অর্থনীতি

নভেম্বর মাসে ১২ কেজি সিলিন্ডারের নতুন মূল্য ১,২১৫ টাকা

Advertisement

নভেম্বর মাসের জন্য আবারও কমলো তরলীকৃত পেট্রোলিয়াম গ্যাস (এলপিজি)-এর দাম। বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশনের (বিইআরসি) নতুন ঘোষণা অনুযায়ী, ১২ কেজি সিলিন্ডারের দাম ২৬ টাকা কমিয়ে ১,২১৫ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। কমেছে অটোগ্যাসের দামও।

বিস্তারিত সংবাদ:

দেশজুড়ে সাধারণ ভোক্তাদের জন্য নতুন করে কিছুটা স্বস্তির খবর নিয়ে এসেছে বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন (বিইআরসি)। নভেম্বর মাসের জন্য আবারও কমানো হয়েছে তরলীকৃত পেট্রোলিয়াম গ্যাস বা এলপিজির দাম।

বিইআরসি জানায়, ২ নভেম্বর ২০২৫ তারিখে ঘোষণা করা এই নতুন মূল্য গত রোববার (২ নভেম্বর) সন্ধ্যা থেকে কার্যকর হয়েছে। নতুন সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, ১২ কেজি এলপিজি সিলিন্ডারের খুচরা মূল্য ২৬ টাকা কমে ১,২১৫ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে, যা অক্টোবর মাসে ছিল ১,২৪১ টাকা।

এছাড়া, পরিবহন খাতে ব্যবহৃত অটোগ্যাসের দামও লিটারপ্রতি ১ টাকা ১৯ পয়সা কমিয়ে ৫৫ টাকা ৫৮ পয়সা নির্ধারণ করা হয়েছে। আগের মাসে এই দাম ছিল ৫৬ টাকা ৭৭ পয়সা।

দাম কমার কারণ: আন্তর্জাতিক বাজারের প্রভাব

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এলপিজির দাম কমানোর মূল কারণ হলো আন্তর্জাতিক বাজারে প্রোপেন ও বিউটেনের দামের পতন। এলপিজির আন্তর্জাতিক বাজার মূলত সৌদি আরবের “সৌদি আরামকো কন্ট্রাক্ট প্রাইস” (Saudi Aramco Contract Price – CP)-এর উপর নির্ভরশীল।

সৌদি আরব থেকে প্রকাশিত এলপিজি রপ্তানির দাম যখন কমে, তখন বাংলাদেশেও আমদানি মূল্যে হ্রাস ঘটে। বিইআরসি এই আন্তর্জাতিক দামের ভিত্তিতেই প্রতি মাসে নতুন দাম নির্ধারণ করে।

২০২৫ সালের অক্টোবর মাসে আন্তর্জাতিক বাজারে এলপিজির দাম তুলনামূলকভাবে স্থিতিশীল থাকলেও, নভেম্বর মাসে তা কিছুটা হ্রাস পায়। ফলে দেশের অভ্যন্তরে নতুন এই দাম পুনর্নির্ধারণ করা হয়েছে।

বিইআরসি’র ভূমিকা ও সিদ্ধান্তের প্রক্রিয়া

বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন (বিইআরসি) ২০২১ সাল থেকে প্রতি মাসে এলপিজির দাম সমন্বয় করে আসছে।
এই প্রক্রিয়ার মাধ্যমে ভোক্তাদের জন্য একটি স্বচ্ছ ও বাজারনির্ভর মূল্য নির্ধারণ ব্যবস্থা চালু হয়।

বিইআরসি আন্তর্জাতিক বাজারের গড় মূল্য, ডলারের বিনিময় হার, পরিবহন খরচ, বন্দর চার্জ, ভ্যাট ও অন্যান্য কর বিবেচনা করে প্রতিমাসে দাম ঘোষণা করে।

এইবারও সেই নিয়ম অনুসারে নভেম্বর মাসের দাম নির্ধারণ করা হয়েছে। বিইআরসি জানিয়েছে, দামের এই পরিবর্তন সরকারের নীতি অনুযায়ী এবং বাজার পরিস্থিতির সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণভাবে করা হয়েছে।

গত কয়েক মাসের দামের ওঠানামা

বাংলাদেশে এলপিজির দাম প্রায় প্রতি মাসেই পরিবর্তিত হচ্ছে। চলুন গত কয়েক মাসের মূল্য পরিবর্তনের একটি সংক্ষিপ্ত চিত্র দেখা যাক:

মাস১২ কেজি সিলিন্ডারের দামপরিবর্তন
জুলাই ২০২৫১,২৫৯ টাকা+১০ টাকা
আগস্ট ২০২৫১,২৬৩ টাকা+৪ টাকা
সেপ্টেম্বর ২০২৫১,২৭০ টাকা+৭ টাকা
অক্টোবর ২০২৫১,২৪১ টাকা-২৯ টাকা
নভেম্বর ২০২৫১,২১৫ টাকা-২৬ টাকা

তালিকা থেকে দেখা যায়, টানা দুই মাস ধরে দাম কমছে, যা সাধারণ ভোক্তাদের জন্য ইতিবাচক খবর।

দেশে এলপিজি ব্যবহার ও এর গুরুত্ব

বাংলাদেশে বর্তমানে প্রায় ৪ কোটি মানুষ সরাসরি বা পরোক্ষভাবে এলপিজির উপর নির্ভরশীল।
গৃহস্থালি রান্না, রেস্টুরেন্ট, হোটেল, ক্ষুদ্র শিল্প, এবং গাড়ির জ্বালানি হিসেবে এলপিজির ব্যবহার দিন দিন বেড়েই চলেছে।

বিশেষ করে প্রাকৃতিক গ্যাসের সরবরাহ সংকট এবং বিদ্যুৎচালিত যন্ত্রপাতির খরচ বৃদ্ধির কারণে শহর ও গ্রামীণ এলাকায় এলপিজির চাহিদা দ্রুত বাড়ছে।

সরকারের লক্ষ্য ২০৩০ সালের মধ্যে দেশের ৭০ শতাংশ পরিবারের রান্নার জ্বালানি হিসেবে এলপিজির ব্যবহার নিশ্চিত করা।

বাজারে সরবরাহ ও চ্যালেঞ্জ

বর্তমানে বাংলাদেশে প্রায় ২৫টি বেসরকারি কোম্পানি এলপিজি আমদানি ও বিক্রয় করছে।
তবে বাজারে প্রতিযোগিতা থাকা সত্ত্বেও, খুচরা পর্যায়ে দাম ভিন্নতা ও পরিবহন খরচের কারণে কিছু অঞ্চলে এখনও উচ্চমূল্যে বিক্রি হয়।

ঢাকা ও চট্টগ্রামে দাম সাধারণত বিইআরসি ঘোষিত দামের কাছাকাছি থাকলেও, উত্তরাঞ্চল ও দক্ষিণাঞ্চলে পরিবহন খরচের কারণে দাম কিছুটা বেশি হয়।

ভোক্তারা আশা করছেন, সরকারি তদারকি আরও জোরদার হলে দেশের সব প্রান্তেই একই দামে এলপিজি পাওয়া যাবে।

অটোগ্যাস খাতে প্রভাব

অটোগ্যাস হলো মোটরগাড়িতে ব্যবহৃত এলপিজি। বর্তমানে বাংলাদেশে প্রায় ৬০ হাজারের বেশি গাড়ি অটোগ্যাসে চলে, যার মধ্যে ট্যাক্সি, মাইক্রোবাস ও প্রাইভেটকার উল্লেখযোগ্য।

অটোগ্যাসের দাম কমার ফলে পরিবহন খরচ কিছুটা কমবে বলে আশা করা হচ্ছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই দাম হ্রাস সরাসরি গণপরিবহন ও পরিবহন খাতে ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে

তবে বাস্তবে এই সুফল ভোক্তারা কতটা পাবেন, তা নির্ভর করবে পরিবহন মালিকদের সিদ্ধান্তের উপর।

ভোক্তাদের প্রতিক্রিয়া

ঢাকার খিলগাঁও এলাকার বাসিন্দা মেহজাবিন আক্তার বলেন,

“গ্যাসের দাম এখন অনেকটাই হাতের নাগালে এসেছে। মাসে কয়েকশ টাকা সাশ্রয় হবে, যা পরিবারের বাজেটে স্বস্তি দেবে।”

অন্যদিকে, মোহাম্মদপুরের বাসিন্দা সাইফুল ইসলাম জানান,

“দাম কমলেও, এলপিজি কোম্পানিগুলো সময়মতো সরবরাহ না দিলে সমস্যা থেকেই যায়। আমরা চাই দাম কমার পাশাপাশি সরবরাহ ব্যবস্থাও উন্নত হোক।”

বিশেষজ্ঞদের মতামত

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক ড. মিজানুর রহমান বলেন,

“এলপিজির দাম আন্তর্জাতিক বাজারের সাথে সম্পর্কিত। যখন বিশ্ববাজারে তেলের দাম কমে, তখন বাংলাদেশের মতো আমদানিনির্ভর দেশে এর ইতিবাচক প্রভাব পড়ে। তবে এই প্রভাব দীর্ঘস্থায়ী করতে হলে, সরকারকে এলপিজি সংরক্ষণ ও বিতরণ কাঠামো আরও আধুনিক করতে হবে।”

ভবিষ্যৎ সম্ভাবনা ও বাজার বিশ্লেষণ

বিশ্লেষকরা মনে করছেন, ২০২৬ সাল নাগাদ বাংলাদেশের এলপিজি বাজার আরও ২০ শতাংশ বাড়বে।
এখন যেখানে বছরে প্রায় ১৫ লাখ টন এলপিজি ব্যবহার হয়, তা বেড়ে ১৮ লাখ টনে পৌঁছাতে পারে।

এলপিজি খাতের বিকাশের জন্য নিরাপত্তা ব্যবস্থা, মান নিয়ন্ত্রণ, এবং পরিবহন অবকাঠামো উন্নয়ন অপরিহার্য।
বিশেষ করে গ্রামীণ পর্যায়ে নিরাপদ সিলিন্ডার ব্যবহারে সচেতনতা বাড়ানো প্রয়োজন।

সার্বিকভাবে বলা যায়, নভেম্বর মাসের এলপিজি দামের এই হ্রাস সাধারণ ভোক্তাদের জন্য ইতিবাচক বার্তা।
একই সঙ্গে এটি দেশের অর্থনীতির উপরও কিছুটা স্বস্তি বয়ে আনবে।

তবে বিশেষজ্ঞরা সতর্ক করে বলছেন, আন্তর্জাতিক বাজারে দামের ওঠানামা অব্যাহত থাকলে ভবিষ্যতে আবারও পরিবর্তন আসতে পারে।
তাই ভোক্তাদের নিয়মিত তথ্য জেনে সচেতনভাবে ক্রয় করার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।

MAH – 13617 I Signalbd.com

মন্তব্য করুন
Advertisement

Related Articles

Back to top button