অর্থনীতি

রমজানের প্রথম ১৫ দিনে রেকর্ড প্রবাসী আয়, এসেছে ১৬৬ কোটি ডলার

বাংলাদেশে প্রবাসী আয়ের ধারা ইতিবাচকভাবে অব্যাহত রয়েছে। পবিত্র রমজান মাসের প্রথম ১৫ দিনে ব্যাংকিং চ্যানেলের মাধ্যমে দেশে এসেছে ১৬৬ কোটি ডলার, যা বাংলাদেশি মুদ্রায় প্রায় ২০ হাজার ২৫২ কোটি টাকা।

প্রবাসী আয় বৃদ্ধির ধারা

বাংলাদেশ ব্যাংকের হালনাগাদ পরিসংখ্যান অনুযায়ী, চলতি মাসের প্রথম সপ্তাহের চেয়ে দ্বিতীয় সপ্তাহে ৬ কোটি ডলার বেশি এসেছে।

  • প্রথম সপ্তাহে: ৮১ কোটি ডলার
  • দ্বিতীয় সপ্তাহে: ৮৫ কোটি ডলার

এই বৃদ্ধির অন্যতম কারণ হলো রমজান ও আসন্ন ঈদুল ফিতর। সাধারণত দুই ঈদের আগে প্রবাসী আয় উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি পায়।

অতীতের তুলনায় আয় কেমন?

গত বছর ঈদুল ফিতরের আগের পাঁচ দিনে মোট ৪৫ কোটি ডলার দেশে এসেছে, অর্থাৎ প্রতিদিন গড়ে ৯ কোটি ডলার। কিন্তু এ বছর:

  • প্রথম সপ্তাহে: প্রতিদিন গড়ে ১১ কোটি ডলার
  • দ্বিতীয় সপ্তাহে: প্রতিদিন গড়ে ১২ কোটি ডলার

কোন ব্যাংক কত আয় এনেছে?

ব্যাংকভিত্তিক বিশ্লেষণে দেখা যায়, রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংক ও বেসরকারি ব্যাংকগুলোর মাধ্যমে মূলত প্রবাসী আয় আসছে।

  • রাষ্ট্রায়ত্ত ছয় বাণিজ্যিক ব্যাংক: ৩৭ কোটি ডলার
    • অগ্রণী, জনতা, রূপালী, সোনালী, বেসিক ও বাংলাদেশ ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক
  • বেসরকারি ব্যাংকগুলো: ১১৫ কোটি ডলার
  • ইসলামী ব্যাংক: সর্বোচ্চ ৫০ কোটি ডলার
  • ব্র্যাক ব্যাংক: ৯ কোটি ডলার
  • ট্রাস্ট ব্যাংক: ৮.৯৭ কোটি ডলার
  • সিটি ব্যাংক: ৮.৯৫ কোটি ডলার

রাজনৈতিক পরিবর্তনের পর রেকর্ড পরিমাণ প্রবাসী আয়

গত আগস্টে রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর টানা সাত মাস ধরে প্রতি মাসে ২০০ কোটি ডলারের বেশি পাঠাচ্ছেন প্রবাসীরা।

  • ফেব্রুয়ারি ২০২৫: ২৫২.৮ কোটি ডলার, যা আগের বছরের তুলনায় ১৭% বেশি
  • জানুয়ারি ২০২৫: প্রবাসী আয় বেড়েছে ৩%

চলতি অর্থবছরের সার্বিক চিত্র

২০২৪-২৫ অর্থবছরের প্রথম আট মাসে প্রবাসী আয় দাঁড়িয়েছে ১,৮৪৯ কোটি ডলার, যা গত বছরের একই সময়ের তুলনায় ২৪% বেশি।

  • ২০২৩-২৪ অর্থবছরের একই সময়ে: ১,৪৯৩ কোটি ডলার

প্রবাসী আয়ের গুরুত্ব

প্রবাসী আয় দেশে ডলার সরবরাহের সবচেয়ে নির্ভরযোগ্য উৎস। কারণ:

  • এই আয়ের বিপরীতে কোনো বিদেশি মুদ্রা খরচ করতে হয় না
  • রপ্তানি আয়ের ক্ষেত্রে কাঁচামাল আমদানিতে খরচ হয়, কিন্তু প্রবাসী আয় পুরোপুরি লাভজনক
  • বিদেশি ঋণ পরিশোধের জন্য ডলারের চাহিদা থাকে, কিন্তু প্রবাসী আয় সরাসরি রিজার্ভ বাড়ায়

সার্বিক মূল্যায়ন

প্রবাসী আয় বেড়ে যাওয়ায় দেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ শক্তিশালী হচ্ছে। বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, টাকা ও ডলারের বিনিময় হার স্থিতিশীল রাখতে এবং মুদ্রাস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে প্রবাসী আয়ের এই ধারা অব্যাহত রাখা গুরুত্বপূর্ণ।

প্রবাসীদের পাঠানো অর্থ বাংলাদেশের অর্থনীতির অন্যতম চালিকাশক্তি। সরকার যদি ব্যাংকিং চ্যানেলে লেনদেনকে আরও সহজ করে এবং রেমিট্যান্সের উপর প্রণোদনা বাড়ায়, তাহলে প্রবাসী আয় আরও বৃদ্ধি পাবে।

মন্তব্য করুন

Related Articles

Back to top button