আগামী সপ্তাহেই নির্বাচনের রোডম্যাপ ঘোষণা করবে কমিশন : ইসি সচিব

ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের প্রস্তুতি এগিয়ে নিতে আগামী সপ্তাহেই ভোটের রোডম্যাপ ঘোষণা করতে যাচ্ছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। বৃহস্পতিবার (১৪ আগস্ট) বিকেলে আগারগাঁওয়ে নির্বাচন ভবনে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে ইসি সচিবালয়ের জ্যেষ্ঠ সচিব আখতার আহমেদ এই তথ্য নিশ্চিত করেছেন। তিনি জানান, কমিশনের সর্বশেষ বৈঠকে রোডম্যাপ নিয়ে আলোচনা হয়েছে এবং চূড়ান্ত প্রক্রিয়া প্রায় শেষের পথে।
রোডম্যাপ ঘোষণার পরিকল্পনা
ইসি সচিব বলেন, “আমরা কমিশনের বৈঠকে বিষয়টি বিস্তারিতভাবে আলোচনা করেছি। আশা করছি আগামী সপ্তাহেই নির্বাচনের রোডম্যাপ প্রকাশ করতে পারব।” তবে রোডম্যাপে কী কী বিষয় অন্তর্ভুক্ত থাকবে, তা এখনই সুনির্দিষ্ট করে জানানো সম্ভব নয় বলে তিনি উল্লেখ করেন।
সাধারণত জাতীয় নির্বাচনের আগে রোডম্যাপে ভোট আয়োজনের তারিখ, প্রার্থী মনোনয়নের সময়সূচি, প্রচারণার সময়সীমা, আইনশৃঙ্খলা রক্ষার প্রস্তুতি ও প্রযুক্তি ব্যবহারের পরিকল্পনা স্পষ্টভাবে তুলে ধরা হয়।
ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন
অন্তর্বর্তী সরকারের পরিকল্পনা অনুযায়ী আগামী বছরের ফেব্রুয়ারিতেই ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে। এ জন্য অন্তর্বর্তী সরকারের পক্ষ থেকে প্রধান নির্বাচন কমিশনারকে একটি চিঠি পাঠানোর প্রস্তুতি চলছে, যাতে রমজান শুরুর আগে ভোট আয়োজনের অনুরোধ জানানো হবে।
প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস ৫ আগস্ট জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে এই সম্ভাব্য সময়সূচি উল্লেখ করেছিলেন। জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের এক বছর পূর্তিতে দেওয়া সেই ভাষণে তিনি ফেব্রুয়ারিকে নির্বাচন আয়োজনের জন্য উপযুক্ত সময় হিসেবে তুলে ধরেন।
প্রবাসী ভোটাধিকার নিয়ে আলোচনা
রোডম্যাপ আলোচনার পাশাপাশি প্রবাসী বাংলাদেশিদের ভোটাধিকার বিষয়েও ইসি কাজ করছে। সচিব আখতার আহমেদ জানান, প্রবাসীদের ভোট দেওয়ার পদ্ধতি নিয়ে এখনো আলোচনা চলছে এবং এ বিষয়ে প্রযুক্তিগত ও আইনি দিকগুলো খতিয়ে দেখা হচ্ছে।
বর্তমানে বাংলাদেশে ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন (ইভিএম) ও ডাকযোগে ভোটের সম্ভাবনা নিয়ে আলোচনা হচ্ছে। তবে চূড়ান্ত সিদ্ধান্তের আগে আরও গবেষণা ও অংশীজনদের সঙ্গে সংলাপ করার কথা জানিয়েছে ইসি।
নির্বাচন পর্যবেক্ষণ প্রক্রিয়া
ইসি সচিব জানান, আসন্ন নির্বাচনের জন্য এখন পর্যন্ত ৩১৮টি পর্যবেক্ষক দলের আবেদন পেয়েছে কমিশন। এসব আবেদনের যাচাই-বাছাই চলছে। নির্বাচন পর্যবেক্ষক সংস্থাগুলোকে কমিশনের অনুমোদন পেতে হলে নির্দিষ্ট নিয়ম ও যোগ্যতা পূরণ করতে হয়।
পর্যবেক্ষক দলগুলো নির্বাচনী পরিবেশ, ভোটকেন্দ্রের নিরাপত্তা, ভোটগ্রহণ প্রক্রিয়া ও ফলাফল ঘোষণার স্বচ্ছতা নিশ্চিত করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
রোডম্যাপের গুরুত্ব
নির্বাচনী রোডম্যাপ কেবল সময়সূচির তালিকা নয়, বরং এটি পুরো প্রক্রিয়ার দিকনির্দেশনা। এর মাধ্যমে ভোট আয়োজনের ধাপগুলো স্পষ্ট হয়, রাজনৈতিক দলগুলো প্রচারণা কৌশল নির্ধারণ করতে পারে এবং ভোটারদের জন্য স্বচ্ছতা নিশ্চিত হয়।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করেন, একটি সুষ্ঠু, গ্রহণযোগ্য ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচন আয়োজনের জন্য একটি সুসংহত রোডম্যাপ অপরিহার্য। বিশেষ করে বর্তমান রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে রোডম্যাপ জনগণের আস্থা ফেরাতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।
বিশেষজ্ঞ মতামত
রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, নির্বাচন কমিশনের ঘোষিত রোডম্যাপে যদি সব ধাপ স্বচ্ছ ও বাস্তবসম্মতভাবে পরিকল্পিত হয়, তবে ভোটের পরিবেশ উন্নত হবে। তারা মনে করেন, অংশীজনদের সঙ্গে পর্যাপ্ত সংলাপ ও আইনগত সংস্কারের সুস্পষ্ট ঘোষণা থাকলে রোডম্যাপ জনগণের কাছে গ্রহণযোগ্য হবে।
একজন বিশ্লেষক মন্তব্য করেন, “রোডম্যাপ কেবল কাগজে নয়, বাস্তবায়নের প্রতিশ্রুতিতেও শক্ত হতে হবে। তাহলে নির্বাচনী প্রক্রিয়ায় আস্থা ফিরে আসবে।”
শেষাংশ
আগামী সপ্তাহে ঘোষিত হতে যাওয়া নির্বাচনী রোডম্যাপ সবার নজরে থাকবে। রাজনৈতিক দল, ভোটার, পর্যবেক্ষক সংস্থা ও আন্তর্জাতিক মহল — সবাই এই ঘোষণার দিকে তাকিয়ে আছে। এখন দেখার বিষয়, কমিশন কীভাবে স্বচ্ছতা, অংশগ্রহণ ও বিশ্বাসযোগ্যতা নিশ্চিত করে সেই রোডম্যাপ উপস্থাপন করে।
এম আর এম – ০৮৬২, Signalbd.com