অর্থনীতি

যে পাঁচটি কোম্পানির শেয়ারের দাম সবচেয়ে বেশি কমল

আজ মঙ্গলবার দেশের প্রধান পুঁজিবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) শেয়ার লেনদেনের সময়সূচি শেষে দেখা গেছে, বেশকিছু কোম্পানির শেয়ারদামে বড় ধরনের পতন হয়েছে। বাজার বিশ্লেষকদের মতে, সামগ্রিকভাবে বাজারে কিছুটা মন্দাভাব বিরাজ করলেও কিছু কোম্পানির আর্থিক ফলাফল, লভ্যাংশ ইতিহাস ও বাজারে বিশ্বাসযোগ্যতা হ্রাস পাওয়ায় তাদের শেয়ারদামে উল্লেখযোগ্য হারে পতন ঘটেছে।

ডিএসইর ওয়েবসাইটে প্রকাশিত সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, আজ মোট লেনদেন হয়েছে ৩১৩ কোটি ৬ লাখ ২৩ হাজার টাকার শেয়ার। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি দর হারানো পাঁচটি কোম্পানিকে ঘিরেই বিনিয়োগকারীদের মধ্যে উদ্বেগ দেখা গেছে। নিচে বিস্তারিতভাবে উপস্থাপন করা হলো আজকের সবচেয়ে বেশি দরপতনের শিকার হওয়া পাঁচটি কোম্পানির হালনাগাদ অবস্থা:

১. ইউনিয়ন ক্যাপিটাল লিমিটেড

আজকের লেনদেনে সবচেয়ে বেশি দরপতনের শিকার হয়েছে ইউনিয়ন ক্যাপিটাল লিমিটেড। প্রতিষ্ঠানটির শেয়ারের দাম কমেছে ৬ দশমিক ৯৭ শতাংশ। সোমবার দিন শেষে যার মূল্য ছিল ৪ দশমিক ৩০ টাকা, তা আজ কমে দাঁড়িয়েছে ৪ টাকাতে।

ইউনিয়ন ক্যাপিটাল একটি নন-ব্যাংকিং আর্থিক প্রতিষ্ঠান (এনবিএফআই) হিসেবে পরিচিত। বিগত কয়েক বছর ধরে প্রতিষ্ঠানটি আর্থিক সংকটে রয়েছে এবং বাজারে তাদের স্বচ্ছতা নিয়েও প্রশ্ন রয়েছে। সর্বশেষ ২০১৮ সালে প্রতিষ্ঠানটি ৫ শতাংশ স্টক লভ্যাংশ প্রদান করেছিল। এরপর থেকে কোনো ধরনের নগদ বা স্টক লভ্যাংশ ঘোষণা না করায় বিনিয়োগকারীদের আস্থা হ্রাস পেয়েছে।

পুঁজিবাজার বিশ্লেষকদের মতে, কোম্পানিটির ঋণ ব্যবস্থাপনা, আয় প্রবণতা এবং পরিচালনা পর্ষদের স্বচ্ছতার অভাব এই দরপতনের মূল কারণ।

২. নূরানী ডাইং অ্যান্ড সোয়েটার লিমিটেড

দ্বিতীয় সর্বোচ্চ দরপতনের তালিকায় রয়েছে নূরানী ডাইং অ্যান্ড সোয়েটার। এই কোম্পানির শেয়ারদাম আজ ৬ দশমিক ৪৫ শতাংশ কমে দাঁড়িয়েছে ২ দশমিক ৯ টাকা। আগের দিন এই দর ছিল ৩ দশমিক ১ টাকা।

গার্মেন্টস ও টেক্সটাইল খাতে তালিকাভুক্ত এই কোম্পানিটি অনেকদিন ধরেই উৎপাদন ও রপ্তানির ক্ষেত্রে প্রতিযোগিতামূলক অবস্থানে নেই। তাদের সর্বশেষ নগদ লভ্যাংশ ছিল ২০১৮ সালে এবং সর্বশেষ স্টক লভ্যাংশ ছিল ২০২০ সালে। এরপর কোম্পানিটি কোনও ধরনের লভ্যাংশ দেয়নি।

এমনকি বাজারে কোম্পানির ব্যবসায়িক গতিশীলতা নিয়েও একধরনের ধোঁয়াশা বিরাজ করছে। লভ্যাংশ স্থবিরতা ও কম রপ্তানি অর্ডার এই দরপতনের পেছনে বড় ভূমিকা রেখেছে।

৩. আইসিবি এএমসিএল সেকেন্ড মিউচুয়াল ফান্ড

তৃতীয় অবস্থানে রয়েছে আইসিবি এএমসিএল সেকেন্ড মিউচুয়াল ফান্ড। এটির দরপতন হয়েছে ৬ দশমিক ২৫ শতাংশ। মিউচুয়াল ফান্ডটি বাংলাদেশ ইনভেস্টমেন্ট কর্পোরেশন (আইসিবি)-এর অধীন একটি অ্যাসেট ম্যানেজমেন্ট ফান্ড।

এই ফান্ডের শেয়ারদর হ্রাসের মূল কারণ হিসেবে বিশ্লেষকরা বলছেন, গত কয়েক বছরে মিউচুয়াল ফান্ডগুলোর প্রতি বিনিয়োগকারীদের আগ্রহ হ্রাস পেয়েছে। যদিও প্রতিষ্ঠানটি ধারাবাহিকভাবে লভ্যাংশ দিয়েছে – ২০২১ সালে ৮ শতাংশ, ২০২২ সালে ৬ শতাংশ এবং ২০২৩ সালে ৩ শতাংশ – তবুও গত দুই বছরে এর রিটার্ন কমে গেছে। পাশাপাশি দেশের সামগ্রিক বিনিয়োগ জলবায়ুতে অনিশ্চয়তা থাকায় মিউচুয়াল ফান্ডে আগ্রহ কমেছে।

. ভ্যানগার্ড এএমএল রূপালী ব্যাংক ব্যালান্সড ফান্ড

দরপতনের দিক থেকে চতুর্থ অবস্থানে রয়েছে ভ্যানগার্ড এএমএল রূপালী ব্যাংক ব্যালান্সড ফান্ড। আজকের লেনদেনে এর দর কমেছে ৫ শতাংশ। গতকাল যেখানে এর দাম ছিল ৬ টাকা, আজ তা কমে হয়েছে ৫ দশমিক ৭ টাকা

এই ফান্ডটি সাধারণ বিনিয়োগকারীদের কাছে খুব বেশি পরিচিত না হওয়ায় এর প্রতি আগ্রহ তুলনামূলকভাবে কম। যদিও প্রতিষ্ঠানটি ২০২৩ সালে ০.৮ শতাংশ, ২০২১ সালে ১০ শতাংশ এবং ২০২০ সালে ১.৬ শতাংশ নগদ লভ্যাংশ দিয়েছে, বর্তমান বাজার পরিস্থিতিতে এসব ফান্ডের কার্যকারিতা ও রিটার্ন নিয়ে বিনিয়োগকারীদের আস্থাহীনতা বেড়েছে।

ফান্ডটির আর্থিক প্রতিবেদন ও পোর্টফোলিও বিন্যাসে আরও স্বচ্ছতা আনলে ভবিষ্যতে এটি আবার বাজারে ফিরে আসতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

৫. আলিফ ম্যানুফ্যাকচারিং কোম্পানি লিমিটেড

পঞ্চম সর্বোচ্চ দরপতনের শিকার হয়েছে আলিফ ম্যানুফ্যাকচারিং কোম্পানি লিমিটেড। আজ এর শেয়ারদর ৪ দশমিক ৯১ শতাংশ কমে হয়েছে ৫ দশমিক ৮ টাকা, যা আগের দিন ছিল ৬ দশমিক ১ টাকা।

এই কোম্পানিটি ২০২৪ ও ২০২৩ সালে ১ শতাংশ করে এবং ২০২২ সালে ২ শতাংশ নগদ লভ্যাংশ দিয়েছে। তুলনামূলকভাবে লভ্যাংশের হার কম হওয়ায় বাজারে প্রতিষ্ঠানটির প্রতিযোগিতা ও বিশ্বাসযোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।

গার্মেন্টস খাতে আলিফ একটি পুরোনো নাম হলেও, সাম্প্রতিক সময়ে এর উৎপাদন ও রপ্তানি সক্ষমতা কমেছে বলে ধারণা করা হয়। একই সঙ্গে কোম্পানির পরিচালনা পর্ষদের দক্ষতা ও উন্নয়ন পরিকল্পনার ঘাটতি শেয়ারমূল্য পতনের একটি কারণ বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।

বাজার বিশ্লেষণ ও সামগ্রিক পরিস্থিতি

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সামগ্রিকভাবে পুঁজিবাজারে স্থিতিশীলতা ফিরিয়ে আনতে হলে বিনিয়োগকারীদের আস্থা অর্জনের উদ্যোগ নিতে হবে। বিশেষ করে কোম্পানিগুলোর সুশাসন, আর্থিক স্বচ্ছতা এবং নিয়মিত লভ্যাংশ প্রদান বিনিয়োগকারীদের মধ্যে ইতিবাচক বার্তা পাঠাতে পারে।

আজকের দরপতনই প্রমাণ করে, স্বল্প ও দীর্ঘমেয়াদি বিনিয়োগের জন্য বিনিয়োগকারীদের আরও সচেতন হতে হবে। শুধুমাত্র কম দামে শেয়ার কিনে লাভের আশায় থাকা নয়, বরং কোম্পানির মৌলিক শক্তি, আর্থিক প্রতিবেদন এবং পরিচালনার সক্ষমতার ওপর ভিত্তি করে বিনিয়োগের সিদ্ধান্ত নেওয়া উচিত।

মন্তব্য করুন

Related Articles

Back to top button