আগামীকাল অর্থাৎ ৫ আগস্ট, বাংলাদেশের সকল ব্যাংক বন্ধ থাকবে। সরকার ঘোষিত ‘জুলাই গণ-অভ্যুত্থান দিবস’ উপলক্ষে এই ছুটির ঘোষণা এসেছে। একই সঙ্গে বন্ধ থাকবে দেশের পুঁজিবাজারের লেনদেনও। বাংলাদেশ ব্যাংকের ডিপার্টমেন্ট অব অফসাইট সুপারভিশনের প্রজ্ঞাপনে এই সিদ্ধান্ত জানানো হয়েছে।
কেন এদিন ‘জুলাই গণ-অভ্যুত্থান দিবস’?
২০২৫ সালের ২ জুলাই মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের প্রজ্ঞাপনে ৫ আগস্ট দিনটিকে ‘জুলাই গণ-অভ্যুত্থান দিবস’ হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে। এই দিবসটি ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলন ও পরে গণ-অভ্যুত্থানের স্মরণে বিশেষ মর্যাদায় পালন করা হয়। দেশের ইতিহাসে ৫ আগস্টের তাৎপর্য বিবেচনায় রেখে সরকার ও সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠান এই দিনকে সরকারি ছুটির দিন ঘোষণা করেছে।
সরকারি সিদ্ধান্ত অনুসারে, এদিন শুধুমাত্র সরকারি অফিস নয়, বেসরকারি ব্যাংকগুলোতেও ছুটি থাকবে। ফলে সব ধরনের শাখা-প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকবে।
ব্যাংক বন্ধ থাকায় সাধারণ মানুষের করণীয় ও সেবা ব্যবস্থা
৫ আগস্ট ব্যাংক বন্ধ থাকায় নগদ লেনদেন ও শাখার ভৌত সেবা বন্ধ থাকবে। তবে সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, এই দিন অনলাইন ব্যাংকিং, মোবাইল ব্যাংকিং, এটিএম এবং সিআরএম (কাস্টমার রিলেশন ম্যানেজমেন্ট) সেবা চালু থাকবে। তাই গ্রাহকরা ডিজিটাল মাধ্যমে ব্যাংকিং কার্যক্রম পরিচালনা করতে পারবেন।
বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রজ্ঞাপনে উল্লেখ করা হয়েছে, যদিও শাখা বন্ধ থাকবে, তবুও ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মগুলো স্বাভাবিক চলবে যাতে জনগণ জরুরি সেবায় বিরতি না পায়।
৫ আগস্ট পুঁজিবাজারও বন্ধ থাকবে
ব্যাংকের পাশাপাশি দেশের পুঁজিবাজারেও ৫ আগস্ট লেনদেন বন্ধ থাকবে। ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (DSE) এবং চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জ (CSE) উভয় স্থানেই এদিন লেনদেন স্থগিত থাকবে। ৬ আগস্ট থেকে পুনরায় বাজার খোলা হবে।
পুঁজিবাজার সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এই ছুটি বিনিয়োগকারীদের জন্য আগাম পরিকল্পনার সুযোগ দেয় এবং বাজার পরিচালনায় স্বাভাবিক ব্যাঘাত ঘটবে না।
ব্যাংক ছুটির পূর্বপ্রস্তুতি ও গ্রাহকদের সতর্কতা
ব্যাংক এবং অর্থনৈতিক বিশেষজ্ঞরা গ্রাহকদের ৫ আগস্টের আগেই তাদের নগদ লেনদেন ও অন্যান্য ব্যাংকিং প্রয়োজন পূরণের জন্য প্রস্তুতি নিতে বলেছেন। বিশেষ করে মাসের বকেয়া বিল পরিশোধ, সঞ্চয় জমা বা উত্তোলন, এবং ঋণ সংক্রান্ত কাজ আগেভাগে সম্পন্ন করার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।
অনলাইন ও মোবাইল ব্যাংকিং ব্যবহারে অগ্রাধিকার দেওয়ার আহ্বান জানানো হয়েছে যাতে জরুরি লেনদেন সময়মতো সম্পন্ন হয়।
‘জুলাই গণ-অভ্যুত্থান দিবস’: ইতিহাস ও তাৎপর্য
‘জুলাই গণ-অভ্যুত্থান’ বাংলাদেশের ইতিহাসের একটি উল্লেখযোগ্য ঘটনা, যা ১৯৫৪ সালের জুলাই মাসে ঘটে। ঐ সময় পাকিস্তানি শাসকের অত্যাচার এবং বাঙালি জনতার অধিকার আদায়ের লড়াইতে এই গণ-অভ্যুত্থান একটি গুরুত্বপূর্ণ দৃষ্টান্ত স্থাপন করে।
জুলাই মাসে জাতীয়তাবাদ ও ভাষা আন্দোলনের ধারাবাহিকতায় এই গণ-অভ্যুত্থান বাঙালির মুক্তির এক নতুন অধ্যায় শুরু করে। বর্তমান সরকারের উদ্যোগে এ দিনটি একটি জাতীয় স্মৃতি দিবস হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে।
সরকারের অন্যান্য ছুটির দিনের তুলনায় ‘জুলাই গণ-অভ্যুত্থান দিবস’
বাংলাদেশে সরকারি ছুটির দিনগুলোর মধ্যে ‘জুলাই গণ-অভ্যুত্থান দিবস’ নতুন একটি সংযোজন। স্বাধীনতা দিবস, ভাষা শহীদ দিবস এবং বিজয় দিবসের মতোই এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ জাতীয় স্মৃতিদিবস হয়ে উঠছে।
সরকারি অফিস এবং শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ছুটি ঘোষণা করায় দেশের সাধারণ মানুষও এ দিবসের গুরুত্ব উপলব্ধি করছে এবং বিভিন্ন সামাজিক ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের মাধ্যমে দিবসটি পালন করছে।
ব্যাংক খোলা থাকবে আগামী ৬ আগস্ট থেকে
৫ আগস্টের ছুটির পর আগামী ৬ আগস্ট থেকে দেশের সব ব্যাংক, পুঁজিবাজার এবং আর্থিক প্রতিষ্ঠান স্বাভাবিক কার্যক্রম শুরু করবে। গ্রাহকরা তখন তাদের লেনদেন পুনরায় চালু করতে পারবেন।
বাংলাদেশ ব্যাংকের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, ব্যাংকিং সেবা আগের মতই দ্রুত, নির্ভরযোগ্য ও স্বচ্ছভাবে পরিচালিত হবে।
সারসংক্ষেপ:
- ৫ আগস্ট ২০২৫ ‘জুলাই গণ-অভ্যুত্থান দিবস’ উপলক্ষে বাংলাদেশের সব ব্যাংক এবং পুঁজিবাজার বন্ধ থাকবে।
- সরকার এবং বাংলাদেশ ব্যাংকের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী এদিন সরকারি ও বেসরকারি ব্যাংকের শাখা বন্ধ থাকবে।
- এটিএম, অনলাইন ব্যাংকিং, মোবাইল ব্যাংকিংসহ ডিজিটাল সেবা চালু থাকবে।
- পুঁজিবাজারও বন্ধ থাকবে, ৬ আগস্ট থেকে পুনরায় খোলা হবে।
- গ্রাহকদের ব্যাংকিং কাজের জন্য আগাম প্রস্তুতি নেওয়ার পরামর্শ।
- ‘জুলাই গণ-অভ্যুত্থান দিবস’ বাংলাদেশের ইতিহাসে গুরুত্বপূর্ণ একটি স্মৃতি দিবস।
MAH – 12123 , Signalbd.com



