বিশ্ব

প্রেমিকার ফোন টানা ব্যস্ত, রাগে যে কাণ্ড ঘটালেন প্রেমিক

Advertisement

অভিমান ও রাগ থেকে মানুষ কত অদ্ভুত কাজ করতে পারে, তার আরেকটি নজির পাওয়া গেল সম্প্রতি। প্রেমিকার ফোন বারবার ব্যস্ত থাকায় রাগে বিদ্যুতের খুঁটিতে উঠে হাইটেনশন তার কেটে দেন এক যুবক। এতে প্রেমিকার গ্রামের শত শত মানুষ বিদ্যুৎবিহীন হয়ে পড়েন। ঘটনাটির ভিডিও ছড়িয়ে পড়ার পর তা নিয়ে শুরু হয়েছে তুমুল আলোচনা-সমালোচনা।

ঘটনার বিস্তারিত

ভিডিওতে দেখা যায়, হাতে লোহার কাটার যন্ত্র নিয়ে বিদ্যুতের খুঁটির ওপর উঠে পড়েন ওই তরুণ। এরপর একের পর এক হাইটেনশন তার কেটে ফেলতে থাকেন তিনি। যেকোনো সময় প্রাণঘাতী দুর্ঘটনা ঘটতে পারত। কিন্তু কোনো কিছুকেই তোয়াক্কা করেননি তিনি। নিজের ক্ষোভ প্রকাশে গোটা গ্রামের মানুষকে অন্ধকারে ফেলে দিয়েছেন।

স্থানীয় সংবাদমাধ্যমের দাবি, প্রেমিকার সঙ্গে যোগাযোগ করতে না পেরে রাগে এই কাজ করেন ওই যুবক। কারণ, ফোন বারবার ব্যস্ত টোন দিচ্ছিল।

পেছনের কারণ কী হতে পারে

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে অনেকেই নানা ব্যাখ্যা দিয়েছেন। কেউ বলেছেন, হয়তো প্রেমিকা ইচ্ছাকৃতভাবে ফোন ধরেননি। কেউ বা ধারণা করছেন, প্রেমিকা অন্য কারও সঙ্গে কথা বলছিলেন। আবার অনেকে মনে করছেন, এটি হয়তো প্রেমিক-প্রেমিকার ব্যক্তিগত বিরোধ, যা প্রকাশ পেয়েছে চরম এক অদ্ভুত আচরণের মাধ্যমে।

তবে ভিডিওটির সত্যতা ও ঘটনাস্থল কোথায় তা এখনো নিশ্চিত হওয়া যায়নি।

স্থানীয়দের দুর্ভোগ

তরুণের এই কাণ্ডে গ্রামের সাধারণ মানুষ পড়েছেন বিপাকে। বিদ্যুৎ না থাকায় বন্ধ হয়ে গেছে পানি সরবরাহ, দোকানপাট ও গৃহস্থালির কাজকর্ম। গ্রামজুড়ে হঠাৎ অন্ধকার নেমে আসায় আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে।

একজন স্থানীয় বাসিন্দা ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেছেন, “ব্যক্তিগত রাগ গোটা গ্রামে ঝালানো কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়।”

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রতিক্রিয়া

ঘটনাটি ছড়িয়ে পড়তেই নেটিজেনরা নানা মন্তব্য করতে শুরু করেন। কেউ মজা করে লিখেছেন, “প্রেমিকরা সাধারণত প্রেমে কষ্ট পেয়ে নিজেদের শিরা কাটে, এ তো গোটা গ্রামের শিরা কেটে দিল।”

অন্য এক মন্তব্যে বলা হয়েছে, “কথায় বলে প্রেমে অন্ধ। এবার দেখলাম, এর প্রেমে গোটা গ্রাম অন্ধ হয়ে গেল।”

অনেকে আবার উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন এ ধরনের কাজের মারাত্মক ঝুঁকি নিয়ে। বিদ্যুতের হাইটেনশন লাইনে হাত দিলে মুহূর্তেই প্রাণহানি ঘটতে পারত।

মতামত

মনোরোগ বিশেষজ্ঞদের মতে, এ ধরনের কাজ মানসিক ভারসাম্যহীনতার প্রতিফলন। আবেগকে নিয়ন্ত্রণ করতে না পারলেই মানুষ এমন অস্বাভাবিক কাজ করে বসে। তারা মনে করেন, তরুণ সমাজকে সচেতন করা জরুরি, যেন সম্পর্কের টানাপোড়েন কখনোই সামাজিক সমস্যা সৃষ্টি না করে।

একজন বিশেষজ্ঞ বলেন, “যুবক-যুবতীদের মধ্যে প্রেমের সম্পর্কে মানসিক চাপ বেড়ে গেলে সেটি ব্যক্তিগত সীমার মধ্যে না থেকে সমাজেও প্রভাব ফেলে। এজন্য মানসিক স্বাস্থ্যসেবায় সহজ প্রবেশাধিকার থাকা প্রয়োজন।”

আগে এমন ঘটনা ঘটেছে কি?

এমন অদ্ভুত কাণ্ড এটাই প্রথম নয়। কয়েক মাস আগে ভারতের বিহারে প্রেমিকার সঙ্গে ঝগড়ার জেরে এক তরুণ পুরো সেতুতে আগুন লাগিয়ে দেন। আবার বাংলাদেশেও প্রেমঘটিত কারণে আত্মহত্যা ও অস্বাভাবিক ঘটনার খবর মাঝেমধ্যে পাওয়া যায়। তবে বিদ্যুতের তার কেটে পুরো গ্রামকে সমস্যায় ফেলার মতো ঘটনা সচরাচর দেখা যায় না।

যুবকের এই কাজ আইনি জটিলতায় ফেলতে পারে তাকে। কারণ, ইচ্ছাকৃতভাবে বিদ্যুতের লাইন কাটা একটি শাস্তিযোগ্য অপরাধ। একই সঙ্গে এ ধরনের কাজ সমাজে নেতিবাচক বার্তা দেয়।

প্রশ্ন হলো, সম্পর্কের টানাপোড়েন কি ব্যক্তিগত পর্যায়ে সীমাবদ্ধ থাকবে, নাকি ভবিষ্যতে আরও বড় সামাজিক সংকটে রূপ নেবে? বিশেষজ্ঞদের মতে, এ ধরনের আচরণ ঠেকাতে পারিবারিক ও সামাজিক সচেতনতা অত্যন্ত জরুরি।

প্রেমিকার ফোন ব্যস্ত থাকায় যে কাণ্ড ঘটালেন এক তরুণ, তা শুধু তার ব্যক্তিগত অভিমান নয়; এটি সমাজের জন্যও একটি সতর্কবার্তা। ক্ষণিকের আবেগে নেওয়া ভুল সিদ্ধান্ত শুধু একজনের নয়, পুরো সমাজের জন্য ভয়াবহ পরিণতি ডেকে আনতে পারে। এখন সময় এসেছে তরুণ প্রজন্মকে মানসিকভাবে শক্ত হতে শেখানোর এবং আবেগকে নিয়ন্ত্রণে রাখার।

এম আর এম – ১১১৪, Signalbd.com

মন্তব্য করুন
Advertisement

Related Articles

Back to top button