আঞ্চলিক

১৪ ঘণ্টা শিথিলের পর গোপালগঞ্জে আবারও কারফিউ

Advertisement

গোপালগঞ্জে সহিংসতার প্রেক্ষাপটে ১৪ ঘণ্টা শিথিল থাকার পর ফের রাত ৮টা থেকে সকাল ৬টা পর্যন্ত কারফিউ জারি করলো প্রশাসন

বিভিন্ন এলাকায় স্বাভাবিক অবস্থা ফিরে এলেও ফের কড়া নজরে প্রশাসন

গোপালগঞ্জে জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) সমাবেশকে কেন্দ্র করে সৃষ্ট সহিংসতার জেরে গত কয়েকদিন ধরে জেলাজুড়ে চরম উত্তেজনা বিরাজ করছে। এর মধ্যেই আজ শনিবার (১৯ জুলাই) ভোর ৬টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত কারফিউ শিথিল করা হয়েছিল। তবে দিন শেষে আবারও রাত ৮টা থেকে আগামীকাল রোববার সকাল ৬টা পর্যন্ত নতুন করে কারফিউ জারি করা হয়েছে।

জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে সন্ধ্যায় এক বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে কারফিউ পুনরায় কার্যকর হওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করা হয়েছে। আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করে এ সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে বলে জানিয়েছে জেলা প্রশাসন।

ঘোষণার বিস্তারিত: কখন এবং কেন আবারও কারফিউ

আজ শনিবার বিকেলে গোপালগঞ্জ জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে জানানো হয়, জননিরাপত্তা এবং শান্তিপূর্ণ পরিবেশ রক্ষার স্বার্থে ফের রাত ৮টা থেকে কারফিউ কার্যকর করা হবে এবং তা চলবে রোববার সকাল ৬টা পর্যন্ত।

এর আগে সকাল ৬টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত মোট ১৪ ঘণ্টা কারফিউ শিথিল করা হয়েছিল, যাতে জনগণ প্রয়োজনীয় কাজ সম্পন্ন করতে পারে। তবে পরিস্থিতি পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণে না আসায় কারফিউ আবার কার্যকর করা হয়েছে।

কোথা থেকে শুরু হলো উত্তেজনা

গত বুধবার (১৭ জুলাই) গোপালগঞ্জ পৌরপার্কে এনসিপির একটি সমাবেশ শেষে ফেরার সময় একটি গাড়িবহরে হামলার ঘটনা ঘটে। এরপরই এলাকা রণক্ষেত্রে পরিণত হয়। ঘটনার জেরে ব্যাপক সংঘর্ষ, ককটেল বিস্ফোরণ, ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটে।

প্রথমে জেলা প্রশাসন ১৪৪ ধারা জারি করে। পরে পরিস্থিতি আরও উত্তপ্ত হওয়ায় বুধবার সন্ধ্যা ৬টা থেকে কারফিউ জারি করা হয়। এরপর থেকে কয়েক ধাপে কারফিউ সময়সীমা বাড়ানো ও মাঝে মাঝে শিথিল করা হচ্ছে।

কারফিউ শিথিলের পর স্বাভাবিকতা ফিরতে শুরু করে

আজ শনিবার সকাল থেকে কারফিউ শিথিলের ফলে সাধারণ মানুষ ধীরে ধীরে ঘর থেকে বের হতে শুরু করে। রাস্তায় মানুষের আনাগোনা বাড়ে, বাজার-দোকান খুলে যায় এবং সীমিত পরিসরে গণপরিবহনও চলতে দেখা যায়।

তবে প্রশাসন শুরু থেকেই সতর্ক ছিল। শহরের বিভিন্ন পয়েন্টে নিরাপত্তা বাহিনীর টহল ছিল চোখে পড়ার মতো। সকলের চলাচল ও কার্যক্রম নিবিড় পর্যবেক্ষণে রাখা হয়।

কারফিউর প্রভাব ও সাধারণ মানুষের প্রতিক্রিয়া

কারফিউর কারণে জেলার সাধারণ মানুষ চরম দুর্ভোগের মধ্যে পড়েছে। প্রতিদিনের কাজে ব্যাঘাত ঘটেছে, হাসপাতালগামী রোগী ও কর্মজীবী মানুষ নানা সমস্যায় পড়েছে। তবে অনেকে বলছেন, পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে এ ধরনের ব্যবস্থা প্রয়োজন ছিল।

এক দোকানদার বলেন, “আমরা বুঝি এখনকার সময়টা কঠিন। তবে বারবার সময় বাড়লে ব্যবসায় বড় ক্ষতি হয়ে যাচ্ছে।” অন্যদিকে এক শিক্ষার্থী জানান, “পরীক্ষার প্রস্তুতি নিচ্ছিলাম, কিন্তু ইন্টারনেট বন্ধ, সব বন্ধ। এতে মানসিক চাপ বাড়ছে।”

প্রশাসনের কৌশল ও নিরাপত্তার বাস্তবায়ন

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, গোপালগঞ্জে সহিংসতা ঠেকাতে প্রশাসন কঠোর ও দ্রুত পদক্ষেপ নিয়েছে। তবে দীর্ঘস্থায়ী কারফিউ জনজীবনের উপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে। আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর পাশাপাশি স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও গণ্যমান্য ব্যক্তিদের সমন্বয়ে শান্তিপূর্ণ সমাধান খোঁজার পরামর্শ দিয়েছেন তারা।

প্রশাসন জানিয়েছে, পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে ধাপে ধাপে কারফিউ তুলে নেওয়ার চিন্তাভাবনা করা হবে। তবে আবারও যদি অস্থিতিশীলতা দেখা দেয়, তাহলে কঠোর পদক্ষেপ নেওয়া হবে।

ঘটনার সারসংক্ষেপ ও ভবিষ্যৎ দৃষ্টিভঙ্গি

গোপালগঞ্জে এনসিপির সমাবেশকে কেন্দ্র করে সৃষ্টি হওয়া সহিংস পরিস্থিতিতে জেলাজুড়ে চরম আতঙ্ক ও অস্থিরতা বিরাজ করছে। গত কয়েক দিনে একাধিক দফায় কারফিউ জারি ও শিথিলের মাধ্যমে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখার চেষ্টা চলছে।

তবে বিশ্লেষকদের মতে, দীর্ঘমেয়াদি শান্তি নিশ্চিত করতে হলে প্রশাসনের পাশাপাশি রাজনৈতিক দলগুলোকেও দায়িত্বশীল ভূমিকা পালন করতে হবে। এখন দেখার বিষয়, পরবর্তী সময়ে পরিস্থিতি কোন দিকে মোড় নেয়।

এম আর এম – ০৪০৪, Signalbd.com

মন্তব্য করুন
Advertisement

Related Articles

Back to top button