বিশ্ব

সর্ববৃহৎ সমাবেশের ঘোষণা পাকিস্তান জামায়াতের

Advertisement

পাকিস্তানের ইতিহাসে নজিরবিহীন এক সমাবেশ আয়োজনের ঘোষণা দিয়েছে পাকিস্তান জামায়াতে ইসলামী। আগামী ২১, ২২ ও ২৩ নভেম্বর ২০২৫ — এই তিন দিনব্যাপী মহাসমাবেশ অনুষ্ঠিত হবে লাহোরের ঐতিহাসিক মিনার-ই-পাকিস্তান প্রাঙ্গণে।

জামায়াতের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, এই সমাবেশ শুধু একটি রাজনৈতিক কর্মসূচি নয়, বরং পাকিস্তানের ভবিষ্যৎ নির্ধারণে একটি ঐতিহাসিক মুহূর্ত হবে। এখানে অংশ নেবেন বিশ্বব্যাপী ইসলামী আন্দোলনের নেতারা, ফিলিস্তিনপন্থী সংগঠনের প্রতিনিধি এবং বিভিন্ন দেশের আন্তর্জাতিক নেতা

ঘোষণার পটভূমি

পাকিস্তানি দৈনিক ডন জানায়, লাহোরের মানসুরায় এক সংবাদ সম্মেলনে দলের আমির হাফিজ নাঈমুর রহমান এই ঘোষণা দেন।
তিনি স্পষ্ট করে বলেন—

“এটি হবে পাকিস্তানের ইতিহাসের সবচেয়ে বড় সমাবেশ। এখান থেকেই বৃহৎ আন্দোলনের সূচনা হবে। যদি শাসকগোষ্ঠী জনগণের অধিকার ফিরিয়ে না দেয়, তবে তাদের শান্তিপূর্ণ কিন্তু শক্তিশালী গণআন্দোলনের মুখোমুখি হতে হবে।”

শাসকগোষ্ঠীর প্রতি কঠোর বার্তা

হাফিজ নাঈমুর রহমান অভিযোগ করেন, গত সাত দশক ধরে ক্ষমতাসীন গোষ্ঠী জনগণের ওপর চাপিয়ে দেওয়া শাসন ব্যবস্থা চালিয়ে আসছে, যা দেশকে ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে ঠেলে দিয়েছে।
তার ভাষায়—

  • তরুণরা দেশে ভবিষ্যৎ দেখছে না
  • চাকরির সুযোগ প্রায় নেই
  • দরিদ্রদের জন্য শিক্ষার দ্বার বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে

তিনি বলেন, এই হতাশা ও বঞ্চনা দূর করতেই দেশের সব স্তরের মানুষকে একত্রিত করে একটি শান্তিপূর্ণ প্রতিরোধ আন্দোলন গড়ে তোলা হবে।

সমাবেশের লক্ষ্য ও পরিকল্পনা

এই তিন দিনের সমাবেশ কেবল বক্তৃতা বা আনুষ্ঠানিক সভার মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকবে না। বরং এখানে থাকবে:

  1. রাজনৈতিক দিকনির্দেশনা — দেশের ভবিষ্যৎ রাজনৈতিক রূপরেখা ঘোষণা
  2. অর্থনৈতিক সংস্কার প্রস্তাব — বেকারত্ব, দারিদ্র্য ও শিক্ষাব্যবস্থার উন্নয়ন পরিকল্পনা
  3. আন্তর্জাতিক সংহতি — বিশেষ করে ফিলিস্তিন ইস্যুতে দৃঢ় অবস্থান
  4. যুব ও নারীদের অংশগ্রহণ — পরিবর্তনের অগ্রভাগে তরুণ ও নারী সমাজকে আনা

৩০,০০০ পাবলিক কমিটি গঠনের পরিকল্পনা

হাফিজ নাঈমুর রহমান জানান, সমাবেশের আগে দেশজুড়ে ৩০,০০০ পাবলিক কমিটি গঠন করা হবে। এই কমিটিগুলো:

  • স্থানীয় পর্যায়ে জনগণকে সচেতন করবে
  • সমাবেশে অংশগ্রহণ নিশ্চিত করবে
  • আন্দোলনের বার্তা ছড়িয়ে দেবে

এর পাশাপাশি সংহতি অভিযান চালানো হবে, যাতে গ্রামের সাধারণ মানুষ থেকে শুরু করে শহরের শ্রমজীবী, নারী ও শিক্ষার্থীরাও সক্রিয়ভাবে যুক্ত হতে পারে।

মিনার-ই-পাকিস্তান: ঐতিহাসিক স্থান, ঐতিহাসিক মুহূর্ত

লাহোরের মিনার-ই-পাকিস্তান পাকিস্তানের রাজনৈতিক ইতিহাসে একটি প্রতীকী স্থান। এখানেই ১৯৪০ সালে লাহোর প্রস্তাব গৃহীত হয়েছিল, যা পরবর্তীতে পাকিস্তানের স্বাধীনতার ভিত্তি স্থাপন করে।

জামায়াতে ইসলামী মনে করছে, এই স্থানে সমাবেশ আয়োজনের মাধ্যমে জনগণকে স্বাধীনতার প্রকৃত চেতনায় ফিরিয়ে আনা সম্ভব হবে।

আন্তর্জাতিক অংশগ্রহণ

জামায়াতের আমির জানান, সমাবেশে মধ্যপ্রাচ্য, এশিয়া, আফ্রিকা ও ইউরোপের বিভিন্ন ইসলামী আন্দোলনের নেতা উপস্থিত থাকবেন।
বিশেষভাবে ফিলিস্তিনি প্রতিনিধিদল আমন্ত্রিত হয়েছে, যারা গাজা ও পশ্চিম তীরে চলমান পরিস্থিতি নিয়ে বক্তব্য রাখবেন।

এছাড়াও, মুসলিম বিশ্বে ন্যায় ও মানবাধিকারের পক্ষে কাজ করা আন্তর্জাতিক সংগঠনগুলোর প্রতিনিধিরাও অংশ নেবেন।

শান্তিপূর্ণ আন্দোলনের প্রতিশ্রুতি

হাফিজ নাঈমুর রহমান জোর দিয়ে বলেন,

“আমরা সহিংসতার পথে যাব না। আমাদের আন্দোলন হবে শান্তিপূর্ণ, কিন্তু এতটাই শক্তিশালী যে শাসকগোষ্ঠী জনগণের দাবির প্রতি বাধ্য হবে।”

জামায়াত এই সমাবেশ ও আন্দোলনকে সর্বস্তরের মানুষকে একত্রিত করার মঞ্চ হিসেবে ব্যবহার করতে চায়।

পাকিস্তানের বর্তমান প্রেক্ষাপট

বর্তমানে পাকিস্তান রাজনৈতিক অস্থিরতা, অর্থনৈতিক মন্দা এবং সামাজিক বৈষম্যের তীব্র সংকটে ভুগছে।

  • মুদ্রাস্ফীতি রেকর্ড উচ্চতায়
  • বেকারত্বে তরুণ সমাজ ক্ষুব্ধ
  • শিক্ষা ও স্বাস্থ্য খাতে বাজেট কমানো হয়েছে

এমন পরিস্থিতিতে এই ধরনের বৃহৎ সমাবেশ রাজনৈতিক ভারসাম্যে বড় প্রভাব ফেলতে পারে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।

বিশ্লেষকদের মন্তব্য

রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন—

  1. এটি জামায়াতের জন্য একটি শক্তি প্রদর্শনের সুযোগ
  2. সরকারের প্রতি জনগণের ক্ষোভের একটি প্রকাশভঙ্গি
  3. আন্তর্জাতিক পর্যায়ে পাকিস্তানের ভাবমূর্তি প্রভাবিত হতে পারে

তবে সরকারপন্থীরা মনে করছেন, জামায়াত এই সমাবেশের মাধ্যমে জনগণকে বিভ্রান্ত করছে এবং বাস্তবসম্মত সমাধান দিচ্ছে না।

২১ থেকে ২৩ নভেম্বরের এই সমাবেশ পাকিস্তানের রাজনৈতিক ক্যালেন্ডারে একটি বড় ঘটনা হয়ে উঠতে পারে। এটি কেবল জামায়াতে ইসলামী নয়, বরং পুরো দেশের জন্য একটি পরীক্ষা—জনগণের দাবি, রাজনৈতিক কৌশল ও গণতান্ত্রিক আন্দোলনের ভবিষ্যৎ নির্ধারণে এই সমাবেশ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে।

পাকিস্তানের ইতিহাসে যেমন লাহোর প্রস্তাব একটি মাইলফলক ছিল, তেমনই মিনার-ই-পাকিস্তানে এই ঘোষিত সমাবেশও হয়তো একদিন রাজনৈতিক পরিবর্তনের বড় সূচনা হিসেবে স্মরণীয় হয়ে থাকবে।

MAH – 12288 ,  Signalbd.com

মন্তব্য করুন
Advertisement

Related Articles

Back to top button