রেমিট্যান্সে সুখবর: জুলাই মাসে প্রবাসীদের পাঠানো অর্থ ছাড়াল ৩০ হাজার কোটি টাকা

বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২০২৫ সালের জুলাই মাসে ২৪৮ কোটি মার্কিন ডলার রেমিট্যান্স দেশে এসেছে। প্রতি ডলার ১২২ টাকা হিসেবে এর পরিমাণ দাঁড়ায় প্রায় ৩০ হাজার ২৩০ কোটি টাকা। গত বছরের জুলাই মাসে দেশে এসেছিল ১৯১ কোটি মার্কিন ডলার। অর্থাৎ, গত বছরের তুলনায় ২৯ দশমিক ৪৮ শতাংশ বেশি রেমিট্যান্স এসেছে।
কেন রেমিট্যান্স বেড়েছে?
রেমিট্যান্স বৃদ্ধির পেছনে কয়েকটি মূল কারণ রয়েছে।
প্রথমত, রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা ফেরার পর প্রবাসীরা আবার ব্যাংকিং চ্যানেলের মাধ্যমে টাকা পাঠানো বাড়িয়ে দিয়েছেন।
দ্বিতীয়ত, হুন্ডি প্রতিরোধে সরকারের কঠোর পদক্ষেপ এবং প্রণোদনা দেওয়ার নীতিমালা রেমিট্যান্স বাড়াতে ভূমিকা রেখেছে।
তৃতীয়ত, রেমিট্যান্সে ২.৫ শতাংশ নগদ প্রণোদনা এবং ব্যাংকিং সেবার উন্নতি প্রবাসীদের উৎসাহিত করছে।
গত বছরের তুলনায় বৃদ্ধি
২০২৪ সালের জুলাই মাসে প্রবাসীরা পাঠিয়েছিলেন ১৯১ কোটি মার্কিন ডলার। তখন রাজনৈতিক অস্থিরতার কারণে অনেক প্রবাসী অনানুষ্ঠানিক পথে টাকা পাঠানো থেকে বিরত ছিলেন। এই বছর পরিস্থিতি উন্নত হওয়ায় প্রবাসী আয় আবার বেড়ে যায়। ফলে, গত বছরের তুলনায় জুলাই মাসের রেমিট্যান্স প্রবাহ প্রায় ৫৭ কোটি মার্কিন ডলার বেড়েছে।
অর্থনীতিতে প্রভাব
বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তাদের মতে, এই রেমিট্যান্স দেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ শক্তিশালী করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে। স্থিতিশীল রেমিট্যান্স প্রবাহে ডলারের সরবরাহ বৃদ্ধি পাওয়ায় আমদানি খাতে চাপ কমে। একইসঙ্গে রেমিট্যান্স দেশের অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা বজায় রাখতে সহায়তা করে এবং গ্রামীণ অর্থনীতিতে সরাসরি প্রভাব ফেলে।
পূর্ববর্তী মাসের চিত্র
২০২৫ সালের জুন মাসে দেশে ২৮২ কোটি মার্কিন ডলার রেমিট্যান্স এসেছিল। যা আগের বছরের জুন মাসের তুলনায় ১১ শতাংশ বেশি। এই ধারাবাহিক বৃদ্ধি দেশের জন্য ইতিবাচক ইঙ্গিত বহন করছে।
বিগত অর্থবছরের অর্জন
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, ২০২৪-২৫ অর্থবছরের শেষে দেশে ৩০ দশমিক ৩৩ বিলিয়ন মার্কিন ডলার রেমিট্যান্স এসেছে, যা আগের অর্থবছরের তুলনায় প্রায় ২৭ শতাংশ বেশি। ২০২৩-২৪ অর্থবছরে এই সংখ্যা ছিল ২৩ দশমিক ৭৪ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। এটি এক অর্থবছরে দেশের ইতিহাসে সর্বোচ্চ রেমিট্যান্স প্রবাহ।
বিশেষজ্ঞদের মত
অর্থনৈতিক বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, রেমিট্যান্স প্রবাহে এই উল্লম্ফন দেশের অর্থনীতিতে স্বস্তি এনে দিয়েছে। বিদেশি মুদ্রার জোগান বৃদ্ধি পাওয়ায় বাজারে ডলার সংকট কিছুটা হলেও কমবে। তবে তারা সতর্ক করেছেন যে, এই ধারা বজায় রাখতে হলে ব্যাংকিং সেবার মান আরও উন্নত করা এবং প্রবাসীদের জন্য প্রণোদনা চালিয়ে যাওয়া প্রয়োজন।
সারসংক্ষেপ
নতুন অর্থবছরের শুরুতেই রেমিট্যান্স প্রবাহে বড় ধরনের উত্থান ঘটিয়েছে প্রবাসী বাংলাদেশিরা। ২০২৫-২৬ অর্থবছরের প্রথম মাস জুলাইয়ে তারা পাঠিয়েছেন ২৪৮ কোটি মার্কিন ডলার, যা বাংলাদেশি মুদ্রায় প্রায় ৩০ হাজার ২৩০ কোটি টাকা। বাংলাদেশ ব্যাংকের হালনাগাদ প্রতিবেদনে এই তথ্য উঠে এসেছে। গত বছরের একই সময়ের তুলনায় এ প্রবাহ প্রায় ২৯ শতাংশ বেশি।
প্রবাসী আয়ের ধারাবাহিক এই বৃদ্ধি বাংলাদেশের জন্য সুখবর। নতুন অর্থবছরের শুরুতেই এই ধারা বজায় থাকলে দেশের অর্থনীতিতে স্থিতিশীলতা বাড়বে। আগামী মাসগুলোতে রেমিট্যান্সের প্রবাহ ধরে রাখা গেলে দেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ আরও শক্তিশালী হবে বলে আশা করা হচ্ছে।
এম আর এম – ০৬৬৫, Signalbd.com