্থন জানিয়েছে। প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিং জানান, অভিযান এখনো চলছে, তাই সব তথ্য প্রকাশ করা সম্ভব নয়।

ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর বলেন, “আমরা যুদ্ধ চাই না। তবে হামলা হলে জবাব দিতেই হবে।” পাকিস্তানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ইসহাক দার জানান, সংঘাতের পরিণতি শুধু দুই দেশেই সীমাবদ্ধ থাকবে না, বরং বিশ্ব অর্থনীতিতে নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে।

অর্থনৈতিক প্রভাব: বাজারে ধস

উত্তেজনার ফলে দুই দেশের শেয়ারবাজারে অস্থিরতা দেখা দিয়েছে। ভারতের সেনসেক্স ও নিফটি সূচক প্রায় ০.৫% হ্রাস পেয়েছে, রুপির মান ১% কমে গেছে। পাকিস্তানের কেএসই-১০০ সূচকে ৬% পতনের পর লেনদেন সাময়িকভাবে স্থগিত করা হয়।

আন্তর্জাতিক আহ্বান

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেছেন, তিনি শান্তি প্রতিষ্ঠায় সহায়তার জন্য প্রস্তুত। চীন, ইরান ও সৌদি আরব দুই দেশকে সংযত থাকার আহ্বান জানিয়েছে।

পাকিস্তানি শান্তিতে নোবেলজয়ী মালালা ইউসুফজাই এক্সে (সাবেক টুইটার) লিখেছেন, “ঘৃণা ও সহিংসতা আমাদের শত্রু, আমরা একে অপরের শত্রু নই।”

মন্তব্য করুন

Related Articles

Back to top button