আঞ্চলিক

সমাবেশ থেকে ফেরার পথে বিএনপি’র তিন কর্মীর মর্মান্তিক মৃত্যু

Advertisement

বাগেরহাটের রামপাল উপজেলায় সমাবেশ থেকে বাড়ি ফেরার পথে বাসচাপায় বিএনপি’র তিন কর্মী নিহত হয়েছেন। ঘটনাটি ঘটেছে খুলনা-মংলা মহাসড়কের বাবুরবাড়ি বেলাই ব্রিজ এলাকায়। নিহতরা হলেন রামপাল উপজেলার রাজনগর ইউনিয়নের বিএনপি নেতা জামির ইজাদ্দার (৫০), মিজান ব্যাপারি (৪৫) ও হরিপদ রায় (৪০)।

সমাবেশ শেষে বাড়ি ফেরার পথে মর্মান্তিক ঘটনাস্থল

স্থানীয় সূত্রের বরাত দিয়ে রামপাল থানার অফিসার্স ইনচার্জ (ওসি) মো. আতিকুর রহমান জানান, মঙ্গলবার (৪ নভেম্বর) বিকেলে বিএনপির একটি সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয় ভাগা বালুর মাঠে। সমাবেশ শেষ হওয়ার পর তিন নেতা মোটরসাইকেল যোগে বাড়ির উদ্দেশ্যে রওনা দেন।

ওসি মো. আতিকুর রহমান বলেন, “সন্ধ্যায় বাবুরবাড়ি বেলাই ব্রিজ এলাকায় পৌঁছালে দ্রুতগতির একটি বাস মোটরসাইকেলটিকে চাপা দেয়। এতে ঘটনাস্থলেই তিন আরোহী নিহত হন। বাসচালককে আটক করা হয়েছে এবং প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদ চলছে।”

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, বাসটি অত্যন্ত দ্রুতগতিতে চালিত হচ্ছিল। মোটরসাইকেল আরোহীরা সড়কে প্রবল ট্রাফিক ও দুর্ঘটনার ঝুঁকির কথা বিবেচনা করতে পারছিলেন না।

নিহতদের পরিচয় ও পরিবারিক প্রেক্ষাপট

নিহত জামির ইজাদ্দার, মিজান ব্যাপারি ও হরিপদ রায় সবাই স্থানীয় রাজনগর ইউনিয়ন বিএনপির সক্রিয় নেতা ছিলেন। তারা বিভিন্ন সামাজিক কর্মকাণ্ডে অংশগ্রহণ করতেন এবং সমাবেশে উপস্থিত ছিলেন স্থানীয় দলের নেতা ও কর্মীদের সাথে।

নিহতদের পরিবারগুলো জানিয়েছেন, সমাবেশের পর তারা মোটরসাইকেলযোগে বাড়ি ফেরার সময় দুর্ঘটনার শিকার হন। তাদের মৃত্যু এলাকায় শোকের ছায়া ফেলেছে। স্থানীয়রা জানান, “তিনজনেই জনপ্রিয় ও মেহনতী মানুষ ছিলেন। এ ধরনের মর্মান্তিক মৃত্যু পুরো কমিউনিটিতে শোকের সৃষ্টি করেছে।”

সড়ক দুর্ঘটনার প্রেক্ষাপট ও নিরাপত্তা ব্যবস্থা

খুলনা-মংলা মহাসড়কটি বাগেরহাট জেলার অন্যতম ব্যস্ত সড়ক। স্থানীয় সড়ক পরিবহন সূত্রের তথ্য অনুযায়ী, দ্রুতগতির বাস, অপরিকল্পিত গাড়ির চালনা এবং যানজট দুর্ঘটনার মূল কারণ। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সড়কে নিয়মিত পুলিশি তৎপরতা ও গতিসীমা নিয়ন্ত্রণ করা হলে এমন মর্মান্তিক দুর্ঘটনা কমানো সম্ভব।

ওসি মো. আতিকুর রহমান জানান, “আমরা সড়কে অতিরিক্ত নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করছি এবং দ্রুতগতির যানবাহন নিয়ন্ত্রণে রাখার চেষ্টা করা হচ্ছে। বাসচালক ও অন্যান্য যানবাহনের দায়িত্বশীল আচরণ নিশ্চিত করা জরুরি।”

স্থানীয়দের প্রতিক্রিয়া ও রাজনৈতিক প্রভাব

দুর্ঘটনার সংবাদ ছড়িয়ে পড়ার পর স্থানীয়রা গভীর শোক প্রকাশ করেছেন। বিএনপি নেতারা জানান, “এটি শুধু দলের জন্য নয়, পুরো এলাকায় একটি মর্মান্তিক দুর্ঘটনা। আমরা নিহতদের পরিবারকে সমবেদনা জানাচ্ছি।”

রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন, এই ধরনের দুর্ঘটনা রাজনৈতিক সমাবেশের পর রাজনৈতিক নেতাদের নিরাপত্তা ব্যবস্থাকে পুনর্বিবেচনার প্রয়োজনীয়তা ফুটিয়ে তোলে। তারা বলেন, “নেতা-কর্মীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত না হলে সমাবেশ ও গণপরিষদে উপস্থিতি ঝুঁকিপূর্ণ হতে পারে। সড়ক দুর্ঘটনা রাজনৈতিকভাবে অসাধারণ গুরুত্ব বহন করে।”

পূর্বের ঘটনা ও সড়ক দুর্ঘটনার পরিসংখ্যান

বাগেরহাট ও আশপাশের এলাকায় সড়ক দুর্ঘটনা বারবার ঘটছে। বিশেষভাবে সমাবেশ ও জনসমাগমের দিনগুলোতে দুর্ঘটনার ঝুঁকি বেড়ে যায়। বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন ও হাইওয়ে পুলিশের তথ্য অনুযায়ী, গত বছর বাগেরহাট জেলার সড়কে মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় প্রায় ২৫০ জন আহত এবং ২০ জনের মৃত্যু হয়েছে।

সড়ক বিশেষজ্ঞরা বলেন, “সড়কের যথাযথ পরিচর্যা, যানবাহনের নিয়মিত তদারকি এবং চালকদের শিক্ষিত করার মাধ্যমে দুর্ঘটনার সংখ্যা অনেকাংশে কমানো সম্ভব।”

উদাহরণ ও নিরাপত্তা পরামর্শ

বিশেষজ্ঞরা উল্লেখ করেন, সমাবেশ শেষে নেতৃত্ব ও কর্মীদের জন্য বিশেষ সড়ক নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করা উচিত। নিরাপদ রুট চিহ্নিত করা, গতি নিয়ন্ত্রণ করা এবং জরুরি যানবাহন সহায়তা নিশ্চিত করলে এমন মর্মান্তিক দুর্ঘটনা প্রতিরোধ করা সম্ভব।

একজন স্থানীয় সড়ক নিরাপত্তা কর্মকর্তা বলেন, “এ ধরনের দুর্ঘটনা প্রতিরোধে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত পুলিশ মোতায়েন করা এবং সমাবেশ শেষে নিরাপদ যানপথ তৈরি করা অত্যন্ত জরুরি।”

বাগেরহাটের রামপালে সমাবেশ থেকে ফেরার পথে তিন বিএনপি কর্মীর মর্মান্তিক মৃত্যু শুধু পরিবার নয়, পুরো সমাজে শোকের ছায়া ফেলেছে। এই দুর্ঘটনা সড়ক নিরাপত্তার গুরুত্ব এবং রাজনৈতিক নেতাদের নিরাপত্তা ব্যবস্থা পুনর্বিবেচনার প্রয়োজনীয়তাকে আবারও তুলে ধরেছে। ভবিষ্যতে এমন মর্মান্তিক পরিস্থিতি প্রতিরোধের জন্য যথাযথ পদক্ষেপ নেওয়া একান্ত জরুরি।

এম আর এম – ২০৮৮,Signalbd.com

মন্তব্য করুন
Advertisement

Related Articles

Back to top button