সস্তা হাওয়াই চপ্পল ও স্যান্ডেলে ১৫% ভ্যাট প্রত্যাহারের দাবি

বাংলাদেশ পাদুকা প্রস্তুতকারক সমিতি সম্প্রতি ঢাকায় ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে (ডিআরইউ) এক সংবাদ সম্মেলনে বাংলাদেশের কম দামের হাওয়াই চপ্পল ও স্যান্ডেল ও জুতার ওপর আরোপিত ১৫ শতাংশ মূল্য সংযোজন কর (ভ্যাট) প্রত্যাহারের জোর দাবি জানিয়েছে।
সমিতির নেতারা জানিয়েছেন, ১৫০ টাকা পর্যন্ত মূল্যের প্লাস্টিক ও রাবারের তৈরি এসব জুতায় ভ্যাট আরোপের ফলে স্থানীয় ক্ষুদ্র ও মাঝারি ব্যবসায়ীরা চাপে পড়েছেন। এতে কম আয়ের মানুষের জন্য প্রয়োজনীয় ও সাশ্রয়ী এসব পণ্যের দাম বেড়ে গেছে এবং দেশের ক্ষুদ্র পাদুকা শিল্পের ধ্বস নেমেছে।
ভ্যাট আরোপের নেতিবাচক প্রভাব ও ব্যবসায়ীদের উদ্বেগ
২০১৬ সাল থেকে সরকার প্লাস্টিক ও রাবারের তৈরি হাওয়াই চপ্পল ও স্যান্ডেলে মূসক (ভ্যাট) অব্যাহতি দিয়ে আসছিল। এতে কম দামের এই পণ্যগুলোর উৎপাদন ব্যয় কমে গেলে নিম্ন আয়ের মানুষের কাছে এগুলো সহজলভ্য হয়। কিন্তু চলতি অর্থবছরের মাঝামাঝি সময়ে (২০২৪-২৫ সালের ৯ জানুয়ারি) জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) একটি এসআরও জারি করে এই ভ্যাট অব্যাহতি তুলে নেয়। পরবর্তীতে ২০২৫-২৬ অর্থবছরের বাজেটেও এই ভ্যাট রাখা হয়েছে।
ব্যবসায়ীরা জানান, ভ্যাট আরোপের পর থেকে প্লাস্টিক ও রাবারের তৈরি সাশ্রয়ী চপ্পল ও জুতার উৎপাদন কমে গেছে। এর ফলে অনেক ক্ষুদ্র কারখানা বন্ধ হওয়ার পথে। তারা বলছেন, বিদেশি পণ্যের আমদানি বৃদ্ধি পেয়েছে, যা দেশের বৈদেশিক মুদ্রার অপচয় ঘটাচ্ছে এবং স্থানীয় শিল্পের ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে।
ক্ষুদ্র শিল্পের জন্য বিশেষ গুরুত্ব এবং পরিবেশগত প্রভাব
বাংলাদেশ পাদুকা প্রস্তুতকারক সমিতির সভাপতি হাজী মোহাম্মদ ফজলু সংবাদ সম্মেলনে বলেন, “হাওয়াই চপ্পল ও জুতার কাঁচামাল মূলত পরিত্যক্ত রাবার, প্লাস্টিক ও পলিথিনজাতীয় অপচনশীল দ্রব্য যা পুনর্ব্যবহার করা হয়। ভ্যাট আরোপের ফলে উৎপাদনের ব্যয় বেড়ে গেছে, যা ক্ষুদ্র ও মাঝারি উদ্যোক্তাদের জন্য এক বড় বাধা।”
তিনি আরও বলেন, “এই পণ্যের মূল গ্রাহকরা হলেন শ্রমজীবী মানুষ, দিনমজুর, কৃষক, রিকশা-ভ্যান চালক ও প্রান্তিক জনগোষ্ঠী। ভ্যাটের কারণে দাম বাড়ায় তাদের জীবনযাত্রায় বিরূপ প্রভাব পড়ছে।”
সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে হাজী মোহাম্মদ ফজলু বলেন, “বাংলাদেশের মতো উন্নয়নশীল দেশে এসব সাশ্রয়ী পণ্যভোগীদের জন্য মূসক অব্যাহতি থাকা দরকার। প্রতিবেশী ভারতেও ৫০০ টাকা পর্যন্ত মূল্যের এসব পণ্যের ওপর মূসক অব্যাহতি রয়েছে।”
আইন উপদেষ্টা ব্যারিস্টার মো. তাইফুল সিরাজের বক্তব্য
সমিতির আইন উপদেষ্টা ব্যারিস্টার মো. তাইফুল সিরাজ লিখিত বক্তব্যে বলেন, “প্লাস্টিক ও রাবারের তৈরি হাওয়াই চপ্পল ও জুতার ওপর ১৫ শতাংশ ভ্যাট আরোপের প্রস্তাব অযৌক্তিক। এর ফলে এই সাশ্রয়ী পণ্যগুলো সাধারণ মানুষের ক্রয়ক্ষমতার বাইরে চলে যাবে।”
তিনি সরকারের প্রতি অনুরোধ জানান, “২০১৬ সাল থেকে ভ্যাট অব্যাহতির ফলে সরাসরি পণ্যের উৎপাদন খরচ উল্লেখযোগ্যভাবে কমে গিয়েছিল। সাধারণ ভোক্তারা এই সুবিধা উপভোগ করছিলেন। তাই এই ভ্যাট অব্যাহতি সুবিধা পুনর্বহাল করা উচিত।”
সংবাদ সম্মেলনের পর মানববন্ধন
সংবাদ সম্মেলনের পর বাংলাদেশ পাদুকা প্রস্তুতকারক সমিতির নেতারা ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির সামনে মানববন্ধনও আয়োজন করেন। সেখানে তারা সরকারের কাছে দ্রুত এই ভ্যাট প্রত্যাহারের দাবি জানান এবং স্থানীয় পাদুকা শিল্পকে বাঁচানোর জন্য কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণের আহ্বান জানান।
প্রভাব ও আগামীর করণীয়
বৃহত্তর অর্থনীতির দিক থেকে এই ভ্যাট আরোপের কারণে শুধু ক্ষুদ্র শিল্পই নয়, দেশের সামগ্রিক কর্মসংস্থানেও নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে। কারখানা বন্ধ হয়ে গেলে হাজার হাজার শ্রমিক কর্মহীন হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
বাংলাদেশের জন্য প্রয়োজন এই খাতের জন্য বিশেষ প্যাকেজ ও কর সুবিধা, যাতে দেশের ক্ষুদ্র শিল্প গড়ে উঠতে পারে এবং বাজারে প্রতিযোগিতায় টিকে থাকতে পারে। একই সঙ্গে পরিবেশ রক্ষার জন্য পুনর্ব্যবহারযোগ্য কাঁচামালের ব্যবহার বাড়ানো প্রয়োজন।
সমিতির নেতাদের দাবি সংক্ষেপে
- ১৫০ টাকা পর্যন্ত দামের প্লাস্টিক ও রাবারের তৈরি হাওয়াই চপ্পল ও জুতায় ১৫% ভ্যাট প্রত্যাহার করা হোক।
- ভ্যাট অব্যাহতি সুবিধা পুনর্বহাল করা হোক।
- স্থানীয় ক্ষুদ্র ও মাঝারি পাদুকা শিল্পকে সরকারী সহায়তা প্রদান করা হোক।
- বিদেশি পণ্যের আমদানি কমাতে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করা হোক।
- পরিবেশবান্ধব পুনর্ব্যবহারযোগ্য কাঁচামালের ব্যবহার বাড়ানো হোক।
বাংলাদেশ পাদুকা প্রস্তুতকারক সমিতির সভাপতি হাজী মোহাম্মদ ফজলু, সহসভাপতি আশরাফ উদ্দিন, সচিব ইমরুল কায়েস ও সদস্য জাহেরুল ইসলাম উপস্থিত ছিলেন সংবাদ সম্মেলনে।