অর্থনীতি

বাণিজ্য উত্তেজনার প্রভাবে বৈশ্বিক প্রবৃদ্ধি কমবে: বিশ্বব্যাংক

জুনের শুরুতেই প্রকাশিত হয়েছে বিশ্বব্যাংকের ‘গ্লোবাল ইকোনমিক প্রসস্পেক্টস (Global Economic Prospects)’ প্রতিবেদন, যেখানে ২০২৫ সালের বৈশ্বিক জিডিপি প্রবৃদ্ধি পূর্বাভাস ২.৭% থেকে কমিয়ে ২.৩% করা হয়েছে। প্রতিবেদনটিতে সবচেয়ে বড় কারণ হিসেবে অভিহিত হয়েছে বাণিজ্য উত্তেজনা ও উর্ধ্বমুখী শুল্ক আরোপ, যা প্রায় ৭০% অর্থনীতির পূর্বাভাস খর্ব করেছে।

বিশ্বব্যাংক জানায়, চলতি বছরে বিশ্বব্যাপী বাণিজ্য বৃদ্ধির হারও মাত্র ১.৮% এ চলে আসবে, এবং গ্লোবাল ইনফ্লেশন থাকবে আনুমানিক ২.৯%। যদিও সামগ্রিক মন্দার আশঙ্কা ১০% এর নিচে রয়েছে, তবু “সবচেয়ে ধীর গতির পুনরুদ্ধার” পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে।

প্রতিবেদন সংক্ষিপ্তসার

  • বৃদ্ধি পূর্বাভাস: ২০২৫ সালে ২.৩% (গত জানুয়ারিতে ছিল ২.৭%)।
  • বিশ্বের ৭০% দেশে পূর্বাভাস খর্ব—উন্নত, উদীয়মান ও উন্নয়নশীল সব অর্থনীতিতে হ্রাস।
  • ব্যাপক শুল্ক আরোপ ও হতাশাজনক বিনিয়োগ—ব্যবসায় অনিশ্চয়তা বেড়ে যেতে দেখা গেছে ।
  • মন্দার আশঙ্কা: রিস্ক <১০%; তবে প্রবৃদ্ধির গতি ২০০৮ ব্যতীত সর্বনিম্ন।
  • ২০২৭ পর্যন্ত গড় প্রবৃদ্ধি: মাত্র ২.৫%, যা ১৯৬০-এর দশকের পরকার সবচেয়ে ধীরতম তালিকা ।

প্রধান বাধাগুলি

  1. মার্কিন শুল্ক নীতি:
    • প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের অধীনে মূল শুল্কহার বেড়ে দ্বিশতাশতকর (১০%+) এ পৌঁছেছে, যা গত শতাব্দীতে অনন্য।
    • এতে যুক্তরাষ্ট্র-চীন সহ অন্যান্য দেশেও ‘শুল্ক প্রতিশোধ’ নীতি দেখা গেছে।
  2. নীতি-অনিশ্চয়তা:
    • বিশ্বব্যাংক বলেছে, “বর্ধিত নীতি অনিশ্চয়তা বিনিয়োগ ও ব্যবসায় আত্মবিশ্বাস কমিয়ে দিচ্ছে” ।
    • উন্নয়নশীল দেশে বিদেশি সরাসরি বিনিয়োগ (FDI) কমছে।
  3. অবসন্মরণ ও আবহাওয়া ঝুঁকি:
    • জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব, বিভিন্ন দেশের দুর্গতিতে অর্থনৈতিক পুনর্বাসন ব্যাহত হচ্ছে।
    • কৃষি ও কাঁচামালের মূল্য অস্থিরতা থেকে খাদ্য নিরাপত্তায় চাপ।

প্রধান অর্থনীতির প্রক্ষেপণ

  • যুক্তরাষ্ট্র: ২০২৫ প্রবৃদ্ধি মাত্র ১.৪%, যা ২০২৪ এর অর্ধেক মাত্রা।
  • চীন: ৪.৫% বৃদ্ধি, ন্যূনতম নীতি সমর্থন ছাড়া আরও কমতে পারত।
  • ইউরোপীয় ইউনিয়ন: মাত্র ০.৭% – অভ্যন্তরীণ চাহিদা সন্দেহজনক হওয়ার আশঙ্কা।
  • ভারত: ৬.৩%, দ্রুততম বড় অর্থনীতি থাকলেও আগের পূর্বাভাসের তুলনায় কিছুটা ধীর।
  • জাপান: ০.৭% – স্থবির প্রবৃদ্ধি অব্যাহত ।
  • উদীয়মান ও উন্নয়নশীল অর্থনীতি (EMDE): গড়ে ৩.৮%, তবে অধিকাংশ দরিদ্র রাষ্ট্রের জন্য সংকট গুরুতর।

উদীয়মান বাজার ও উন্নয়নশীল অর্থনীতিতে প্রভাব

বিশ্বব্যাংক উল্লেখ করেছে, EMDE-গুলিতে উচ্চ বাণিজ্য ব্যত্যয় এবং অতিমাত্রায় শুল্ক আরোপ দুর্বল বাজারে বিনিয়োগ ও কর্মসংস্থান সৃষ্টি বাধাগ্রস্ত করছে । উন্নয়নশীল দেশে ঋণসুবিধা সংকট, মুদ্রানীতি কঠোরতা ও বিদেশি বিনিয়োগ কমে যাওয়া—এসব মিলিয়ে দারিদ্র্যহ্রাসের লক্ষ্যে পৌঁছানো কঠিন হয়ে উঠছে।

ভবিষ্যৎ প্রেক্ষাপট

  • ২০২৬ ও ২০২৭: “নরম পুনরুদ্ধার” দিয়ে পরিস্থিতি কতটা সহজ হবে সন্দেহজনক; গড় প্রবৃদ্ধি থাকার সম্ভাবনা মাত্র ২.৫% ।
  • কর ও নীতি সমন্বয়: বিশ্বব্যাংক সুপারিশ করেছে—শুল্ক হ্রাস, বাণিজ্য দরজা খোলা, বৈশ্বিক বিনিয়োগ উৎসাহ, এবং জলবায়ু-সংশ্লিষ্ট বিনিয়োগে উৎসাহ ‍দান করা ‌উচিৎ।
  • বিনিয়োগ ও অবকাঠামো: স্থিতিশীল উন্নয়ন ও প্রযুক্তিতে বিনিয়োগ বৃদ্ধির ওপর আরও জোর দিতে হবে।

বাংলাদেশের জন্য বিষয়বস্তু

যদিও প্রতিবেদন সরাসরি বাংলাদেশ উল্লেখ করেনি, আমাদের অর্থনীতির জন্য নিম্নস্থিতিকে সুযোগ হিসেবেও গ্রহণ করা যেতে পারে—

  • রপ্তানিতে সুযোগ: বিশ্ববাণিজ্য কমলেও উৎপাদন ব্যয় কমানো, নতুন বাজারে প্রবেশের মাধ্যমে রপ্তানি বাড়ানো সম্ভব।
  • বিদেশি বিনিয়োগ: নীতি স্থিতিশীলতা বজায় রেখে-বিনিয়োগকারী আস্থা অর্জন করলে FDI আকৃষ্ট করা যাবে।
  • অবকাঠামো উন্নয়ন: সরকারি ও বেসরকারি অংশীদারিত্বে দ্রুত অবকাঠামো উন্নয়ন কর্মসূচি ত্বরান্বিত করলে দীর্ঘমেয়াদী প্রবৃদ্ধি নিশ্চিত হবে।

বিশ্বব্যাংকের সাম্প্রতিক ‘গ্লোবাল ইকোনমিক প্রসস্পেক্টস’ প্রতিবেদনে বাণিজ্য উত্তেজনা ও শুল্ক আরোপকে প্রধান হুমকি হিসেবে উল্লখ্য করা হয়েছে, যা ২০২৫ সালে মাত্র ২.৩% প্রবৃদ্ধির পূর্বাভাস নিয়ে এসেছে । নীতি অনিশ্চয়তা, আবহাওয়া ঝুঁকি, এবং বিনিয়োগ সংকোචন—এসব মিলে বিশ্বকে ২০০৮ সালের পর দ্বিতীয়বার এক “শিথিল পুনরুদ্ধার” পর্যায়ে নিয়ে এসেছে। দ্রুত নীতি সমন্বয়, শুল্ক হ্রাস ও বৈশ্বিক সহযোগিতা প্রতিটি রাষ্ট্রের জন্য এখন যুগান্তকারী চ্যালেঞ্জ।

বাংলাদেশের মতো উন্নয়নশীল দেশে এই চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় উদ্ভাবনী নীতি, উচ্চমানের অবকাঠামো, ও বৈশ্বিক বাজারে প্রবেশ—এসবই হবে পথনির্দেশক। Signalbd.com আপনাদের সঙ্গে থাকবে অর্থনৈতিক বিশ্লেষণ ও লাইভ আপডেটের জন্য।

মন্তব্য করুন

Related Articles

Back to top button