অর্থনীতি

পোশাক ও বস্ত্র খাতের জন্য আলাদা মন্ত্রণালয় চান মালিকেরা

টেকসই পোশাক ও বস্ত্র খাতের জন্য একটি আলাদা মন্ত্রণালয় চান শিল্পমালিকেরা। তাঁরা বলছেন, একক খাত হিসেবে রপ্তানি আয়ের বড় উৎস পোশাক খাত। তবে বৈশ্বিক ও স্থানীয় নানামুখী নতুন নতুন চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে হচ্ছে। এসব মোকাবিলা করতে দীর্ঘমেয়াদি নীতি দরকার। এ জন্য আলাদা মন্ত্রণালয় গঠন করা জরুরি। শনিবার বিকেলে রাজধানীর একটি হোটেলে পোশাকমালিকেরা এসব কথা বলেন। বিজিএমইএ নির্বাচনী জোট-ফোরাম সাধারণ ব্যবসায়ীদের নিয়ে আলোচনা ও ইফতারের আয়োজন করে। ব্যবসায়ী নেতারা এ সময় বলেন, বিগত দিনে তাঁদের সংগঠন বিজিএমইএ দলীয় কার্যালয়ে পরিণত হয়, যা দুঃখজনক। হারানো ভাবমূর্তি ফেরাতে হবে। অনুষ্ঠানে ব্যবসায়ীরা বলেন, আগামী দিনে যাঁরা বিজিএমইএর নেতৃত্ব দেবেন, তাঁরা যাতে কেবল কার্ড বহনকারী পরিচালক হিসেবে পরিচিতি না পান। তাঁদের দৃঢ় প্রতিশ্রুতি থাকতে হবে। দেশের স্বার্থে পোশাক খাতের জন্য নির্দেশনা দিতে হবে। অন্যথায় শিল্প টিকবে না। এ সময় ফোরাম প্যানেল নেতা মাহমুদ হাসান খান বলেন, নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত নীতিসহায়তা দরকার পোশাক খাতের জন্য। এই খাত নিয়ে দেশি–বিদেশি ষড়যন্ত্র চলে সব সময়। শ্রমিক অসন্তোষের নামে নৈরাজ্য তৈরি হচ্ছে বিভিন্ন সময়। এর পেছনে রাজনীতি জড়িত কি না, তা খতিয়ে দেখতে হবে। কারণ, শ্রমিকেরা তাঁদের রুটিরুজি নষ্ট করতে পারেন না। একই সঙ্গে কাস্টমসের নিরীক্ষা হয়রানি থেকে উদ্যোক্তাদের রেহাই দিতে হবে। আর টেকসই নীতির জন্য আলাদা মন্ত্রণালয় দরকার। ফোরাম মহাসচিব রশিদ আহমেদ হোসাইনী বলেন, সংবাদমাধ্যমে খবর বেরিয়েছে, এরই মধ্যে প্রায় ৭০০ ভুয়া ভোটার শনাক্ত করা হয়েছে। তাদের ভোটাধিকার বাতিল করা হয়েছে। এটি খুব লজ্জার। তিনি বলেন, মনে রাখতে হবে, এই খাত ছাড়া বাংলাদেশের অর্থনীতি টিকিয়ে রাখা যাবে না। আর বিজিএমইএকে কোনো দলীয় কার্যালয়ে পরিণত করা যাবে না। বিজিএমইএর সাবেক সভাপতি আনিসুর রহমান সিনহা বলেন, ‘ব্যবসা সরকার বোঝে না, সরকারকে বোঝানোর দায়িত্ব আমাদের। যেকোনো সমস্যা সমাধানের জন্য সংগঠন হিসেবে বিজিএমইএকে ভূমিকা নিতে হবে। আন্তর্জাতিক ব্যবসার জন্য যেসব সমস্যা তৈরি হচ্ছে, সেগুলো ঠিকভাবে তুলে ধরা হচ্ছে না। মালিকেরা খুব হতাশাভাবেই কাজ করছে। সমস্যাটা সবার।’ আরেক সাবেক সভাপতি আনোয়ার-উল-আলম চৌধুরী (পারভেজ) বলেন, সংকট মোকাবিলা করতে বিজিএমইএতে দক্ষ নেতৃত্ব দরকার। বিজিএমইএর সাবেক সভাপতি রুবানা হক বলেন, বহু বছরের জঞ্জাল থেকে মালিকেরা রেহাই চান। নানা কারণে বিজিএমইএ নিয়ন্ত্রণ করা হয়েছে বিগত দিনে। এবার একটি স্বচ্ছ ভোট হতে হবে ভাবমূর্তি ফেরাতে। ফোরাম সভাপতি আবদুস সালামসহ মালিকেরা পোশাক খাতের চিত্র তুলে ধরেন। এদিকে আগামী ২৮ মে বিজিএমইএ নির্বাচন। নির্বাচন পরিচালনা বোর্ড তফসিল ঘোষণা করেছে। ২৪ এপ্রিল মনোনয়নপত্র দাখিলের শেষ দিন। আর সাধারণ সদস্যদের চাঁদা পরিশোধের শেষ দিন ২৯ মার্চ।

পোশাক ও বস্ত্র খাতের জন্য আলাদা মন্ত্রণালয় গঠনের দাবি: কারণ ও বিশ্লেষণ

বাংলাদেশের অর্থনীতির অন্যতম প্রধান চালিকাশক্তি হলো পোশাক ও বস্ত্র খাত। এই খাত দেশের রপ্তানি আয়ের সিংহভাগ জোগান দেয় এবং লক্ষ লক্ষ মানুষের কর্মসংস্থান সৃষ্টি করে। তবে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে এই খাত বিভিন্ন ধরনের চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হচ্ছে, যার মধ্যে রয়েছে বৈশ্বিক প্রতিযোগিতা, শ্রমিকের অধিকার, পরিবেশগত সুরক্ষা এবং নীতিগত অনিশ্চয়তা। এই চ্যালেঞ্জগুলো মোকাবিলা করার জন্য পোশাক ও বস্ত্র খাতের মালিকেরা একটি আলাদা মন্ত্রণালয় গঠনের দাবি জানিয়েছেন।

পোশাক ও বস্ত্র খাতের গুরুত্ব:

  • অর্থনৈতিক অবদান: পোশাক ও বস্ত্র খাত বাংলাদেশের রপ্তানি আয়ের প্রায় ৮৫% জোগান দেয়। এটি দেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ বৃদ্ধিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।
  • কর্মসংস্থান: এই খাত প্রায় ৪০ লক্ষ মানুষের কর্মসংস্থান সৃষ্টি করেছে, যার বেশিরভাগই নারী। এটি দারিদ্র্য বিমোচন এবং সামাজিক উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।
  • শিল্প উন্নয়ন: পোশাক ও বস্ত্র খাত অন্যান্য শিল্প খাতের উন্নয়নেও অবদান রাখে, যেমন টেক্সটাইল, ডাইং এবং প্যাকেজিং।

পোশাক ও বস্ত্র খাতের চ্যালেঞ্জ:

  • বৈশ্বিক প্রতিযোগিতা: ভিয়েতনাম, চীন এবং অন্যান্য দেশের সাথে তীব্র প্রতিযোগিতার সম্মুখীন হচ্ছে বাংলাদেশের পোশাক খাত।
  • শ্রমিকের অধিকার: শ্রমিকের ন্যায্য মজুরি, নিরাপদ কর্মপরিবেশ এবং ট্রেড ইউনিয়নের অধিকার নিয়ে বিভিন্ন প্রশ্ন রয়েছে।
  • পরিবেশগত সুরক্ষা: পোশাক শিল্পের পরিবেশগত প্রভাব, যেমন জল দূষণ এবং বর্জ্য ব্যবস্থাপনা, একটি গুরুত্বপূর্ণ সমস্যা।
  • নীতিগত অনিশ্চয়তা: পোশাক শিল্পের জন্য দীর্ঘমেয়াদী এবং স্থিতিশীল নীতিমালার অভাব রয়েছে।

আলাদা মন্ত্রণালয়ের প্রয়োজনীয়তা:

পোশাক ও বস্ত্র খাতের মালিকেরা মনে করেন যে, একটি আলাদা মন্ত্রণালয় গঠনের মাধ্যমে এই খাতকে আরও কার্যকরভাবে পরিচালনা করা সম্ভব হবে। এই মন্ত্রণালয় নিম্নলিখিত কাজগুলো করতে পারবে:

  • নীতি প্রণয়ন: পোশাক ও বস্ত্র খাতের জন্য দীর্ঘমেয়াদী এবং স্থিতিশীল নীতিমালা প্রণয়ন করা।
  • সমন্বয়: বিভিন্ন সরকারি সংস্থা এবং বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে সমন্বয় সাধন করা।
  • তদারকি: শ্রমিকের অধিকার, পরিবেশগত সুরক্ষা এবং অন্যান্য বিষয়ে তদারকি করা।
  • প্রশিক্ষণ: শ্রমিক এবং কর্মকর্তাদের জন্য প্রশিক্ষণ কর্মসূচি আয়োজন করা।
  • গবেষণা: পোশাক ও বস্ত্র খাতের উন্নয়নের জন্য গবেষণা পরিচালনা করা।

মালিকদের দাবি ও যুক্তি:

পোশাক শিল্প মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএ এর নেতারা মনে করেন, পোশাক খাতকে বাচাঁতে হলে এর জন্য আলাদা মন্ত্রনালয় দরকার। তাদের মতে, এই শিল্পের জন্য দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা গ্রহণ করা এবং তার বাস্তবায়ন করা দরকার। এছাড়াও তারা মনে করেন, বর্তমানে যেসকল সমস্যা এই শিল্পে রয়েছে, যেমন শ্রমিক অসন্তোষ, কাস্টমসের হয়রানি, এসব সমস্যা দূর করার জন্য একটি বিশেষ মন্ত্রনালয় প্রয়োজন।

বিজিএমইএ নির্বাচন ও ভাবমূর্তি পুনরুদ্ধার:

আগামী ২৮ মে বিজিএমইএ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। এই নির্বাচনকে কেন্দ্র করে পোশাক শিল্প মালিকদের মধ্যে নতুন করে প্রাণের সঞ্চার হয়েছে। তারা আশা করছেন, এই নির্বাচনের মাধ্যমে বিজিএমইএ এর হারানো ভাবমূর্তি পুনরুদ্ধার করা সম্ভব হবে।

উপসংহার:

পোশাক ও বস্ত্র খাত বাংলাদেশের অর্থনীতির জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এই খাতের উন্নয়নের জন্য সরকার এবং শিল্প মালিকদের মধ্যে সহযোগিতা প্রয়োজন। একটি আলাদা মন্ত্রণালয় গঠনের মাধ্যমে এই খাতকে আরও শক্তিশালী করা সম্ভব হবে।

মন্তব্য করুন

Related Articles

Back to top button