বিশ্ব

হামাস বলছে আমাদের অভিধানে আত্মসমর্পণ নেই

Advertisement

গাজ্জা উপত্যকার রাফা অঞ্চলের ভূগর্ভস্থ সুড়ঙ্গে অবস্থানরত ফিলিস্তিনের ইসলামি প্রতিরোধ আন্দোলন হামাসের যোদ্ধারা আত্মসমর্পণ করবে না বলে স্পষ্ট জানিয়েছে। হামাসের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, “আমাদের অভিধানে আত্মসমর্পণ বলতে কিছু নেই। আমরা কখনোও আমাদের নীতি থেকে সরে আসব না।”

এই ঘোষণার মধ্যেই ইসরাইল হামাসকে একটি শর্তসাপেক্ষ প্রস্তাব দিয়েছে। ইসরাইলি সেনাপ্রধান ইয়াল জামির জানান, ২০১৪ সালের গাজ্জা যুদ্ধের সময় নিহত ইসরাইলি লেফটেন্যান্ট হাদার গোল্ডিনের মরদেহ উদ্ধার করে ফেরত দিলে, রাফায় আটকা থাকা হামাস যোদ্ধাদের নিরাপদে বেরিয়ে যাওয়ার সুযোগ দেওয়া হবে।

তবে এই প্রস্তাবের সঙ্গে কিছু শর্ত জড়িত রয়েছে। শর্ত অনুযায়ী, হামাসের যোদ্ধাদের আগে আত্মসমর্পণ করতে হবে এবং অস্ত্র জমা দিতে হবে। এরপর ইসরাইল তাদের জন্য সাধারণ ক্ষমা ঘোষণা করতে পারে।

এদিকে, হামাসের সামরিক শাখা ইজ্জুদ্দীন কাসসাম ব্রিগেড রোববার এক বিবৃতিতে বলেছে, “আমরা কোনোভাবেই আত্মসমর্পণ করব না। আত্মসমর্পণ আমাদের নীতির অংশ নয়। যদি ইসরাইল আমাদের যোদ্ধাদের ওপর হামলা চালায়, তার পূর্ণ দায়ভার ইসরাইলকেই বহন করতে হবে।”

গত মাসে হামাস এবং ইসরাইলের মধ্যে যুদ্ধবিরতি ঘোষণার পর রাফার কিছু ভূগর্ভস্থ স্থানে কয়েকজন হামাস যোদ্ধা আটকা পড়ে। বর্তমানে সেই অঞ্চলগুলো ইসরাইলের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে।

গাজ্জা ও রাফার বর্তমান পরিস্থিতি

গাজ্জা উপত্যকা দীর্ঘদিন ধরেই ফিলিস্তিন-ইসরাইল সংঘাতের কেন্দ্রীয় ক্ষেত্র। রাফা সীমান্ত অঞ্চলে ভূগর্ভস্থ সুড়ঙ্গ ব্যবস্থার মাধ্যমে হামাস বিভিন্ন অভিযান পরিচালনা করে আসছে। এসব সুড়ঙ্গকে হামাস ‘গোপন যুদ্ধ কৌশল’ হিসেবে ব্যবহার করে। রাফায় যোদ্ধাদের আটকা পড়া এবং ইসরাইলের নিয়ন্ত্রণ বৃদ্ধি এই অঞ্চলের রাজনৈতিক ও মানবিক পরিস্থিতিকে আরও জটিল করে তুলেছে।

ইসরাইলি পক্ষের দাবি, রাফায় আটকা থাকা হামাস যোদ্ধাদের বেরিয়ে আসার একমাত্র উপায় হলো আত্মসমর্পণ ও অস্ত্র জমা দেওয়া। অন্যদিকে হামাসের তর্ক, আত্মসমর্পণ তাদের নীতির সঙ্গে সাংঘর্ষিক। এই দ্বন্দ্বের মধ্যে সাধারণ নাগরিক এবং স্থানীয় বাসিন্দাদের ওপর চাপ ও ভয় বৃদ্ধি পাচ্ছে।

আন্তর্জাতিক প্রতিক্রিয়া

হামাস-ইসরাইল দ্বন্দ্ব নিয়ে আন্তর্জাতিক মহলে দুঃখ প্রকাশ করা হয়েছে। জাতিসংঘসহ বিভিন্ন মানবাধিকার সংস্থা সতর্ক করেছে যে, ভূগর্ভস্থ স্থানে যোদ্ধাদের অবস্থান এবং যুদ্ধবিরতির লঙ্ঘন সাধারণ মানুষের জীবনকে বিপন্ন করছে।

জাতিসংঘের মুখপাত্র বলেছেন, “রাফার ভূগর্ভস্থ সুড়ঙ্গের যোদ্ধাদের অবস্থান গুরুতর মানবিক সমস্যা তৈরি করছে। এটি শুধুমাত্র সংঘাত নয়, বরং স্থানীয় মানুষের জন্য স্বাস্থ্য, নিরাপত্তা ও খাদ্য নিরাপত্তার ওপর বড় প্রভাব ফেলছে।”

হামাসের নীতি ও প্রতিরোধ কৌশল

হামাসের প্রতিরোধ কৌশল মূলত দুটি স্তরে কাজ করে। প্রথমত, ভূগর্ভস্থ সুড়ঙ্গের মাধ্যমে যোদ্ধাদের নিরাপদ অবস্থান নিশ্চিত করা। দ্বিতীয়ত, আত্মসমর্পণ ছাড়া যুদ্ধ চালিয়ে যাওয়ার নীতি। এই নীতি তাদের রাজনৈতিক এবং সামরিক অবস্থানের অংশ হিসেবে বিবেচিত।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, হামাসের এমন অবস্থান একদিকে তাদের ভিতরে শক্তি ও একতা প্রদর্শন করে, অন্যদিকে ইসরাইলের সঙ্গে আলোচনার সম্ভাবনাকে সীমিত করে। ফলে দ্বিপক্ষীয় সমঝোতা ও শান্তি প্রক্রিয়াকে জটিল করে তোলে।

সম্ভাব্য মানবিক প্রভাব

রাফা অঞ্চলের সাধারণ মানুষ এই দ্বন্দ্বের সবচেয়ে বড় শিকার। আটকা পড়া যোদ্ধাদের উপস্থিতি, অস্ত্রবাজি, এবং ইসরাইলি সেনার অভিযান সাধারণ নাগরিকদের জীবনকে প্রতিদিন বিপন্ন করে তোলে। মানবাধিকার সংস্থাগুলো আশঙ্কা প্রকাশ করেছে যে, সঠিক নিরাপত্তা ব্যবস্থা না থাকলে, এই অঞ্চলে প্রাণহানির ঝুঁকি ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি পাবে।

শরণার্থী শিবিরগুলোতে খাদ্য ও ওষুধের অভাব চরম পর্যায়ে পৌঁছেছে। শিশু, নারী ও বৃদ্ধরা সবচেয়ে বেশি ভোগান্তি ভোগ করছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে অবিলম্বে হস্তক্ষেপ করতে হবে।

ভবিষ্যৎ প্রেক্ষাপট

বর্তমান পরিস্থিতি অনুযায়ী, রাফায় বন্দী হামাস যোদ্ধাদের আত্মসমর্পণ না করার ঘোষণার ফলে সম্ভাব্য যুদ্ধ পরিস্থিতি অব্যাহত থাকতে পারে। ইসরাইলের পক্ষ থেকে শান্তি প্রস্তাব থাকলেও হামাসের অমনোযোগী অবস্থান এবং সুড়ঙ্গের কৌশল যেকোনো মুহূর্তে উত্তেজনা বাড়াতে পারে।

বিশ্লেষকরা মনে করছেন, যদি দ্বিপক্ষীয় আলোচনার পথ না খোলা যায়, তবে রাফা অঞ্চলে নতুন সংঘাত শুরু হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। এ ক্ষেত্রে স্থানীয় মানুষের নিরাপত্তা ও আন্তর্জাতিক মানবিক সাহায্যের গুরুত্ব আরও বৃদ্ধি পাবে।

গাজ্জা উপত্যকা, বিশেষ করে রাফা অঞ্চল, ফিলিস্তিন-ইসরাইল সংঘাতের একটি গুরুত্বপূর্ণ ক্ষেত্র। হামাসের আত্মসমর্পণ না করার ঘোষণা এবং ইসরাইলের শর্তসাপেক্ষ প্রস্তাব এই দ্বন্দ্বকে আরও জটিল করে তুলেছে। সাধারণ মানুষ, আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় এবং মানবাধিকার সংস্থাগুলো এখন উত্তেজনা নিয়ন্ত্রণ এবং শান্তি পুনঃস্থাপনের জন্য কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণের দিকে নজর রাখছে।

ফিলিস্তিনে হামাস ও ইসরাইলের দ্বন্দ্ব কেবল সামরিক সমস্যাই নয়, এটি রাজনৈতিক, মানবিক ও সামাজিক সমস্যার সমন্বয়। ভবিষ্যতে কীভাবে এই সংঘাত সমাধান করা যায়, তা নির্ভর করছে দুই পক্ষের কৌশল এবং আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের হস্তক্ষেপের ওপর।

MAH – 13718 I Signalbd.com

মন্তব্য করুন
Advertisement

Related Articles

Back to top button