বিশ্ব

যুক্তরাষ্ট্রে পর্যটন ভিসা পেতে হতে পারে ১১ লাখ টাকার জামানত

Advertisement

যুক্তরাষ্ট্রের ট্রাম্প প্রশাসন পর্যটন ও ব্যবসায়িক ভিসা (বি-১/বি-২) প্রক্রিয়া কঠোর করতে নতুন পাইলট প্রকল্প চালু করতে যাচ্ছে। এর আওতায় ভিসার আবেদনকারীদের অন্তত ১৫ হাজার ডলার (বাংলাদেশি মুদ্রায় প্রায় ১১ লাখ ৩০ হাজার টাকা) জামানত দিতে হবে। এর প্রধান উদ্দেশ্য হলো ভিসার মেয়াদ শেষ হওয়ার পরেও যুক্তরাষ্ট্রে অনধিকার প্রবেশ বা অবস্থান (ওভারস্টে) কমানো। এছাড়া, যেসব দেশের নাগরিকদের বিরুদ্ধে নিরাপত্তা তথ্য অপর্যাপ্ত, তাদের জন্যও এই জামানত বাধ্যতামূলক করা হতে পারে।

যুক্তরাষ্ট্রের নতুন পর্যটন ভিসা জামানত পদ্ধতি: কী ভাবছেন তারা?

যুক্তরাষ্ট্র সরকার দীর্ঘদিন ধরেই এমন সমস্যার মুখোমুখি হচ্ছে যেখানে বিদেশি পর্যটক বা ব্যবসায়ী ভিসায় যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশ করে নির্ধারিত মেয়াদ শেষ হওয়ার পরও দেশে অবস্থান করে থাকেন। এই ‘ওভারস্টে’ প্রবণতা দেশটির অভিবাসন ব্যবস্থার জন্য বড় উদ্বেগের বিষয়। তাই নতুন জামানত পদ্ধতির মাধ্যমে তাদের ফিরিয়ে আনার নিশ্চয়তা চাওয়া হচ্ছে।

মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তর কর্তৃক সম্প্রতি প্রকাশিত বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, এই পাইলট প্রোগ্রাম প্রথমে ১২ মাসের জন্য চালু হবে। এতে অন্তর্ভুক্ত হবে এমন দেশগুলো যেখানে ভিসাধারীদের মধ্যে ‘ওভারস্টে’র হার তুলনামূলক বেশি এবং যাদের নিরাপত্তা যাচাই-বাছাই পুরোপুরি হয়নি।

যদিও বিজ্ঞপ্তিতে কোনো দেশের নাম সরাসরি উল্লেখ করা হয়নি, তথাপি ধারণা করা হচ্ছে, সেই দেশগুলো হতে পারে যেখানে ‘বিনিয়োগের মাধ্যমে নাগরিকত্ব’ সুবিধা পাওয়া যায় এবং সেখানে নিয়মিত বসবাসের বাধ্যবাধকতা নেই। এর ফলে অনেকেই সহজে যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশ করে অবৈধভাবে থাকার চেষ্টা করেন।

ট্রাম্প প্রশাসনের অভিবাসন নীতির কঠোরতা ও নতুন উদ্যোগ

ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রশাসন অভিবাসন নীতি কঠোর করার জন্য ইতিমধ্যে বিভিন্ন উদ্যোগ নিয়েছে। তাঁর দ্বিতীয় মেয়াদের প্রথম দিনে তিনি একটি নির্বাহী আদেশে স্বাক্ষর করেন যা অবৈধ অভিবাসন রোধে ব্যাপক প্রভাব ফেলেছে। ইতোমধ্যেই ১২টি দেশের নাগরিকদের যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছে এবং আরও সাতটি দেশের ওপর আংশিক নিষেধাজ্ঞা কার্যকর হয়েছে।

এছাড়া, শিক্ষার্থী ভিসাও অনেক ক্ষেত্রে বাতিল করা হয়েছে এবং সংশ্লিষ্টদের থেকে আপিলের সুযোগ কমিয়ে দেওয়া হয়েছে। বিশেষত, যেসব শিক্ষার্থীর বিরুদ্ধে নিরাপত্তা সংশ্লিষ্ট অভিযোগ উঠেছে তাদের এই কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে।

নতুন জামানত পদ্ধতির কারণ ও প্রয়োজনীয়তা

যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তর এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, যারা মার্কিন জাতীয় স্বার্থের পরিপন্থী কর্মকাণ্ডে জড়িত, তাদের বিরুদ্ধে এই পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে। যেমন ফিলিস্তিনপন্থী কার্যকলাপ বা অন্যান্য সন্ত্রাসবাদের সঙ্গে যুক্ত ব্যক্তিদের টার্গেট করা হচ্ছে।

তবে অভিবাসন আইনজীবীদের মতে, কিছু ক্ষেত্রে এই ভিসা বাতিল বা আটক কার্যক্রম ছোটখাটো অপরাধ যেমন ট্রাফিক আইন লঙ্ঘন বা অপরাধমূলক রেকর্ডের জন্যও হয়েছে, যা অনেক সময় বেআইনি নয়, কিন্তু প্রশাসনের নজরদারির অন্তর্ভুক্ত হয়েছে।

পর্যটন ভিসায় জামানত পদ্ধতির প্রভাব ও সম্ভাবনা

১৫ হাজার ডলার বা প্রায় ১১ লাখ টাকার জামানত নেওয়া হলে অনেক পর্যটক আর ব্যবসায়ী যুক্তরাষ্ট্রে যাওয়ার ক্ষেত্রে দ্বিধায় পড়বেন। বিশেষ করে নিম্ন ও মধ্য আয়ের দেশ থেকে আসা মানুষের জন্য এই নতুন নিয়ম কঠিন হয়ে দাঁড়াতে পারে। অনেকেরই যুক্তরাষ্ট্রে যাওয়ার স্বপ্ন বাস্তবায়নে এটি বড় বাধা হয়ে দাঁড়াতে পারে।

তবে যুক্তরাষ্ট্রের অভিবাসন ব্যবস্থাকে আরও শক্তিশালী করার জন্য এই পদক্ষেপ অপরিহার্য বলে মনে করছে প্রশাসন। কারণ, দীর্ঘদিন ধরে ‘ওভারস্টে’ বা অবৈধ অবস্থান একটি বড় নিরাপত্তা ও সামাজিক সমস্যা হিসেবে দেখা দিয়েছে।

বাংলাদেশসহ অন্যান্য দেশের জন্য প্রভাব

যদিও সরাসরি বাংলাদেশের নাম উল্লেখ করা হয়নি, বাংলাদেশের নাগরিকরাও এই নতুন নিয়মের আওতায় পড়তে পারেন, যদি তাদের ভিসা ‘ওভারস্টে’র হার বৃদ্ধি পায়। বাংলাদেশ থেকে যুক্তরাষ্ট্রে ভিসা আবেদনকারীদের সংখ্যাও দিন দিন বাড়ছে, বিশেষত শিক্ষার্থী, পর্যটক ও ব্যবসায়ী হিসেবে।

এ কারণে বাংলাদেশি নাগরিকদের জন্য নতুন জামানত ব্যবস্থা অর্থনৈতিকভাবে চাপ সৃষ্টি করতে পারে। তবে যারা সুসংগঠিতভাবে ভ্রমণ বা ব্যবসা করেন, তাদের জন্য সঠিক প্রস্তুতি নিয়ে আবেদন করার পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে।

অভিবাসন নীতির ভবিষ্যৎ ও বিশ্লেষণ

যুক্তরাষ্ট্রের অভিবাসন নীতি আগামীতে আরও কঠোর হতে পারে। ট্রাম্প প্রশাসনের এই পদক্ষেপগুলোই এর পূর্বসূরী। নতুন জামানত পদ্ধতি চালু হলে দেশের অভ্যন্তরে অবৈধ অবস্থানের হার কমানোর পাশাপাশি নিরাপত্তা ঝুঁকি নিয়ন্ত্রণে সহায়তা করবে।

তবে অনেক অভিবাসন বিশেষজ্ঞ মনে করেন, শুধু জামানত নেওয়া বা ভিসা কঠোর করা দিয়ে সমস্যার সমাধান হবে না। আরও পরিপক্ক ও মানবিক অভিবাসন নীতি প্রয়োজন যা মানবাধিকার ও জাতীয় নিরাপত্তার ভারসাম্য রক্ষা করবে।

যুক্তরাষ্ট্রে পর্যটন ভিসার নতুন জামানত পদ্ধতি নিয়ে আলোচনা ও বিতর্ক শুরু হয়েছে। যেহেতু এটি পাইলট প্রকল্প হিসেবে চালু হবে, তাই আগামী ১২ মাসের মধ্যে এর কার্যকারিতা ও প্রভাব মূল্যায়ন করা হবে। পরবর্তীতে এই প্রোগ্রাম প্রয়োগের ক্ষেত্র বৃদ্ধি পেতে পারে অথবা নিয়মে পরিবর্তন আসতে পারে।

বাংলাদেশসহ অন্যান্য দেশের নাগরিকদের জন্য এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ খবর। যারা যুক্তরাষ্ট্র ভ্রমণের পরিকল্পনা করছেন, তাদের উচিত এখন থেকেই প্রয়োজনীয় তথ্য ও আর্থিক প্রস্তুতি নেয়া।

MAH – 12147 ,  Signalbd.com

মন্তব্য করুন
Advertisement

Related Articles

Back to top button