বিশ্ব

ইসরায়েলি হামলায় গাজায় নিহত ১১৬ ফিলিস্তিনি, তাণ্ডব থামছে না

ইসরায়েলের বর্বরোচিত বিমান ও ড্রোন হামলায় আজ শনিবার গাজা ও আশপাশের এলাকায় আরও অন্তত ১১৬ জন ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। এই নিহতের সংখ্যা প্রতিনিয়ত বৃদ্ধি পাচ্ছে। একই সাথে শতাধিক মানুষ আহত হয়েছেন। হামলার পরিমাণ এতটাই ভয়াবহ যে আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থাগুলো উদ্বেগ প্রকাশ করেছে এবং অবিলম্বে সন্ত্রাসবিরোধী অভিযান বন্ধের দাবি জানিয়েছে।

ত্রাণকেন্দ্রে হামলা: মানবতার বিরুদ্ধে অপকর্ম

গাজার দক্ষিণাঞ্চলীয় রাফা এলাকায় অবস্থিত এক ত্রাণকেন্দ্রে হাজার হাজার মানুষ সাহায্যের অপেক্ষায় ছিল। কিন্তু হঠাৎ করেই ইসরায়েলি ডিফেন্স ফোর্স (আইডিএফ) নির্বিচারে গুলি বর্ষণ করে এই মানুষগুলোর উপর। এতে অন্তত ৩৮ জন নিহত হয়, যাদের মধ্যে নারী ও শিশুরাও রয়েছে। এই হামলা মানবাধিকার লঙ্ঘনের গুরুতর ঘটনা হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে।

ড্রোন হামলা ও বন্দর এলাকায় সংকট

তাল আল-হাওয়া এলাকায় ইসরায়েলি বিমান বাহিনী বিমান হামলা চালায়, যেখানে অন্তত ৫ জন প্রাণ হারায়। এছাড়াও, দক্ষিণাঞ্চলের এক তাঁবুতে ড্রোন হামলা চালিয়ে আরও অনেক ফিলিস্তিনি আহত হয়। এই ধরনের হামলা সাধারণ মানুষের জীবন বিপন্ন করে এবং মানবিক সংকট আরও গভীর করে তুলেছে।

রামাল্লায় গ্রাম অভিযান: টিয়ার গ্যাসে আক্রান্ত শতাধিক

রামাল্লার কাছাকাছি একটি গ্রামে ইসরায়েলি বাহিনী অভিযান চালায়। এ সময় টিয়ার গ্যাস ছুড়ার ফলে সেখানে শতাধিক মানুষ আহত হয়। স্থানীয়রা জানায়, গ্রামবাসীরা শান্তিপূর্ণ প্রতিবাদ করছিল, কিন্তু আইডিএফের কঠোর দমনপীড়ন তাদের উপর অতিরিক্ত চাপ সৃষ্টি করেছে।

বাড়ি-ঘর নির্মাণাধীন স্থানে গুলি: আতঙ্ক ছড়িয়েছে

নেতানিয়াহুর নেতৃত্বাধীন ইসরায়েলি বাহিনী একটি নির্মাণাধীন বাড়িকে লক্ষ্য করে গুলি ছোড়ে, যেখানে ফিলিস্তিনি পরিবার বাস করার জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছিল। এটি স্থানীয়দের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়েছে এবং নিরাপত্তাহীনতার পরিস্থিতি আরও গভীর করেছে।

জেলেদের ওপর হামলা: জীবনযাত্রায় বিরূপ প্রভাব

গাজার বন্দর এলাকায় মাছ ধরার সময় তিনজন ফিলিস্তিনি জেলেকে ইসরায়েলি বাহিনী আটক করে নিয়ে যায়। এর ফলে স্থানীয় জেলেদের জীবিকা নির্বাহের পথ বন্ধ হয়ে গেছে। গাজার অর্থনৈতিক অবস্থা ইতিমধ্যেই সংকটাপন্ন, সেখানে এই ধরণের হামলা জীবন-জীবিকার ওপর বিরূপ প্রভাব ফেলছে।

হাসপাতালে মৃত্যু: খাদ্যের অভাব ও চিকিৎসার সংকট

গাজার বৃহত্তম হাসপাতাল আল-শিফা-তে খাদ্যের অভাবে আরও দুইজন ফিলিস্তিনি মারা গেছেন। তাদের মধ্যে একজন ৩৫ দিন বয়সী নবজাতক শিশু রয়েছে। চিকিৎসা ও খাদ্যের ঘাটতি এ অঞ্চলের মানুষদের দুর্দশা আরও বাড়িয়ে দিয়েছে। হাসপাতালগুলো সংকটাপন্ন অবস্থায় রয়েছে, চিকিৎসা সরঞ্জাম, ওষুধ, এবং খাবারের অভাব মারাত্মক।

গাজার মানুষ: মানবিক বিপর্যয় ও আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংকট

গাজায় চলমান সংঘর্ষে সাধারণ মানুষ সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। দীর্ঘদিনের অবরোধ, ত্রাণ সামগ্রীর ঘাটতি, হাসপাতালের সংকট, এবং হামলায় পরিবার হারানোর মর্মান্তিক ঘটনার মধ্যে তারা প্রতিদিন যুদ্ধের মুখোমুখি হচ্ছেন।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা, জাতিসংঘ, এবং বিভিন্ন মানবাধিকার সংগঠন ইসরায়েলি হামলার নিন্দা জানিয়ে অবিলম্বে সংঘর্ষ বন্ধের আহ্বান জানিয়েছে। তারা বলছে, গাজার জনগণের জীবন ও অধিকার রক্ষা করা আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের অতি জরুরি দায়িত্ব।

ইসরায়েল-ফিলিস্তিন সংঘর্ষের পটভূমি ও আন্তর্জাতিক প্রতিক্রিয়া

ইসরায়েল ও ফিলিস্তিনের দীর্ঘদিনের বিরোধের মাঝে এই হামলার নেপথ্যে রয়েছে রাজনৈতিক এবং ভূ-রাজনৈতিক অনেক কারণ। সাম্প্রতিক সময়ে গাজায় ইসরায়েলের নিরাপত্তা বাহিনী ও হামাসের মধ্যে উত্তেজনা বৃদ্ধি পায়। এই উত্তেজনা পরিণত হয় ব্যাপক সহিংসতায়।

আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রতিক্রিয়া

যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপীয় ইউনিয়ন, আরব দেশগুলোসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সরকার ও সংগঠন এ সংঘর্ষের অবসান চায়। তারা দাবি করছে যে, সহিংসতা বন্ধ করে শান্তি প্রতিষ্ঠার জন্য নতুন আলোচনার মাধ্যমে সমস্যার সমাধান করতে হবে।

বিশ্বজুড়ে মানবাধিকার রক্ষাকারী সংগঠনগুলো নিয়মিত রিপোর্ট প্রকাশ করছে, যেখানে উল্লেখ করা হয় যে, নিরীহ জনসাধারণের ওপর হামলা আন্তর্জাতিক মানবাধিকার আইনের পরিপন্থী।

গাজার সাধারণ মানুষের জীবনযাত্রা ও ভবিষ্যৎ চিন্তা

গাজায় অবরোধ ও সংঘর্ষের কারণে শিক্ষা, স্বাস্থ্য, কর্মসংস্থান সব ক্ষেত্রেই বড় ধরনের ক্ষতি হয়েছে। শিশুরা স্কুলে যেতে পারছে না, পরিবারগুলো নিরাপদ আশ্রয়ের অভাবে অস্থির জীবনযাপন করছে। খাদ্যের অভাব এবং চিকিৎসা সংকটের কারণে মৃত্যুর হার বাড়ছে।

বিশ্বজুড়ে অনেক দেশ ও সংস্থা মানবিক সাহায্যের জন্য তহবিল গঠন করেছে, কিন্তু নিরাপত্তার অভাবে সেই সাহায্য গাজায় পৌঁছানো কঠিন হচ্ছে। সাধারণ মানুষের একমাত্র আকাঙ্ক্ষা— শান্তিতে জীবন যাপন এবং তাদের স্বাভাবিক অধিকার ফিরে পাওয়া।

শান্তির স্বপ্ন ও সংকট মোকাবেলা

গাজার মানুষ আজও যুদ্ধের ছায়ায় কাটাচ্ছে প্রতিটি দিন। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের অবিলম্বে হস্তক্ষেপ ছাড়া এই সংকটের অবসান মুশকিল। মানবিক দৃষ্টিকোণ থেকে অবরোধ তুলে নেওয়া, ত্রাণ পৌঁছানো, এবং নিরস্ত্রীকরণ নিশ্চিত করাই এখন প্রথম অগ্রাধিকার।

এই সংঘাত শুধুমাত্র একটি রাজনৈতিক সমস্যা নয়, এটি একটি মানবিক বিপর্যয়। তাই বিশ্বশান্তি ও মানবাধিকার রক্ষায় সকলে সম্মিলিতভাবে কাজ করার তাগিদ রয়েছে।

মন্তব্য করুন

Related Articles

Back to top button