বিশ্বের সবচেয়ে ধনী ১০ ক্রিকেটার | ক্রিকেটারদের সম্পদ

বিশ্বজুড়ে ক্রিকেট শুধু একটি খেলা নয়, এটি আজ কোটি কোটি ডলারের ব্যবসায় পরিণত হয়েছে। এই খেলার শীর্ষ তারকাদের আয়ও সীমাহীন, যাদের সফল ক্যারিয়ার ও ব্র্যান্ড ভ্যালু তাদেরকে করেছে বিরাট সম্পদের মালিক। মাঠের বাইরের ব্যবসায়িক বুদ্ধিমত্তা এবং বিজ্ঞাপন চুক্তির মাধ্যমে তারা আয় করছেন কোটি কোটি টাকা।
ভারতের অন্যতম শীর্ষ সংবাদমাধ্যম ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বিশ্বের ১০ ধনী ক্রিকেটারের তালিকা প্রকাশ করেছে, যাদের আয়, সম্পদ ও ব্যবসায়িক উদ্যোগ পরিসংখ্যান অত্যন্ত চমকপ্রদ। নিচে সেই তথ্যাদি বিস্তারিতভাবে তুলে ধরা হলো —
১. শচীন টেন্ডুলকার (ভারত)
সম্পদের পরিমাণ: ১৭ কোটি মার্কিন ডলার
‘ক্রিকেটের ঈশ্বর’ হিসেবে পরিচিত শচীন টেন্ডুলকার আন্তর্জাতিক ক্রিকেট থেকে অবসর নেওয়ার পরও ব্যবসায়িক দুনিয়ায় একনাগাড়ে অগ্রসর। ক্রিকেটে ১০০টি শতক করার একমাত্র খেলোয়াড় তিনি, যিনি ৩৪,০০০-এর বেশি রান করেছেন। খেলোয়াড় জীবনের পাশাপাশি অ্যাডিডাস, পেপসি, এমআরএফ, লুমিনাস ও ক্যাস্ট্রলসহ বিশাল ব্র্যান্ডের সঙ্গে চুক্তি করেছেন।
ব্যবসায় তাঁর হাত অনেকদূর গিয়েছে — পোশাক ব্র্যান্ড ‘ট্রু ব্লু’, স্পোর্টস ম্যানেজমেন্ট প্রতিষ্ঠান ‘এসআরটি’, ফিটনেস ব্র্যান্ড ‘এস ড্রাইভ অ্যান্ড সাচ’সহ তিনি মালিকানায় যুক্ত। এছাড়া কেরালা ব্লাস্টার্স ফুটবল ক্লাবের অন্যতম মালিক হিসেবে তিনি খেলাধুলায় বিনিয়োগ চালিয়ে যাচ্ছেন।
২. মহেন্দ্র সিং ধোনি (ভারত)
সম্পদের পরিমাণ: ১২.৫০ কোটি মার্কিন ডলার
ভারতের দুটি বিশ্বকাপ জয়ী অধিনায়ক, ধোনি ক্রিকেট থেকে ২০১৯ সালে বিদায় নিলেও আইপিএল ও বিভিন্ন ব্র্যান্ডে তার উপস্থিতি এখনও প্রবল। টিভিএস, রেড বাস, সনি, স্নিকার্স, গালফ অয়েল, ওরিয়েন্টসহ অসংখ্য ব্র্যান্ডের মুখ তিনি।
ধোনির ব্যবসায়িক সফলতার তালিকায় রয়েছে চেন্নাইয়ান এফসি (আইএসএল) মালিকানা, সুপারবাইক রেসিং টিম ‘মাহি রেসিং টিম ইন্ডিয়া’, ফিনটেক স্টার্টআপ ‘খাতাবুক’, ড্রোন প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান ‘গারুদা অ্যারোস্পেস’ ও ফিটনেস চেইন ‘স্পোর্টফিট ওয়ার্ল্ড’। মুম্বাই, পুনে, দুবাই ও রাঁচিতে রয়েছে তার ব্যতিক্রমী সম্পত্তি।
৩. বিরাট কোহলি (ভারত)
সম্পদের পরিমাণ: ৯.২০ কোটি মার্কিন ডলার
ভারতের ক্রিকেটের বর্তমান যুগের প্রধান মুখ বিরাট কোহলি। টেস্ট ও টি-টোয়েন্টি ছেড়ে গেলেও ওয়ানডেতে এখনও সক্রিয় তিনি। রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স বেঙ্গালুরুর হয়ে বড় আয় ছাড়াও পুমা, অডি, কোলগেট, এমআরএফসহ বিশ্বের শীর্ষ ব্র্যান্ডের সঙ্গে চুক্তি রয়েছে কোহলির।
‘ওয়ান৮’ ফ্যাশন ব্র্যান্ড ও ‘স্টেপথলন কিডস’ ফিটনেস প্রজেক্ট, তরুণদের ফ্যাশন ব্র্যান্ড ‘ডব্লিআরওজিএন’ ও রেস্তোরাঁ ‘নুয়েভা’–র মালিকানা কোহলির।
৪. রিকি পন্টিং (অস্ট্রেলিয়া)
সম্পদের পরিমাণ: ৭ কোটি মার্কিন ডলার
অস্ট্রেলিয়ার সাবেক অধিনায়ক, ২০০৩ ও ২০০৭ বিশ্বকাপ জয়ী পন্টিং আজ কোচিং ও ধারাভাষ্যে যুক্ত। অ্যাডিডাস, রেক্সোনা, কুকাবুরার ব্র্যান্ড এ্যাম্বাসেডর তিনি। ‘পন্টিং ওয়াইন’ নামে নিজের ওয়াইন ব্যবসায় বিনিয়োগ আছে। আবাসন খাতেও রয়েছে তার উল্লেখযোগ্য সম্পদ।
৫. ব্রায়ান লারা (ওয়েস্ট ইন্ডিজ)
সম্পদের পরিমাণ: ৬ কোটি মার্কিন ডলার
টেস্ট ক্রিকেটে এক ইনিংসে ৪০০ রানের রেকর্ডধারী লারা অবসর নেওয়ার পর কোচিং, ধারাভাষ্য এবং ব্র্যান্ড এমবেসেডর হিসেবে সক্রিয়। এমআরএফ, অ্যাঙ্গোস্তুরা ও স্ট্যানমোরের সঙ্গে যুক্ত লারা গলফ কোর্স ডিজাইন ও আবাসন খাতেও বিনিয়োগ করেছেন।
৬. শেন ওয়ার্ন (অস্ট্রেলিয়া)
সম্পদের পরিমাণ: ৫ কোটি মার্কিন ডলার
লেগ স্পিনের কিংবদন্তি শেন ওয়ার্ন ২০২৩ সালে প্রয়াত হলেও তার ব্যবসায়িক উদ্যোগ যেমন ‘সেভেনজিরোএইট’ জিন ডিস্টিলারি, হ্যান্ড স্যানিটাইজার উৎপাদন, অ্যাডভান্সড হেয়ার স্টুডিওস ও আবাসন খাতে বিনিয়োগ আজও স্মরণীয়।
৭. জ্যাক ক্যালিস (দক্ষিণ আফ্রিকা)
সম্পদের পরিমাণ: ৪.৮ কোটি মার্কিন ডলার
প্রখ্যাত অলরাউন্ডার ক্যালিস কোচিং, ধারাভাষ্য ও মিউনিখ রি-ইনস্যুরেন্স ব্যবসায় যুক্ত। ‘অ্যাডভান্সড হেয়ার স্টুডিও’ ও টেইলরমেড গলফের সঙ্গেও তার বিনিয়োগ আছে।
৮. ক্রিস গেইল (ওয়েস্ট ইন্ডিজ)
সম্পদের পরিমাণ: ৪.৫ কোটি মার্কিন ডলার
‘টি-টোয়েন্টির ফেরিওয়ালা’ খ্যাত ক্রিস গেইল টি-টোয়েন্টি থেকে অবসর নিলেও ভার্চুয়াল গেমিং প্ল্যাটফর্ম ‘আইওনা এন্টারটেইনমেন্ট’, স্টার্টআপ ‘ফ্লিপএআর’, ‘ক্রিস গেইল কালেকশন’ পোশাক ব্র্যান্ড ও ‘ট্রিপল সেঞ্চুরি’ বার ও রেস্তোরাঁর মালিক।
৯. বীরেন্দর শেবাগ (ভারত)
সম্পদের পরিমাণ: ৪ কোটি মার্কিন ডলার
ভারতের প্রাক্তন ওপেনার শেবাগ ‘ভিএস বাই শেবাগ’ পোশাক ও ক্রিকেট সরঞ্জাম ব্র্যান্ড, ‘শেবাগ ইন্টারন্যাশনাল স্কুল’ ও ধারাভাষ্য কাজে ব্যস্ত। তার আয় ব্যবসা থেকে প্রধানত।
১০. শেন ওয়াটসন (অস্ট্রেলিয়া)
সম্পদের পরিমাণ: ৪ কোটি মার্কিন ডলার
অস্ট্রেলিয়ার সাবেক এই ক্রিকেটার এখন যুক্তরাষ্ট্রের মেজর লিগ ক্রিকেট দলের কোচ এবং ধারাভাষ্যকার। ‘টি২০ স্পোর্টস’ ক্রিকেট সরঞ্জাম নির্মাতা প্রতিষ্ঠানের সহমালিক ছিলেন।
বিশ্বসেরা ক্রিকেটারদের ব্যবসায়িক বুদ্ধিমত্তা ও ধনী হওয়ার কারণ
মাঠে পারফরম্যান্সের পাশাপাশি বিজ্ঞাপন, ব্র্যান্ড অ্যান্ড লাইফস্টাইল ব্যবসা, রিয়েল এস্টেট, বিনিয়োগ, স্টার্টআপ ও স্পোর্টস ক্লাব মালিকানা— এসব মিলিয়ে ক্রিকেটাররা অর্জন করছেন বিশাল সম্পদ। তাঁদের ক্যারিয়ার শেষে ধারাভাষ্য, কোচিং ও বিশ্লেষকের ভূমিকাও একটি বড় আয়ের উৎস।
বিশ্বের ক্রিকেট ভক্তরা শুধু তাদের খেলার ওপরই নজর রাখেন না, বরং তাঁদের ব্যবসায়িক সাফল্যও সমানভাবে অনুসরণ করেন। ধনী ক্রিকেটারদের তালিকা থেকে স্পষ্ট যে, ক্রিকেট শুধু খেলা নয়, এটি আধুনিক যুগের ব্যবসায়িক শক্তিরও প্রতীক।