মিয়ানমারের খনিজে ভারত-কাচিন বাহিনীর সহযোগিতা চীনের প্রভাবের বিরুদ্ধে কৌশল

বিশ্বের প্রযুক্তিগত উন্নতির জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বিরল খনিজের সরবরাহ বর্তমানে চীনের একক নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। এই খনিজগুলো বৈদ্যুতিন যানবাহন, উন্নত প্রযুক্তির যন্ত্রপাতি ও প্রতিরক্ষা সরঞ্জাম তৈরিতে অপরিহার্য। তবে, চীনের রপ্তানি সীমাবদ্ধতা ও কৌশলগত চাপের কারণে ভারত এখন বিকল্প উৎস খুঁজতে শুরু করেছে। এই প্রেক্ষাপটে, ভারত মিয়ানমারের বিদ্রোহী গোষ্ঠী কাচিন স্বাধীনতা বাহিনীর (KIA) সঙ্গে সহযোগিতা শুরু করেছে, যা আন্তর্জাতিক সম্পর্ক ও কৌশলগত দিক থেকে গুরুত্বপূর্ণ।
কাচিন রাজ্যের খনিজ সম্পদ: একটি সংক্ষিপ্ত পর্যালোচনা
মিয়ানমারের কাচিন রাজ্য, যা চীনের ইউনান প্রদেশের সীমান্তবর্তী, বিশ্বের অন্যতম বৃহৎ ভারী বিরল খনিজের উৎস। বিশেষ করে, ডিসপ্রোসিয়াম ও টার্বিয়াম—যেগুলো বৈদ্যুতিক যানবাহন, উইন্ড টারবাইন ও উন্নত প্রতিরক্ষা সরঞ্জাম তৈরিতে ব্যবহৃত হয়—এই অঞ্চলে প্রচুর পরিমাণে মজুত রয়েছে। ২০২৪ সালের অক্টোবর মাসে, কাচিন স্বাধীনতা বাহিনী (KIA) চিপওয়ে ও পাংওয়া শহরগুলো দখল করে, যা এই খনিজের বৃহৎ সরবরাহ কেন্দ্র হিসেবে পরিচিত। এর ফলে, চীনের সঙ্গে এই খনিজের সরবরাহে উল্লেখযোগ্য প্রভাব পড়েছে।
ভারতের কৌশলগত পদক্ষেপ
ভারত, চীনের একক নিয়ন্ত্রণের বিরুদ্ধে বিরল খনিজের সরবরাহ নিশ্চিত করতে কাচিন স্বাধীনতা বাহিনীর (KIA) সঙ্গে যোগাযোগ শুরু করেছে। ভারতের খনিজ মন্ত্রণালয় রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠান আইআরইএল ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠান মিডওয়েস্ট অ্যাডভান্সড ম্যাটেরিয়ালসকে KIA-নিয়ন্ত্রিত খনি থেকে বিরল খনিজের নমুনা সংগ্রহ ও পরিবহনের নির্দেশ দিয়েছে। এই পদক্ষেপ ভারতের দীর্ঘমেয়াদি কৌশলগত পরিকল্পনার অংশ হিসেবে দেখা হচ্ছে।
KIA ও ভারতের সহযোগিতা: একটি নতুন দৃষ্টিভঙ্গি
KIA, যা ১৯৬১ সালে কাচিন জনগণের স্বায়ত্তশাসনের জন্য প্রতিষ্ঠিত হয়, বর্তমানে মিয়ানমারের অন্যতম শক্তিশালী বিদ্রোহী গোষ্ঠী। তারা চীনের সঙ্গে দীর্ঘমেয়াদি সম্পর্ক বজায় রেখেছে, তবে সাম্প্রতিক সময়ে জান্তা সরকারের সঙ্গে সম্পর্কের অবনতির কারণে বিকল্প সহযোগিতা খুঁজছে। ভারতের সঙ্গে তাদের সহযোগিতা কৌশলগত দিক থেকে গুরুত্বপূর্ণ, কারণ এটি চীনের প্রভাবের বিরুদ্ধে একটি শক্তিশালী পদক্ষেপ হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে।
চীনের প্রতিক্রিয়া ও আন্তর্জাতিক প্রেক্ষাপট
চীন, যা বিশ্বের বিরল খনিজ প্রক্রিয়াকরণের প্রধান কেন্দ্র, মিয়ানমারের বিরল খনিজের উপর একচেটিয়া নিয়ন্ত্রণ বজায় রেখেছে। তবে, সাম্প্রতিক সময়ে KIA-এর সঙ্গে সম্পর্কের অবনতির কারণে চীন এই অঞ্চলে তার প্রভাব হারাতে পারে। ভারত ও KIA-এর মধ্যে সহযোগিতা চীনের জন্য একটি চ্যালেঞ্জ হিসেবে দেখা হচ্ছে, যা আন্তর্জাতিক সম্পর্কের নতুন দিক উন্মোচন করছে।
পরিবহন ও প্রক্রিয়াকরণ: চ্যালেঞ্জ ও সম্ভাবনা
কাচিন রাজ্যের দুর্গম পাহাড়ি অঞ্চলগুলোর কারণে খনিজ পরিবহন একটি বড় চ্যালেঞ্জ। যদিও KIA-এর সঙ্গে সহযোগিতা শুরু হয়েছে, তবে পরিবহন ও প্রক্রিয়াকরণের ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য প্রতিবন্ধকতা রয়েছে। ভারতের আইআরইএল জাপান ও কোরিয়ার কোম্পানির সঙ্গে অংশীদারিত্ব খুঁজছে, তবে দীর্ঘমেয়াদি উৎপাদন সক্ষমতা অর্জনে সময় লাগবে।
ভবিষ্যৎ সম্ভাবনা ও কৌশলগত গুরুত্ব
ভারত ও KIA-এর মধ্যে সহযোগিতা কেবল বিরল খনিজের সরবরাহ নিশ্চিত করার জন্য নয়, বরং এটি আন্তর্জাতিক কৌশলগত সম্পর্কের নতুন দিগন্ত উন্মোচন করছে। এই পদক্ষেপ চীনের প্রভাবের বিরুদ্ধে একটি শক্তিশালী প্রতিক্রিয়া হিসেবে দেখা হচ্ছে, যা দক্ষিণ এশিয়া ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার ভূরাজনৈতিক পরিস্থিতিতে গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব ফেলতে পারে।
ভারতের কাচিন স্বাধীনতা বাহিনীর (KIA) সঙ্গে সহযোগিতা মিয়ানমারের বিরল খনিজের সরবরাহ নিশ্চিত করার একটি কৌশলগত পদক্ষেপ। এই পদক্ষেপ চীনের একক নিয়ন্ত্রণের বিরুদ্ধে একটি শক্তিশালী প্রতিক্রিয়া হিসেবে দেখা হচ্ছে। যদিও পরিবহন ও প্রক্রিয়াকরণের ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জ রয়েছে, তবে দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা ও আন্তর্জাতিক সহযোগিতার মাধ্যমে ভারত এই চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে সক্ষম হবে।
MAH – 12743, Signalbd.com