অর্থনীতি

সিন্ডিকেট ভেঙে ও ব্যয় সংকোচনে ৩৩টি প্রয়োজনীয় ওষুধের দাম হ্রাস

Advertisement

বাংলাদেশের স্বাস্থ্যসেবা খাতে বড় স্বস্তির খবর এসেছে। এসেনশিয়াল ড্রাগস কোম্পানি লিমিটেড (ইডিসিএল) ঘোষণা দিয়েছে, সিন্ডিকেট ভেঙে ও উৎপাদন ব্যয় কমিয়ে ৩৩টি প্রয়োজনীয় ওষুধের দাম ১০% থেকে ৫০% পর্যন্ত হ্রাস করা হয়েছে। এর ফলে অ্যান্টিবায়োটিক, ব্যথানাশক, গ্যাস্ট্রিকের ওষুধ থেকে শুরু করে উচ্চ রক্তচাপ, হাঁপানি ও শিশুদের প্রয়োজনীয় ভিটামিনসহ বহু গুরুত্বপূর্ণ ওষুধ এখন আরও সাশ্রয়ী দামে পাওয়া যাবে।

ব্যয় কমানোর পেছনের কৌশল

ইডিসিএলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সামাদ মৃধা বুধবার (১৩ আগস্ট) বিকেলে প্রতিষ্ঠানটির প্রধান কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন—

“আগের সরকারের সময় প্রতিষ্ঠানটিতে প্রয়োজনের তুলনায় প্রায় ২ হাজার অতিরিক্ত কর্মী ছিল, যাদের মধ্যে অধিকাংশই অদক্ষ। এর ফলে উৎপাদন খরচ অযথা বেড়ে যেত।”

ব্যয় কমানোর জন্য—

  • ৭২২ জন কর্মী ছাঁটাই করা হয়েছে
  • অতিরিক্ত ওভারটাইম বন্ধ করা হয়েছে
  • উৎপাদন প্রক্রিয়ায় ট্রল ম্যানুফ্যাকচার কমানো হয়েছে
  • সিন্ডিকেট ভেঙে কাঁচামাল (Raw Material) যৌক্তিক দামে কেনার ব্যবস্থা করা হয়েছে

এর ফলে ওষুধ উৎপাদনে ব্যয় উল্লেখযোগ্যভাবে কমে এসেছে, যা সরাসরি ভোক্তার দামে প্রতিফলিত হয়েছে।

দাম কমা ওষুধের তালিকা ও নতুন মূল্য

দাম হ্রাসকৃত ৩৩টি ওষুধের মধ্যে রয়েছে—

  • অ্যান্টিবায়োটিক: সেফট্রিয়াক্সোন ইনজেকশন, সেফটাজিডিম ইনজেকশন
  • গ্যাস্ট্রিকের ওষুধ: ওমিপ্রাজল ক্যাপসুল, মেরোপেন ওমিপ্রাজল ইনজেকশন
  • ব্যথানাশক: কেটোরোলাক ইনজেকশন
  • বমি নিয়ন্ত্রণের ওষুধ: অনডানসেট্রন ইনজেকশন
  • হাঁপানি ও শ্বাসকষ্টের ওষুধ: সালবিউটামল
  • কৃমিনাশক: অ্যালবেনডাজল
  • ভিটামিন ও সাপ্লিমেন্ট

সবচেয়ে বড় দামের পরিবর্তন হয়েছে মনটিলুকাস্ট ট্যাবলেট-এ, যার দাম ১০ টাকা ৬৭ পয়সা থেকে কমিয়ে ৫ টাকা করা হয়েছে।

গ্রামীণ ক্লিনিকেও দাম কমেছে

ইডিসিএল জানিয়েছে, গ্রামীণ ক্লিনিকে তালিকাভুক্ত ৩২টি ওষুধের মধ্যে ২২টির দাম কমানো হয়েছে
এগুলোর মধ্যে রয়েছে—

  • গ্যাস্ট্রিকের অ্যান্টাসিড
  • প্যারাসিটামল
  • সালবিউটামল
  • অ্যালবেনডাজল
  • ক্লোরামফেনিকল আই ড্রপ
  • মেটফর্মিন

গ্রামীণ এলাকায় এই দাম কমানোর প্রভাব সবচেয়ে বেশি পড়বে, কারণ এখানকার সাধারণ মানুষ সরকারি বা স্বল্পমূল্যের ওষুধের ওপরই বেশি নির্ভর করেন।

স্বাস্থ্যখাতে সম্ভাব্য প্রভাব

ওষুধের দাম কমায়—

  • নিম্ন আয়ের মানুষ সাশ্রয়ী মূল্যে প্রয়োজনীয় চিকিৎসা পাবেন
  • সরকারি হাসপাতাল ও গ্রামীণ ক্লিনিকের ওপর চাপ কমবে
  • ভুয়া বা নকল ওষুধের বাজার কিছুটা সংকুচিত হতে পারে
  • স্বাস্থ্যসেবার মান উন্নত হবে

বিশেষজ্ঞদের মতে, বাংলাদেশের জনস্বাস্থ্যের ক্ষেত্রে এটি একটি পজিটিভ টার্নিং পয়েন্ট হতে পারে, যদি এই নীতি ধারাবাহিকভাবে বাস্তবায়ন করা হয়।

সামনের লক্ষ্য: সব ওষুধের দাম কমানো

সামাদ মৃধা আরও জানান—

“আগামী ৬ মাসের মধ্যে আরও কিছু ওষুধের দাম কমানো হবে। যদি এই ব্যয় সংকোচন ও কাঁচামাল ক্রয়ের নতুন ব্যবস্থা বজায় থাকে, তবে ধাপে ধাপে সব ধরনের ওষুধের দাম কমানো সম্ভব।”

তিনি বলেন, আন্তর্জাতিক মান বজায় রেখে উৎপাদন বাড়ানো এবং সরকারি ওষুধ সরবরাহে স্বচ্ছতা আনার দিকেও কাজ চলছে।

ওষুধ সিন্ডিকেট ভাঙার গুরুত্ব

বাংলাদেশের ওষুধ বাজারে দীর্ঘদিন ধরেই সিন্ডিকেটের প্রভাব রয়েছে। কিছু বড় সরবরাহকারী কাঁচামাল ও উৎপাদন খরচ নিয়ন্ত্রণ করে বাজারদর প্রভাবিত করে থাকে। সিন্ডিকেট ভাঙার মাধ্যমে—

  • অযৌক্তিক মূল্যবৃদ্ধি রোধ হবে
  • প্রতিযোগিতামূলক বাজার সৃষ্টি হবে
  • ভোক্তা সরাসরি উপকৃত হবেন

জনসাধারণের প্রতিক্রিয়া

সংবাদ প্রকাশের পর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে অনেকেই ইডিসিএল-এর এই পদক্ষেপকে স্বাগত জানিয়েছেন।

  • অনেকে বলেছেন, এটি সাধারণ মানুষের জন্য বড় স্বস্তির খবর
  • কেউ কেউ মন্তব্য করেছেন, দাম কমানো হলেও বাজারে সরবরাহ ঠিক রাখতে হবে
  • গ্রামীণ অঞ্চলের মানুষ আশা করছেন, দ্রুত এই ওষুধগুলো স্থানীয় স্বাস্থ্যকেন্দ্রে পৌঁছাবে

৩৩টি প্রয়োজনীয় ওষুধের দাম কমানো বাংলাদেশের স্বাস্থ্য খাতে একটি ইতিবাচক পরিবর্তনের সূচনা করেছে। যদি আগামী ৬ মাসে এই নীতি আরও বিস্তৃতভাবে কার্যকর হয়, তবে ওষুধের উচ্চমূল্যের কারণে চিকিৎসা থেকে বঞ্চিত মানুষের সংখ্যা উল্লেখযোগ্যভাবে কমবে। তবে টেকসই ফল পেতে হলে উৎপাদন ব্যবস্থায় দক্ষতা বজায় রাখা, সিন্ডিকেট নিয়ন্ত্রণ এবং বাজারে পর্যাপ্ত সরবরাহ নিশ্চিত করাই হবে প্রধান চ্যালেঞ্জ।

MAH – 12300 ,  Signalbd.com

মন্তব্য করুন
Advertisement

Related Articles

Back to top button