অর্থনীতি

এক বছরে ৪৩ হাজার কোটি টাকার সিগারেট বিক্রি করেছে ব্রিটিশ আমেরিকান টোব্যাকো

বহুজাতিক কোম্পানি ব্রিটিশ আমেরিকান টোব্যাকো বাংলাদেশ (বিএটিবিসি) ২০২৪ সালে ৪৩ হাজার ২৩২ কোটি টাকার সিগারেটসহ তামাকজাত পণ্য বিক্রি করেছে। আগের বছরের তুলনায় এ বছর বিক্রি বেড়েছে ২ হাজার ৮৫৩ কোটি টাকা বা ৭ শতাংশের বেশি।

লভ্যাংশ ঘোষণা ও বিতরণ

২০২৪ সালের জন্য কোম্পানিটি শেয়ারহোল্ডারদের ১ হাজার ৬২০ কোটি টাকা লভ্যাংশ দেবে। এর মধ্যে ৮১০ কোটি টাকা ইতিমধ্যেই অন্তর্বর্তীকালীন লভ্যাংশ হিসেবে বিতরণ করা হয়েছে। বাকি ৮১০ কোটি টাকা আগামী ২৫ মার্চ বার্ষিক সাধারণ সভা (এজিএম) শেষে বিতরণ করা হবে।

কোম্পানিটি ২০২৪ সালের জন্য মোট ৩০০ শতাংশ নগদ লভ্যাংশ ঘোষণা করেছে, যা শেয়ারপ্রতি ৩০ টাকা। এর মধ্যে ১৫০ শতাংশ (১৫ টাকা) অন্তর্বর্তীকালীন লভ্যাংশ এবং বাকি ১৫০ শতাংশ চূড়ান্ত লভ্যাংশ হিসেবে বিতরণ করা হবে।

বিক্রির ধারা ও প্রবৃদ্ধি

বিএটিবিসি গত ছয় বছরে প্রায় দ্বিগুণ ব্যবসা করেছে। ২০১৯ সালে কোম্পানির বার্ষিক বিক্রি ছিল ২৩ হাজার ৩১২ কোটি টাকা, যা ২০২৪ সালে বেড়ে ৪৩ হাজার ২৩২ কোটি টাকায় উন্নীত হয়েছে। ২০২৩ সালে কোম্পানিটির বিক্রির পরিমাণ ছিল ৪০ হাজার ৩৭৯ কোটি টাকা, যা ২০২৪ সালে ৭ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে।

মুনাফা ও ব্যয় বিশ্লেষণ

বিক্রি বাড়লেও ২০২৪ সালে কোম্পানির মোট মুনাফা কমেছে। ২০২৪ সালে কর পরবর্তী নিট মুনাফা হয়েছে ১ হাজার ৭৫১ কোটি টাকা, যা ২০২৩ সালের তুলনায় ৩৭ কোটি টাকা বা ২ শতাংশ কম। ২০২৩ সালে কোম্পানির নিট মুনাফা ছিল ১ হাজার ৭৮৮ কোটি টাকা।

শেয়ারধারীদের মধ্যে লভ্যাংশ বিতরণ

বিএটিবিসি ২০২৪ সালে শেয়ারধারীদের মধ্যে ১ হাজার ৬২০ কোটি টাকা লভ্যাংশ বিতরণ করছে, যা ২০২৩ সালের তুলনায় ১ হাজার ৮০ কোটি টাকা বেশি। ২০২৩ সালে এই পরিমাণ ছিল ৫৪০ কোটি টাকা।

শেয়ারহোল্ডারদের মধ্যে লভ্যাংশের বণ্টন:

  • বিদেশি উদ্যোক্তা ও পরিচালকেরা: ১,১৮২ কোটি টাকা
  • বাংলাদেশ সরকার: ১৪৫ কোটি টাকা
  • বিদেশি প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীরা: ৭৩ কোটি টাকা
  • দেশীয় প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীরা: ৮৯ কোটি টাকা
  • ব্যক্তি বিনিয়োগকারীরা: ১৩১ কোটি টাকা

বাজারমূল্য ও শেয়ারধারণের অবস্থা

বিএটিবিসি ১৯৭৭ সালে বাংলাদেশ শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত হয়। সর্বশেষ শেয়ার ধারণ সংক্রান্ত তথ্য অনুযায়ী:

  • বিদেশি উদ্যোক্তা-পরিচালকদের হাতে: ৭৩%
  • বাংলাদেশ সরকারের হাতে: ৯%
  • বিদেশি প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের হাতে: ৪.৫%
  • দেশীয় প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের হাতে: ৫.৫%
  • ব্যক্তি বিনিয়োগকারীদের হাতে: ৮%

শেয়ারের মূল্য প্রবণতা

২০২৪ সালে কোম্পানিটির শেয়ারের দাম কিছুটা কমেছে। গত বছর শেয়ারবাজারে এর শেয়ারের মূল্য ৩২.৫% কমে ৫১৯ টাকা থেকে ৩৫০ টাকায় নেমেছে। যদিও কোম্পানিটি ২০২৪ সালে সর্বোচ্চ লভ্যাংশ ঘোষণা করেছে, তবু বাজারে শেয়ারের দর কিছুটা নিম্নমুখী ছিল।

উপসংহার

বিএটিবিসির ব্যবসায়িক প্রবৃদ্ধি ধীরগতির হলেও, এটি শেয়ারহোল্ডারদের জন্য একটি লাভজনক প্রতিষ্ঠান। ধারাবাহিকভাবে উচ্চ লভ্যাংশ প্রদানের কারণে এটি ব্লু-চিপ কোম্পানিগুলোর মধ্যে অন্যতম। শেয়ারের দাম কমলেও কোম্পানির আর্থিক শক্তিমত্তা এবং ধারাবাহিক প্রবৃদ্ধি বিনিয়োগকারীদের জন্য এটি একটি স্থিতিশীল বিনিয়োগ হিসেবে ধরে রাখার সম্ভাবনা সৃষ্টি করেছে।

মন্তব্য করুন

Related Articles

Back to top button