চলতি নভেম্বর মাসের প্রথম পাঁচ দিনে দেশে রেমিট্যান্স এসেছে ৫৮ কোটি ৪০ লাখ মার্কিন ডলার। অর্থাৎ প্রতিদিন গড়ে দেশে এসেছে ১১ কোটি ৬৮ লাখ ডলার প্রবাসী আয়। বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, গত বছরের একই সময়ে এই আয় ছিল ৪২ কোটি ১০ লাখ ডলার, যা থেকে বোঝা যাচ্ছে রেমিট্যান্স প্রবাহে এবার উল্লেখযোগ্য বৃদ্ধি ঘটেছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্যে প্রবাসী আয়ের উল্লম্ফন
বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র আরিফ হোসেন খান জানান, নভেম্বরের প্রথম ৫ দিনে দেশে রেমিট্যান্স এসেছে ৫৮ কোটি ৪০ লাখ ডলার। তিনি বলেন, “শুধু ৫ নভেম্বর একদিনেই প্রবাসীরা পাঠিয়েছেন ১২ কোটি ৩০ লাখ মার্কিন ডলার, যা চলতি অর্থবছরে এক দিনের সর্বোচ্চ রেমিট্যান্স।”
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্যে আরও দেখা যায়, চলতি অর্থবছরের (জুলাই–নভেম্বর) প্রথম দেড় মাসে দেশে এসেছে ১ হাজার ৭৩ কোটি ৩০ লাখ ডলার রেমিট্যান্স। গত অর্থবছরের একই সময়ে এ আয় ছিল প্রায় ৯৩৫ কোটি ডলার। অর্থাৎ বছরওয়ারি প্রবৃদ্ধি দাঁড়িয়েছে প্রায় ১৪ দশমিক ৭০ শতাংশ।
আগের মাসগুলোর তুলনায় ঊর্ধ্বমুখী প্রবণতা
রেমিট্যান্সের ধারাবাহিক প্রবাহে দেখা যাচ্ছে, অক্টোবর মাসে দেশে এসেছে ২৫৬ কোটি ৩৪ লাখ ৮০ হাজার মার্কিন ডলার। সেপ্টেম্বর মাসে এই অঙ্ক ছিল আরও বেশি—২৬৮ কোটি ৫৮ লাখ ৮০ হাজার ডলার।
আগস্টে প্রবাসীরা পাঠিয়েছিলেন ২৪২ কোটি ১৮ লাখ ৯০ হাজার ডলার, আর জুলাই মাসে এসেছিল ২৪৭ কোটি ৮০ লাখ ডলার। এই ধারা বজায় থাকলে নভেম্বর মাস শেষে রেমিট্যান্স নতুন রেকর্ড ছুঁতে পারে বলে আশা করছেন অর্থনীতিবিদরা।
পূর্ববর্তী অর্থবছরের প্রবাসী আয়ের রেকর্ড
২০২৪–২৫ অর্থবছরে প্রবাসীরা দেশে পাঠিয়েছেন ৩০ দশমিক ৩২ বিলিয়ন মার্কিন ডলার, যা দেশের ইতিহাসে এক অর্থবছরে সর্বোচ্চ প্রবাসী আয়ের রেকর্ড। আগের অর্থবছরে (২০২৩–২৪) এই আয় ছিল ২৪ দশমিক ৭৭ বিলিয়ন ডলার।
বিশ্লেষকদের মতে, বৈধ চ্যানেল ব্যবহার করে দেশে অর্থ পাঠানোর প্রতি প্রবাসীদের আগ্রহ বৃদ্ধি, ব্যাংকগুলোর প্রণোদনা এবং হুন্ডি দমনে সরকারের কঠোর নজরদারি—এই তিনটি কারণে রেমিট্যান্স প্রবাহে ইতিবাচক প্রভাব পড়েছে।
প্রবাসী আয়ের প্রবাহে ব্যাংক প্রণোদনার ভূমিকা
বিভিন্ন বেসরকারি ও সরকারি ব্যাংক প্রবাসীদের জন্য বাড়তি ইনসেনটিভ ঘোষণা করেছে, যা রেমিট্যান্সে প্রবৃদ্ধি আনতে সাহায্য করেছে। বর্তমানে সরকার প্রবাসীদের পাঠানো টাকার ওপর ২ দশমিক ৫ শতাংশ হারে প্রণোদনা দিচ্ছে।
একটি রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা বলেন, “প্রণোদনার পাশাপাশি এখন ডিজিটাল ব্যাংকিংয়ের সুযোগও বেড়েছে। ফলে মধ্যপ্রাচ্য ও মালয়েশিয়ার প্রবাসীরা সহজেই মোবাইল অ্যাপ বা অনলাইন ট্রান্সফারের মাধ্যমে অর্থ পাঠাতে পারছেন।”
বৈদেশিক আয়ের প্রভাব ও অর্থনীতিতে গুরুত্ব
রেমিট্যান্স বাংলাদেশের বৈদেশিক মুদ্রা রিজার্ভ ধরে রাখার অন্যতম প্রধান উৎস। বর্তমানে বৈদেশিক রিজার্ভ দাঁড়িয়েছে প্রায় ২৮ বিলিয়ন ডলারে, যেখানে রেমিট্যান্স প্রবাহ স্থিতিশীল থাকা দেশের অর্থনীতির জন্য অত্যন্ত ইতিবাচক খবর।
অর্থনীতিবিদ ড. মাহবুবুর রহমান বলেন, “প্রবাসী আয় কেবল বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভই বাড়ায় না, গ্রামীণ অর্থনীতিতেও এর বড় প্রভাব রয়েছে। এই অর্থ দিয়ে পরিবারগুলো ভোগব্যয়, শিক্ষা, স্বাস্থ্য এবং আবাসন খাতে ব্যয় করে থাকে।”
ভবিষ্যৎ প্রবণতা ও সম্ভাবনা
বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, চলতি অর্থবছরেও রেমিট্যান্স প্রবাহ বাড়তে থাকবে। মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোতে বাংলাদেশি শ্রমিকদের নতুন চাহিদা তৈরি হয়েছে, বিশেষ করে সৌদি আরব, কুয়েত ও ওমানের শ্রমবাজারে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তারা আশা করছেন, নভেম্বর ও ডিসেম্বর মাসে প্রবাসী আয় আরও বাড়বে, কারণ বছরের শেষ প্রান্তিকে অনেকে পরিবারের জন্য অতিরিক্ত অর্থ পাঠান। তারা মনে করেন, “এই ধারা অব্যাহত থাকলে চলতি অর্থবছর শেষে রেমিট্যান্স আবারও নতুন উচ্চতায় পৌঁছাবে।”
নভেম্বরের প্রথম পাঁচ দিনে ৫৮ কোটি ডলারের রেমিট্যান্স প্রাপ্তি বাংলাদেশের অর্থনীতির জন্য ইতিবাচক বার্তা বহন করছে। চলতি ধারা অব্যাহত থাকলে বছর শেষে প্রবাসী আয় আগের রেকর্ড ছাড়িয়ে যেতে পারে বলে আশাবাদী সংশ্লিষ্টরা। প্রবাসী আয়ের প্রবাহ শুধু বৈদেশিক রিজার্ভ শক্তিশালী করছে না, বরং দেশের সার্বিক অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতাও বজায় রাখতে সহায়ক ভূমিকা রাখছে।
এম আর এম – ২১১৭,Signalbd.com



