দেশের সব কর অঞ্চল মিলিয়ে মোট ১৫,৪৯৪ জন করদাতার ২০২৩-২৪ কর বছরের আয়কর রিটার্ন র্যান্ডম সিলেকশন পদ্ধতিতে নিরীক্ষার জন্য নির্বাচন করা হয়েছে। জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) আধুনিক ও স্বচ্ছ পদ্ধতিতে এই নির্বাচন প্রক্রিয়া চালু করেছে, যা করদাতাদের আয়কর রিটার্ন নিরীক্ষায় ন্যায়সঙ্গত ও নিরপেক্ষতা নিশ্চিত করবে।
এনবিআরের অডিট প্রক্রিয়া: স্বচ্ছতা ও আধুনিকায়নের অগ্রযাত্রা
জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) জনসংযোগ কর্মকর্তা মো. আল আমিন শেখ আজ বুধবার একটি প্রেস বিবৃতিতে জানান, ২০২৩-২৪ কর বছরের করদাতাদের আয়কর রিটার্ন নিরীক্ষার জন্য র্যান্ডম সিলেকশন পদ্ধতি অবলম্বন করা হয়েছে। এতে দেশের সকল কর অঞ্চল থেকে নির্বাচিত করা হয়েছে ১৫,৪৯৪ জন করদাতাকে।
তিনি আরও বলেন, “এই নির্বাচন প্রক্রিয়ায় এনবিআর সম্পূর্ণ স্বয়ংক্রিয়, অর্থাৎ অটোমেটেড পদ্ধতির দিকে ধাপে ধাপে এগোচ্ছে, যা নিশ্চিত করবে নিরীক্ষায় সর্বোচ্চ স্বচ্ছতা ও নিরপেক্ষতা।” তবে, বর্তমানে পুরো প্রক্রিয়া বাস্তবায়নের জন্য প্রয়োজনীয় ডেটা ডেটাবেজে অন্তর্ভুক্ত করার জন্য কিছু সময় লাগবে। সেই কারণে, অস্থায়ীভাবে বিকল্প পদ্ধতিতে প্রতি সার্কেলের দাখিলকৃত রিটার্নের ৫ শতাংশ এলোমেলোভাবে নির্বাচন করা হয়েছে।
কারা নির্বাচিত হলেন অডিটের জন্য?
অতীতের দুই বছরের অডিট তালিকা থেকে পুনরায় নির্বাচিত হওয়ার সুযোগ বাদ দেওয়া হয়েছে। অর্থাৎ, আগের দুই বছরে যেসব করদাতার রিটার্ন নিরীক্ষায় এসেছিল, তাদের এবার বাদ দেওয়া হয়েছে। এই কৌশল নিশ্চিত করবে নতুন করদাতাদেরও নিয়মিত ও ন্যায্য অডিটের আওতায় আসার সুযোগ।
ডেটাবেজ উন্নয়ন ও ঝুঁকিভিত্তিক অডিট
এনবিআর জানায়, যত দ্রুত সম্ভব দাখিল করা কাগজে রিটার্নের সব তথ্য ডিজিটাল ডেটাবেজে অন্তর্ভুক্ত করা হবে। এরপর ঝুঁকিভিত্তিক অডিট প্রক্রিয়া অনুসরণ করে স্বয়ংক্রিয়ভাবে নিরীক্ষার জন্য করদাতারা নির্বাচিত হবেন। এতে শুধু স্বচ্ছতা নয়, করদাতাদের সঠিক মূল্যায়ন করে নির্দিষ্ট কর ফাঁকি আটকানোও সহজ হবে।
আয়কর রিটার্ন নিরীক্ষার গুরুত্ব ও করদাতাদের জন্য পরামর্শ
আয়কর রিটার্ন নিরীক্ষা হলো কর সংগ্রহে স্বচ্ছতা ও শৃঙ্খলা বজায় রাখার একটি প্রধান উপায়। নিরীক্ষার মাধ্যমে নিশ্চিত হয় করদাতারা তাদের আয়ের সঠিক বিবরণ দাখিল করেছেন কিনা এবং করের নিয়ম মেনে চলছেন কিনা। এনবিআরের এই পদক্ষেপ দেশের অর্থনীতিকে আরও শক্তিশালী করার লক্ষ্যে নেওয়া হয়েছে।
করদাতাদের জন্য বিশেষ পরামর্শ:
- সময়মতো সঠিক তথ্যসহ রিটার্ন দাখিল করুন।
- আয় ও ব্যয়ের সঠিক হিসাব রাখুন।
- প্রয়োজনীয় নথিপত্র সংরক্ষণ করুন।
- রিটার্ন ফাইল করার সময় ভুলত্রুটি এড়িয়ে চলুন।
এনবিআরের আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার ও কর সংগ্রহে অগ্রগতি
গত কয়েক বছরে এনবিআর আধুনিক প্রযুক্তি ও ডিজিটাল পদ্ধতি গ্রহণে বিশেষ গুরুত্ব দিয়েছে। ই-ফাইলিং প্ল্যাটফর্ম, অনলাইন করদাতা সেবা ও স্বয়ংক্রিয় তথ্য সংগ্রহের মাধ্যমে করদাতাদের সুবিধা বাড়ানো হয়েছে। এই স্বয়ংক্রিয় অডিট পদ্ধতি দেশের কর ব্যবস্থাকে আরও বেশি কার্যকর ও দায়বদ্ধ করে তুলবে।
দেশের কর ব্যবস্থায় আধুনিকায়নের প্রয়োজনীয়তা
বাংলাদেশে কর ব্যবস্থাকে আরও সুশৃঙ্খল ও স্বচ্ছ করতে এনবিআরের এই উদ্যোগ খুবই গুরুত্বপূর্ণ। বিশ্বব্যাপী প্রতিযোগিতামূলক অর্থনীতিতে টেকসই উন্নয়নের জন্য দরকার ন্যায়সঙ্গত ও কার্যকর কর সংগ্রহ ব্যবস্থা। এই আধুনিকায়ন করদাতাদের মধ্যে আস্থা বাড়াবে এবং সরকারি রাজস্ব সংগ্রহ বাড়াবে, যা দেশের উন্নয়ন কাজে ব্যবহার হবে।
সার্বিক প্রভাব ও ভবিষ্যতের পরিকল্পনা
জাতীয় রাজস্ব বোর্ড আশা করছে, পূর্ণ স্বয়ংক্রিয় অডিট পদ্ধতি চালু হলে:
- কর ফাঁকির পরিমাণ কমবে।
- করদাতাদের মধ্যে ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা পাবে।
- কর সংগ্রহ বৃদ্ধি পাবে।
- কর প্রশাসনের দক্ষতা বৃদ্ধি পাবে।
এনবিআর এ প্রক্রিয়া অব্যাহত রেখে ধীরে ধীরে পুরো দেশের কর অঞ্চলগুলোতে এই পদ্ধতি কার্যকর করবে।



