আঞ্চলিক

৫ বন্ধু মিলে মাসব্যাপী স্কুলছাত্রীকে ধর্ষণ, অসুস্থ হওয়ায় জানাজানি ঘটনা

Advertisement

বান্দরবানের রুমা উপজেলায় পঞ্চম শ্রেণির এক স্কুলছাত্রীকে গত এক মাস ধরে পাঁচ বন্ধু ভয়ভীতি দেখিয়ে ধর্ষণ করেছে। শিশুটি অসুস্থ হয়ে পড়ার পর বিষয়টি তার পরিবার জানতে পারে। পুলিশ ইতোমধ্যে তিন অভিযুক্তকে আটক করেছে।

বিস্তারিত

বান্দরবানের রুমা উপজেলায় একটি ভয়াবহ ধর্ষণ কাণ্ড প্রকাশ পেয়েছে। উপজেলার পাইন্দু ইউনিয়নের আলেচু পাড়ার পঞ্চম শ্রেণির এক স্কুলছাত্রীকে গত এক মাস ধরে পাঁচজন যুবক নিয়মিত ভয়ভীতি দেখিয়ে ধর্ষণ করে আসছিল। প্রথমে একজন বন্ধু ধর্ষণ করে বিষয়টি অন্যদের জানায়। এরপর তারা মিলে একসাথে এই শিশুকে ধর্ষণ করে।

শিশুটি অসুস্থ হয়ে পড়ার পর পরিবারের কাছে বিষয়টি জানায়। এরপর স্থানীয় সামাজিক বিচার শুরু হলেও তা গ্রহণযোগ্য মনে হয়নি। অভিযুক্তদের জরিমানা করা হয় এবং পরে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বিষয়টি ছড়িয়ে পড়ায় স্থানীয়রা পুলিশের হস্তক্ষেপ চায়।

অভিযুক্তদের পরিচয় ও পুলিশি ব্যবস্থা

পুলিশ অভিযান চালিয়ে অভিযুক্ত পাঁচজনের মধ্যে তিনজনকে আটক করেছে। আটকের নাম হলো:

  • ক্যহ্লাওয়াং মারমা (৩০)
  • উহাইসিং মারমা (২২)
  • ক্যসাইওয়াং মারমা (২৩)

অন্য দুই অভিযুক্ত হলো চহাই মার্মা (২০) এবং ক্যওয়াংসাই মার্মা (২০)। পুলিশ জানিয়েছে, অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের প্রক্রিয়া চলছে।

বান্দরবানের পুলিশ সুপার মো. শহিদুল্লাহ কাওছার বলেন, “ঘটনা সম্পর্কে খবর পাওয়ার পর রাতেই অভিযান চালানো হয়। তিনজনকে আটক করা হয়েছে এবং বাকি দুইজনকে আটক করার চেষ্টা চলছে।”

ভুক্তভোগীর চিকিৎসা ও পরিবারের প্রতিক্রিয়া

শিশুটিকে চিকিৎসার জন্য রুমা উপজেলা থেকে বান্দরবান সদর হাসপাতালে নেয়া হয়েছে। পরিবার জানায়, তারা খুবই ব্যথিত এবং আশা করে দ্রুত ন্যায়বিচার হবে। শিশুটির শারীরিক ও মানসিক অবস্থার উন্নতির জন্য স্থানীয় প্রশাসন এবং চিকিৎসকরা মনোযোগীভাবে কাজ করছেন।

পরিবারের বক্তব্য অনুযায়ী, “আমরা চাই এই ধরনের ঘটনার পুনরাবৃত্তি যেন না ঘটে। আমাদের শিশুটি নিরাপদে থাকুক এবং অভিযুক্তরা দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি পাক।”

সামাজিক প্রতিক্রিয়া ও বিচার প্রক্রিয়া

ঘটনাটি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ার পর স্থানীয় মানুষ ও netizens এই ঘটনার নিন্দা করেছেন। পাইন্দু মৌজার হেডম্যান মংচউ মারমা ও স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা গংবাসে মার্মা প্রথমে সামাজিকভাবে অভিযুক্তদের জরিমানা করে ছেড়ে দেয়। কিন্তু স্থানীয়রা পরে দাবি করেন অভিযুক্তদের আটক ও দৃষ্টান্তমূলক বিচার করা হোক।

স্থানীয়রা মনে করেন, “শিশুর নিরাপত্তা এবং ন্যায়বিচার নিশ্চিত করা জরুরি, নয়তো সমাজে অপরাধ প্রবণতা বৃদ্ধি পাবে।”

বান্দরবানে শিশুদের উপর যৌন নিপীড়ন ও ধর্ষণের ঘটনা নতুন নয়। এর আগে বিভিন্ন সময়ে শিশুকন্যাদের উপর বিভিন্ন আক্রমণের খবর প্রকাশিত হয়েছে। সামাজিক ও প্রশাসনিক ব্যবস্থা প্রায়শই সময়মতো কার্যকর হয়নি। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, আইন এবং সামাজিক বিচার প্রক্রিয়ার মধ্যে সমন্বয় ঘটাতে হবে, যাতে এই ধরনের ভয়াবহ ঘটনার পুনরাবৃত্তি রোধ করা যায়।

বিশ্লেষণ ও বিশেষজ্ঞ মতামত

শিশু অধিকার সংরক্ষণ কেন্দ্রের এক কর্মকর্তা বলেন, “শিশুদের নিরাপত্তা নিশ্চিতে স্থানীয় প্রশাসন ও পুলিশি তৎপরতা অপরিহার্য। শিশুর মানসিক ও শারীরিক সুস্থতার জন্য দ্রুত ও কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়া জরুরি।”

বিশ্লেষকরা মনে করেন, সামাজিক বিচার প্রক্রিয়ায় ন্যায়বিচার না হলে এই ধরনের অপরাধের পুনরাবৃত্তি ঘটতে পারে। তাই সরকার এবং স্থানীয় প্রশাসনকে আরও সক্রিয় ভূমিকা নিতে হবে।

শেষ কথা 

বান্দরবানের রুমা উপজেলায় ঘটে যাওয়া এই ঘটনা সমাজের জন্য একটি গুরুতর সতর্কবার্তা। শিশুদের নিরাপত্তা ও ন্যায়বিচার নিশ্চিত করা এখন প্রধান চ্যালেঞ্জ। স্থানীয় প্রশাসন ও পুলিশি ব্যবস্থা দ্রুত কার্যকর হলে ভবিষ্যতে এই ধরনের ভয়াবহ ঘটনা রোধ করা সম্ভব।

বিশ্লেষকরা প্রশ্ন করছেন, “এই ঘটনার পর পুলিশ ও প্রশাসন কতটা কার্যকরভাবে অভিযুক্তদের শাস্তি দিতে পারবে, এবং শিশুর নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে পারবে?”

এম আর এম – ০৯৫৯, Signalbd.com

মন্তব্য করুন
Advertisement

Related Articles

Back to top button