বাংলাদেশ

এবার ডিবি হেফাজতে মেজর সাদিকের স্ত্রী

Advertisement


বসুন্ধরার একটি কনভেনশন সেন্টারে আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের গেরিলা প্রশিক্ষণ ও গোপন বৈঠকের অভিযোগে এবার গ্রেপ্তার করা হয়েছে মেজর (অব.) সাদিকের স্ত্রী সুমাইয়া জাফরিনকে। বর্তমানে তিনি ডিবি হেফাজতে রয়েছেন। ঘটনাটি ঘিরে নতুন করে আলোচনা শুরু হয়েছে রাজনৈতিক মহলে।

গ্রেপ্তারের বিস্তারিত

রাজধানীর বসুন্ধরা আবাসিক এলাকার পাশে অবস্থিত কে বি কনভেনশন সেন্টারে গোপন বৈঠক ও প্রশিক্ষণের ঘটনায় এবার গ্রেপ্তার করা হয়েছে মেজর (অব.) সাদিকের স্ত্রী সুমাইয়া জাফরিনকে। তাকে বুধবার (৬ আগস্ট) সন্ধ্যায় রাজধানীর মিন্টো রোডের গোয়েন্দা (ডিবি) কার্যালয়ে নেয়া হয়। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের উপকমিশনার মুহাম্মদ তালেবুর রহমান।

ডিবি সূত্র জানায়, অভিযুক্ত নারী ওই কনভেনশন সেন্টারে গোপন প্রশিক্ষণ কার্যক্রমে সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করছিলেন। শুধু উপস্থিতিই নয়, বরং প্রশিক্ষণ প্রক্রিয়ায় সম্পৃক্ত থাকার প্রমাণ পাওয়ার ভিত্তিতেই তাকে হেফাজতে নেয়া হয়েছে।

ঘটনা-পূর্ব প্রেক্ষাপট

গত ৮ জুলাই সকাল ১০টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত কে বি কনভেনশন সেন্টারে একটি গোপন বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। সেখানে অংশ নেন অবসরপ্রাপ্ত সরকারি কর্মকর্তা, ছাত্রলীগের কিছু সদস্য এবং কিছু স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতাকর্মী।

এই বৈঠকে গেরিলা কৌশল ও সাংগঠনিক দিকনির্দেশনা প্রদান করা হয় বলে অভিযোগ উঠে। পরে ১৩ জুলাই রাজধানীর ভাটারা থানায় সন্ত্রাসবিরোধী আইনে একটি মামলা দায়ের করে পুলিশ। মামলার এজাহারে উল্লেখ ছিল, উক্ত বৈঠক রাষ্ট্রবিরোধী উদ্দেশ্যে সংগঠিত হয়েছিল।

এ ঘটনায় এখন পর্যন্ত মোট ২২ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে, যাদের সবাই বর্তমানে কারাগারে আছেন। এই প্রেক্ষাপটে মেজর সাদিকের স্ত্রী সুমাইয়ার নাম নতুন করে উঠে আসে।

কারা এই প্রশিক্ষণে অংশ নিচ্ছিলেন?

তদন্ত সূত্র জানায়, প্রশিক্ষণে অংশগ্রহণকারীদের মধ্যে বেশ কয়েকজন অবসরপ্রাপ্ত সেনা সদস্য ও রাজনৈতিক নেতাকর্মী ছিলেন। তাদের মধ্যে কয়েকজনকে এরইমধ্যে গ্রেপ্তার করে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। তাদের দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতেই সুমাইয়ার সংশ্লিষ্টতা নিশ্চিত হওয়া গেছে বলে জানিয়েছে ডিবি।

সাধারণত গোপন রাজনৈতিক ও প্রশিক্ষণভিত্তিক কার্যক্রমে নারীদের উপস্থিতি কম দেখা যায়, কিন্তু এই ঘটনায় সুমাইয়া জাফরিনের সক্রিয় অংশগ্রহণ গোয়েন্দা কর্মকর্তাদের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে।

রাজনীতি ও নিরাপত্তা বিশ্লেষকদের মত

রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন, এটি নিছক একটি ব্যক্তিগত মামলা নয়। বরং এর পেছনে রাজনৈতিক মেরুকরণের আভাস রয়েছে। বিশ্লেষকদের মতে, সরকারের পক্ষ থেকে রাজনৈতিক ও সামরিক সংযোগকে ব্যবহার করে যেকোনো ধরনের অস্থিতিশীলতার আশঙ্কা প্রতিহত করার চেষ্টা করা হচ্ছে।

নিরাপত্তা বিশ্লেষক ব্রিগেডিয়ার (অব.) খন্দকার নাসির উদ্দিন বলেন, “গোপন প্রশিক্ষণের ঘটনায় একজন সামরিক কর্মকর্তার স্ত্রী জড়িত থাকার অভিযোগ অত্যন্ত সংবেদনশীল। এটি কেবল রাজনৈতিক বা ব্যক্তিগত ইস্যু নয়, বরং জাতীয় নিরাপত্তার বিষয়ও।”

আইনগত অবস্থান ও ভবিষ্যৎ করণীয়

বর্তমানে সুমাইয়া জাফরিনকে প্রাথমিকভাবে ডিবি হেফাজতে রাখা হয়েছে। তার বিরুদ্ধে আরও তথ্য-প্রমাণ সংগ্রহ চলছে। পুলিশের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, তদন্তে যদি আরও প্রমাণ পাওয়া যায়, তাহলে তাকে রিমান্ডে নেয়ার আবেদন জানানো হতে পারে।

তবে এখনো পর্যন্ত তার পক্ষ থেকে কোনো আনুষ্ঠানিক বক্তব্য পাওয়া যায়নি। আইনজীবীর মাধ্যমে গ্রেপ্তার সংক্রান্ত কার্যক্রম পরিচালনা করা হচ্ছে।

সামাজিক প্রতিক্রিয়া ও অনলাইন আলোচনা

ঘটনাটি প্রকাশ্যে আসার পর থেকেই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ব্যাপক আলোচনা শুরু হয়েছে। অনেকেই প্রশ্ন তুলেছেন, একজন সেনা কর্মকর্তার পরিবার কীভাবে এই ধরনের কর্মকাণ্ডে জড়িত হতে পারেন?

একাংশ বলছে, এটি রাজনৈতিক ষড়যন্ত্রের অংশ, অন্যদিকে আরেকটি পক্ষ বলছে, রাষ্ট্রবিরোধী যেকোনো কর্মকাণ্ডের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান নেয়া উচিত।

সারসংক্ষেপ  

মেজর সাদিকের স্ত্রী সুমাইয়া জাফরিনকে ডিবি হেফাজতে নেয়ার ঘটনা রাজনৈতিক, নিরাপত্তা ও সামাজিক দৃষ্টিকোণ থেকে গুরুত্বপূর্ণ। বিষয়টি এখনো তদন্তাধীন এবং চূড়ান্ত তথ্য আসার আগ পর্যন্ত নিশ্চিত করে কিছু বলা কঠিন।

এম আর এম – ০৭৩৩, Signalbd.com

মন্তব্য করুন
Advertisement

Related Articles

Back to top button