বিএসআরএমের রড উৎপাদন সক্ষমতা বেড়ে এখন ২৪ লাখ টন

বাংলাদেশের শীর্ষস্থানীয় ইস্পাত কোম্পানি বিএসআরএম গ্রুপের বার্ষিক রড উৎপাদন ক্ষমতা ৬ লাখ টন বেড়ে ২৪ লাখ টনে উন্নীত হয়েছে। গত ১ ফেব্রুয়ারি মিরসরাইয়ে নতুন কারখানা চালুর ফলে এই উৎপাদন ক্ষমতা বৃদ্ধি পায়। এর ফলে বাজারে বিএসআরএমের আধিপত্য আরও বাড়বে।
নতুন কারখানার সুবিধা
নতুন কারখানায় রড উৎপাদনের জন্য প্রয়োজনীয় কাঁচামাল বিলেটের উৎপাদন ক্ষমতাও বেড়ে ২৪ লাখ টনে উন্নীত হয়েছে। এর মানে, বিএসআরএম এখন মধ্যবর্তী কাঁচামাল উৎপাদনে স্বয়ংসম্পূর্ণ। এই কারখানায় বাংলাদেশে প্রথমবারের মতো ওয়্যার রড তৈরি হচ্ছে, যা নাট, বল্টু, স্ক্রু, ঝালাই করার উপকরণ এবং যন্ত্রাংশ তৈরির জন্য ব্যবহৃত হয়। আগে এই পণ্যটি শতভাগ আমদানি-নির্ভর ছিল, কিন্তু নতুন কারখানা চালুর পর আমদানি-নির্ভরতা কমবে বলে আশা করা হচ্ছে।
আমদানিকারক প্রতিষ্ঠান
বিএসআরএম গ্রুপের দুটি কোম্পানি রয়েছে—বিএসআরএম স্টিলস লিমিটেড এবং বাংলাদেশ স্টিল রি-রোলিং মিলস লিমিটেড। নতুন কারখানাটি বিএসআরএম স্টিলসের অধীনে পরিচালিত হচ্ছে।
অর্থনৈতিক প্রভাব
জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) তথ্য অনুযায়ী, ২০২৪ সালে ১১৪টি কোম্পানি মোট ১ লাখ ৬০ হাজার টন ওয়্যার রড আমদানি করেছে, যার জন্য ৯ কোটি ৮৫ লাখ মার্কিন ডলার ব্যয় হয়েছে। বিএসআরএম ওয়্যারস লিমিটেডও এই আমদানিকারকদের মধ্যে রয়েছে।
পরিবেশবান্ধব প্রযুক্তি
নতুন কারখানায় ১০ কোটি ৮০ লাখ ডলার বা প্রায় ১ হাজার ৩০০ কোটি টাকা ঋণ সহায়তা দিয়েছে দেশি-বিদেশি বিভিন্ন সংস্থা ও ব্যাংক। এর মধ্যে জাপান ইন্টারন্যাশনাল কো-অপারেশন এজেন্সি (জাইকা) সর্বোচ্চ ৫ কোটি ডলার ঋণ সহায়তা দিয়েছে। এই কারখানায় আধুনিক এয়ার পলিউশন কন্ট্রোল (এপিসি) ব্যবস্থা এবং পানির পুনর্ব্যবহার নিশ্চিত করতে ওয়াটার ট্রিটমেন্ট অ্যান্ড রিসাইক্লিং ফ্যাসিলিটি ব্যবহার করা হয়েছে।
বিএসআরএমের প্রতিশ্রুতি
বিএসআরএম গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) আমের আলীহুসাইন বলেন, “বাংলাদেশের মানুষ এখন পণ্যের গুণগত মান নিয়ে সচেতন। বিএসআরএম সব সময় গুণগত মানসম্পন্ন পণ্য বাজারজাত করে। নতুন কারখানায় আন্তর্জাতিক মানসম্পন্ন রড এবং ওয়্যার রড তৈরি হবে। এটি চালু হলে আমদানি-নির্ভরতা কমবে এবং বৈদেশিক মুদ্রার সাশ্রয় হবে।”
বাজারে অবস্থান
১৯৫২ সালে যাত্রা শুরু করার পর থেকে বিএসআরএম গ্রুপ রড উৎপাদন ও বাজারে শীর্ষস্থানে রয়েছে। যদিও আবুল খায়ের গ্রুপ সম্প্রতি তাদের উৎপাদন ক্ষমতা বাড়িয়ে ৩০ লাখ টনে উন্নীত করেছে, তবুও বাজারে বিএসআরএম এখনও সবচেয়ে এগিয়ে।
ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা
বর্তমানে দেশের বাজারে রডের চাহিদা কিছুটা কমেছে, তবে বিএসআরএম গ্রুপ নতুন বিনিয়োগ অব্যাহত রেখেছে। আমের আলীহুসাইন বলেন, “অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড কমলেও এটি স্থায়ী হবে না। সামনে অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড বাড়বে এবং চাহিদাও বৃদ্ধি পাবে। আমরা মিরসরাই অর্থনৈতিক অঞ্চলেও বিনিয়োগের পরিকল্পনা করছি।”
বিএসআরএমের নতুন কারখানা দেশের ইস্পাত খাতে একটি নতুন দিগন্ত উন্মোচন করেছে। এটি শুধু উৎপাদন ক্ষমতা বাড়াবে না, বরং দেশের অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। আশা করা হচ্ছে, বিএসআরএম গ্রুপের এই উদ্যোগ দেশের শিল্প খাতকে আরও শক্তিশালী করবে।