বিশ্ব

ইরান জানিয়েছে, ইসরাইল সমর্থন ত্যাগ করলে আমেরিকাকে সহযোগিতা করবে

Advertisement

ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলি খামেনি সম্প্রতি ঘোষণা করেছেন, যদি যুক্তরাষ্ট্র মধ্যপ্রাচ্যে হস্তক্ষেপ বন্ধ করে এবং ইহুদিবাদী সন্ত্রাসীদের অবৈধ রাষ্ট্র ইসরাইলকে দেওয়া সমর্থন প্রত্যাহার করে, তবে তেহরান আমেরিকাকে সহযোগিতা করতে প্রস্তুত। এই মন্তব্যটি ইরানের রাজনৈতিক ও কূটনৈতিক পরিবেশে নতুন বিতর্কের জন্ম দিয়েছে।

সোমবার (৩ নভেম্বর) টিআরটি ওয়ার্ল্ড এবং অন্যান্য আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমের প্রতিবেদন অনুযায়ী, এই বক্তব্য তিনি ১৯৭৯ সালের ইসলামী বিপ্লবের বার্ষিকী উপলক্ষে তেহরানে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে প্রদান করেন। ওই বিপ্লবের সময় পশ্চিমা সমর্থিত তৎকালীন শাসক শাহ মোহাম্মদ রেজা পাহলভি ক্ষমতাচ্যুত হন এবং ইরানের রাজনৈতিক ইতিহাসে একটি নতুন অধ্যায় শুরু হয়।

খামেনির বক্তব্যের মূল অংশ

খামেনি এক ছাত্রসমাবেশে বলেন, “যদি যুক্তরাষ্ট্র পুরোপুরি ইসরাইল সমর্থন ত্যাগ করে, মধ্যপ্রাচ্যে তাদের সামরিক ঘাঁটি বন্ধ করে এবং এই অঞ্চলে হস্তক্ষেপ না করে, তখন তেহরান তাদের সঙ্গে সহযোগিতার বিষয়টি বিবেচনা করতে পারে।”

তিনি আরও বলেন, “যুক্তরাষ্ট্রের ঔদ্ধত্যপূর্ণ স্বভাব তাদের কোনো বিনা শর্তে আত্মসমর্পণ ছাড়া অন্য কিছু গ্রহণ করতে শেখায় না। তারা শুধুমাত্র নিজের স্বার্থ পূরণের জন্য হস্তক্ষেপ করে এবং অন্য দেশের স্বায়ত্তশাসনকে সম্মান করে না।”

এই মন্তব্য আন্তর্জাতিক কূটনীতিতে একটি বড় ধাক্কা হিসেবে দেখা হচ্ছে। বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, খামেনির এই ভাষা ইরান-আমেরিকা সম্পর্কের ভবিষ্যৎ এবং মধ্যপ্রাচ্যে স্থিতিশীলতা নিয়ে নতুন সংকেত বহন করছে।

ইরান এবং যুক্তরাষ্ট্রের দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের পটভূমি

১৯৭৯ সালের ইসলামী বিপ্লবের পর যুক্তরাষ্ট্র এবং ইরানের সম্পর্ক ক্রমেই উত্তপ্ত হয়ে ওঠে। বিশেষ করে, তেহরান দূতাবাস দখল এবং আটকানো কূটনীতিকদের বিষয়টি দুই দেশের মধ্যে সম্পর্ককে আরও জটিল করেছে।

এরপর থেকে যুক্তরাষ্ট্র ইরানের ওপর বিভিন্ন ধরনের অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে। তেহরান এই নিষেধাজ্ঞাকে “অত্যাচার ও বৈশ্বিক সাম্রাজ্যবাদের অংশ” হিসেবে আখ্যায়িত করেছে।

ইরান মধ্যপ্রাচ্যে সাম্প্রদায়িক ও রাজনৈতিক প্রভাব বিস্তার করার মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্রের ভূমিকা সীমিত করতে চেষ্টা করছে। বিশেষ করে ইরানের সমর্থিত শিয়া মিলিশিয়া ও রাজনৈতিক জোটগুলো লেবানন, ইরাক এবং সিরিয়ায় শক্তিশালী ভূমিকা রাখছে।

মধ্যপ্রাচ্যে ইসরাইল-আমেরিকা-ইরান সম্পর্ক

ইসরাইল এবং যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে দীর্ঘদিনের মিত্রতা রয়েছে। যুক্তরাষ্ট্র ইসরাইলকে সেনা ও প্রযুক্তি সহায়তা, অস্ত্র সরবরাহ এবং কূটনৈতিক সমর্থন প্রদান করে আসছে। ইসরাইলও মধ্যপ্রাচ্যে যুক্তরাষ্ট্রের কৌশলগত সহযোগী হিসেবে কাজ করে।

খামেনি এবং তেহরান এই সহযোগিতাকে অবৈধ ও অবাঞ্ছিত হিসেবে অভিহিত করে। তিনি মনে করান, ইসরাইলের অস্তিত্ব ও হস্তক্ষেপ অঞ্চলটিকে অস্থিতিশীল করছে এবং মানুষের মৌলিক অধিকার লঙ্ঘন করছে।

বিশ্লেষকরা মনে করেন, খামেনির বক্তব্য ইরানের অবস্থান আরও স্পষ্ট করেছে এবং যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যপ্রাচ্যে নীতি পরিবর্তনের সম্ভাব্য প্রভাব নিয়ে আলোচনা তীব্র করছে।

আন্তর্জাতিক প্রতিক্রিয়া

খামেনির বক্তব্য প্রকাশের পর আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ও বিভিন্ন প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে।

  • যুক্তরাষ্ট্র এক মুখপাত্রের মাধ্যমে জানায়, তারা ইরানের চাওয়া অনুযায়ী সমর্থন প্রত্যাহার করবে না। যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান এখনও মধ্যপ্রাচ্যে সাংগঠনিক নিরাপত্তা ও কৌশলগত স্বার্থ রক্ষা করা।
  • ইসরাইল এই মন্তব্যকে “প্রবণ হুমকি” হিসেবে অভিহিত করেছে এবং বলেছে, তারা তাদের প্রতিরক্ষা ও নিরাপত্তা নীতি থেকে সরে আসবে না।
  • ইউরোপীয় ইউনিয়ন মধ্যস্থতা করার চেষ্টা করছে। তারা আশা প্রকাশ করছে যে, যুক্তরাষ্ট্র এবং ইরান কূটনৈতিক পথেই দ্বিপাক্ষিক সমস্যার সমাধান করবে।

ইরান-আমেরিকার ভবিষ্যৎ সম্পর্ক

বিশ্লেষকরা মনে করেন, খামেনির এই মন্তব্য একটি শর্তসাপেক্ষ দ্বিপাক্ষিক সম্ভাবনা নির্দেশ করছে। অর্থাৎ, যদি যুক্তরাষ্ট্র ইসরাইলকে দেওয়া সমর্থন স্থগিত রাখে এবং মধ্যপ্রাচ্যে হস্তক্ষেপ কমায়, তবে ইরান তাদের সঙ্গে সীমিত কূটনৈতিক ও অর্থনৈতিক সহযোগিতা করতে প্রস্তুত।

ইরানের কূটনীতিক ও রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করেন, এই অবস্থান মধ্যপ্রাচ্যে শান্তি এবং স্থিতিশীলতা বজায় রাখার জন্য একটি চূড়ান্ত পরীক্ষা হিসেবে দেখা যেতে পারে।

সারসংক্ষেপ

  • ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলি খামেনি বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্র ইসরাইল সমর্থন বন্ধ করলে তেহরান সহযোগিতা করবে।
  • এই মন্তব্য ১৯৭৯ সালের ইসলামী বিপ্লবের বার্ষিকী অনুষ্ঠানে দেওয়া হয়েছে।
  • খামেনি যুক্তরাষ্ট্রের ঔদ্ধত্যপূর্ণ নীতি ও হস্তক্ষেপের সমালোচনা করেছেন।
  • আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়, বিশেষ করে যুক্তরাষ্ট্র, ইসরাইল, এবং ইউরোপ, এই মন্তব্যের পর নতুন কূটনৈতিক সমন্বয় চেষ্টা করছে।
  • বিশ্লেষকরা মনে করেন, মধ্যপ্রাচ্যে শান্তি এবং স্থিতিশীলতার জন্য এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ সংকেত।

এই ঘটনা ইরান-আমেরিকা-ইসরাইল সম্পর্কের ভবিষ্যৎকে নতুন আলোকে তুলে ধরেছে। মধ্যপ্রাচ্যে রাজনৈতিক ও কূটনৈতিক পরিবর্তন, নিরাপত্তা চ্যালেঞ্জ এবং আন্তর্জাতিক সহযোগিতার সম্ভাবনা নিয়ে আগামি মাসগুলোতে আরও আলোচনা ও বিশ্লেষণ দেখা যাবে।

MAH – 13615 I Signalbd.com

মন্তব্য করুন
Advertisement

Related Articles

Back to top button