অর্থনীতি

ভোজ্যতেল সংকট ১০ দিনের মধ্যে দূর হবে: বাণিজ্য উপদেষ্টা

বাংলাদেশের বাজারে চলমান ভোজ্যতেলের ঘাটতি আগামী ৭ থেকে ১০ দিনের মধ্যে দূর হবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন বাণিজ্য উপদেষ্টা শেখ বশিরউদ্দীন। তিনি বলেন, রমজানের বাজারকে স্থিতিশীল রাখতে সরকার সব ধরনের ব্যবস্থা গ্রহণ করছে।

ভোজ্যতেলের ঘাটতির মূল কারণ

বুধবার (১২ ফেব্রুয়ারি) সচিবালয়ে নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে বেক্সিমকো ইন্ডাস্ট্রিয়াল পার্কের শিল্পপ্রতিষ্ঠানের বর্তমান শ্রম পরিস্থিতি নিয়ে এক সভা শেষে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে বাণিজ্য উপদেষ্টা তেলের সংকট ও বাজার পরিস্থিতি নিয়ে বক্তব্য দেন।

তিনি বলেন, ‘বর্তমানে বৈশ্বিক সরবরাহ চেইনে কিছু সমস্যা দেখা দিয়েছে, যা আমাদের বাজারেও প্রভাব ফেলেছে। সরবরাহ সংকটের কারণে কিছু ব্যবসায়ীরা দাম বাড়িয়ে দিচ্ছেন, তবে আমরা বিষয়টি পর্যবেক্ষণ করছি এবং নিয়ন্ত্রণের জন্য দ্রুত ব্যবস্থা নিচ্ছি।’

সরকারের উদ্যোগ ও পদক্ষেপ

বাণিজ্য উপদেষ্টা জানান, ভোজ্যতেলের আমদানি ও সরবরাহ স্বাভাবিক করতে সরকার বেশ কিছু জরুরি ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে। এর মধ্যে রয়েছে:

  • বিশেষ আমদানি সুবিধা: তেলের সহজ সরবরাহ নিশ্চিত করতে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় দ্রুত আমদানি অনুমোদন দিচ্ছে।
  • বন্দর কার্যক্রম দ্রুততর করা: আমদানিকৃত পণ্য দ্রুত খালাসের জন্য কাস্টমস ও বন্দর কর্তৃপক্ষকে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
  • বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের তদারকি: বাজারে কৃত্রিম সংকট তৈরি না হয়, সে বিষয়ে কঠোর নজরদারি করা হচ্ছে।
  • ট্রেডিং কর্পোরেশন অব বাংলাদেশ (টিসিবি) এর মাধ্যমে সরবরাহ বৃদ্ধি: সাধারণ ভোক্তাদের জন্য টিসিবি স্বল্পমূল্যে ভোজ্যতেল সরবরাহ অব্যাহত রেখেছে।

তেলের দাম ও বাজার পরিস্থিতি

বাজারে তেলের সংকট থাকায় অতিরিক্ত দাম নেয়ার বিষয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে বাণিজ্য উপদেষ্টা বলেন, ‘বর্তমানে রমজানের জন্য বিভিন্ন নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের সরবরাহ স্বাভাবিক রয়েছে। ছোলা, খেজুর, ডাল, চিনি ইত্যাদির ক্ষেত্রে কোনো সংকট নেই। তবে তেলের ক্ষেত্রে সাময়িক সমস্যা তৈরি হয়েছে, যা আগামী ৭ থেকে ১০ দিনের মধ্যে সমাধান হবে।’

তিনি আরও বলেন, সরকার ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর ও প্রশাসনের সহযোগিতায় বাজার নিয়ন্ত্রণে কাজ করছে। বাজারে কেউ কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি করলে তার বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

ব্যবসায়ীদের প্রতিশ্রুতি

সরকারের আশ্বাসের পাশাপাশি ব্যবসায়ীরাও জানিয়েছেন, আগামী কয়েকদিনের মধ্যেই বাজারে পর্যাপ্ত পরিমাণে তেল সরবরাহ নিশ্চিত করা হবে। বাংলাদেশ ভোজ্যতেল ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি জানান, আন্তর্জাতিক বাজারে তেলের মূল্য কিছুটা বেড়েছে, তবে সরকার প্রদত্ত নীতিগত সহায়তার ফলে দ্রুতই সংকট নিরসন হবে।

তিনি বলেন, ‘আমরা আমাদের সদস্যদের নির্দেশ দিয়েছি যাতে কেউ অতিরিক্ত মজুত না করে এবং ভোক্তাদের ন্যায্য মূল্যে পণ্য সরবরাহ নিশ্চিত করা হয়।’

ভোক্তাদের করণীয়

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সাময়িক এ সংকট নিয়ে আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই। তারা ভোক্তাদের অহেতুক অতিরিক্ত কেনাকাটা না করার পরামর্শ দিয়েছেন, কারণ এতে সংকট আরও বাড়তে পারে। পাশাপাশি, বাজার তদারকি প্রতিষ্ঠানগুলোরও উচিত পরিস্থিতি নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করা।

উপসংহার

সরকার ও ব্যবসায়ীদের পক্ষ থেকে দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণের ফলে ভোজ্যতেলের বাজার শিগগিরই স্থিতিশীল হবে বলে আশা করা হচ্ছে। বাজার নিয়ন্ত্রণে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হলে এবং সরবরাহ নিশ্চিত করা হলে সাধারণ ভোক্তারা স্বস্তি ফিরে পাবেন।

মন্তব্য করুন

Related Articles

Back to top button