অর্থনীতি

আগের দামে সার পাবেন কৃষকেরা

কৃষকদের স্বস্তির খবর, সরকার নির্ধারিত আগের দামেই সার বিক্রি করা হবে। বাংলাদেশ কেমিক্যাল ইন্ডাস্ট্রিজ করপোরেশন (বিসিআইসি) আজ শুক্রবার এক বিজ্ঞপ্তিতে জানিয়েছে যে, কৃষকেরা আগের নির্ধারিত মূল্যে সার কিনতে পারবেন।

বিজ্ঞপ্তি অনুযায়ী, কৃষকদের জন্য ইউরিয়া সার প্রতি কেজি ২৭ টাকা, ডিএপি ২১ টাকা, টিএসপি ২৭ টাকা এবং এমওপি ২০ টাকা দরে বিক্রি করা হবে। তবে ডিলার পর্যায়ে ইউরিয়া সারের মূল্য প্রতি কেজি ২৫ টাকা, ডিএপি ১৯ টাকা, টিএসপি ২৫ টাকা এবং এমওপি ১৮ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে।

বাড়তি দামে বিক্রি হলে অভিযোগ জানানোর আহ্বান
বিসিআইসির বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, নির্ধারিত মূল্যের চেয়ে বেশি দামে সার বিক্রি হলে সংশ্লিষ্ট জেলা বা উপজেলা প্রশাসক, কৃষি কর্মকর্তা কিংবা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে অবহিত করার জন্য কৃষকদের অনুরোধ করা হয়েছে।

সরকার সার বিতরণে স্বচ্ছতা বজায় রাখতে কঠোর নজরদারি করছে এবং কৃষকদের সার কেনার ক্ষেত্রে যেন কোনো ধরনের বাড়তি মূল্য পরিশোধ করতে না হয়, সেজন্য প্রশাসনের বিভিন্ন পর্যায়ে দিকনির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।

সারের দাম পূর্বের তুলনায় স্থিতিশীল
২০২৩ সালের এপ্রিল মাসে সারের দাম প্রতি কেজিতে ৫ টাকা বাড়ানো হয়েছিল। কৃষি মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছিল, আন্তর্জাতিক বাজারে সারের মূল্যবৃদ্ধির কারণে এই সমন্বয় করা হয়েছে। তবে বর্তমানে সেই বাড়তি মূল্যই বহাল রাখা হয়েছে, নতুন করে কোনো মূল্যবৃদ্ধির সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়নি।

তখনকার হিসাব অনুযায়ী, আন্তর্জাতিক বাজারে প্রতি কেজি ইউরিয়া সারের দাম ছিল ৪৮ টাকা, ডিএপি ৭০ টাকা, টিএসপি ৫০ টাকা এবং এমওপি ৬০ টাকা। এর পরও সরকার কৃষকদের জন্য প্রতি কেজি ইউরিয়ায় ২১ টাকা, ডিএপিতে ৪৯ টাকা, টিএসপিতে ২৩ টাকা এবং এমওপিতে ৪০ টাকা ভর্তুকি দিয়ে আসছে।

সরকারি ভর্তুকির ফলে কৃষকেরা উপকৃত
বাংলাদেশে কৃষি উৎপাদন টেকসই রাখতে সরকার প্রতিবছর বিপুল পরিমাণ ভর্তুকি দিয়ে থাকে। বর্তমান পরিস্থিতিতে আন্তর্জাতিক বাজারে সার ও অন্যান্য কৃষিপণ্যের দাম বাড়লেও সরকার কৃষকদের স্বার্থ রক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখে চলেছে।

কৃষি মন্ত্রণালয়ের মতে, ২০২৪-২৫ অর্থবছরে সার ভর্তুকিতে সরকার প্রায় ২৮ হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ রেখেছে, যা দেশের কৃষিখাতের জন্য অত্যন্ত ইতিবাচক পদক্ষেপ।

কৃষকদের প্রতিক্রিয়া
এই ঘোষণার পর কৃষকদের মধ্যে স্বস্তি দেখা গেছে। কুমিল্লার এক কৃষক মাহমুদুল হাসান জানান, “সারের দাম না বাড়ায় আমরা অনেকটা স্বস্তিতে আছি। সঠিক সময়ে সুলভ মূল্যে সার পেলে উৎপাদন খরচ কম থাকবে এবং আমাদের লাভের পরিমাণ বাড়বে।”

একইভাবে ময়মনসিংহের কৃষক রফিকুল ইসলাম বলেন, “আগের দামে সার পাওয়ায় আমাদের ধান ও সবজি চাষের খরচ নিয়ন্ত্রণে থাকবে। আমরা আশা করছি, সরকার এই সুবিধা ধরে রাখবে।”

কৃষি বিশ্লেষকদের মতামত
কৃষি বিশ্লেষকদের মতে, বর্তমান অর্থনৈতিক পরিস্থিতিতে সারের দাম না বাড়ানো কৃষকদের জন্য বড় স্বস্তি। অর্থনীতিবিদ ড. মাহবুবুর রহমান বলেন, “কৃষিখাতে স্থিতিশীলতা আনতে সারসহ অন্যান্য কৃষি উপকরণের মূল্য সহনীয় রাখা জরুরি। সরকারের এ সিদ্ধান্ত দেশের খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে সহায়ক হবে।”

কৃষি গবেষক ড. মিজানুর রহমান বলেন, “সারের দাম নিয়ন্ত্রণে থাকলে কৃষকরা বেশি জমিতে চাষাবাদ করতে উৎসাহী হবেন এবং এর ইতিবাচক প্রভাব কৃষি উৎপাদনে পড়বে।”

চলমান নজরদারি এবং ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা
সরকার সার বিতরণ ও কৃষি খাতে সহায়তা প্রদানে আরও কিছু পরিকল্পনা হাতে নিয়েছে। এর মধ্যে অন্যতম হলো, ডিজিটাল কার্ডের মাধ্যমে ভর্তুকিযুক্ত সার বিতরণ করা।

কৃষি মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, আগামীতে কৃষকদের জন্য সহজলভ্য ও ন্যায্যমূল্যে সার সরবরাহ নিশ্চিত করতে মনিটরিং জোরদার করা হবে।

উপসংহার
সরকারের এই পদক্ষেপ দেশের কৃষি খাতের জন্য ইতিবাচক বার্তা বহন করছে। কৃষকরা আগের দামে সার কিনতে পারবেন, যা তাঁদের উৎপাদন ব্যয় কমিয়ে আনতে সহায়ক হবে। ভবিষ্যতে কৃষিখাতে আরও উন্নয়ন ও ভর্তুকির ধারাবাহিকতা নিশ্চিত করা গেলে খাদ্য উৎপাদন আরও বৃদ্ধি পাবে এবং দেশের অর্থনীতি আরও শক্তিশালী হবে।

মন্তব্য করুন

Related Articles

Back to top button