বানিজ্য

দেড় লাখ টাকার নিচে নামল সোনার ভরি

দেশের বাজারে সোনার দাম কমেছে। এ দফায় ভরিপ্রতি সর্বোচ্চ ২ হাজার ৬২৪ টাকা দাম কমানো হয়েছে। এর ফলে দেড় লাখ টাকার নিচে নেমে এসেছে সোনার ভরি। দাম কমানোর পরে ভালো মানের এক ভরি তথা ২২ ক্যারেট সোনার দাম হবে ১ লাখ ৪৮ হাজার ৩৪৩ টাকা।

বাংলাদেশ জুয়েলার্স সমিতি (বাজুস) আজ শনিবার এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে সোনার দাম কমানোর তথ্য জানায়। এতে বলা হয়, স্থানীয় বাজারে তেজাবি সোনার (পিওর গোল্ড) দাম কমায় সোনার দাম সমন্বয় করা হয়েছে। আগামীকাল রোববার থেকে নতুন দাম কার্যকর হবে।

এর আগে সর্বশেষ গত বৃহস্পতিবার সোনার দাম কমানোর ঘোষণা দেয় বাংলাদেশ জুয়েলার্স সমিতি (বাজুস)। তাতে প্রতি ভরি সোনার দাম কমে হয় ১ লাখ ৫০ হাজার ৯৬৭ টাকা। এর আগে ২০ ফেব্রুয়ারি সোনার দাম বাড়িয়ে প্রতি ভরি ১ লাখ ৫৪ হাজার ৫২৫ টাকা করা হয়েছিল। দেশের বাজারে সেটিই ছিল সোনার এ যাবৎকালের সর্বোচ্চ দাম।

নতুন দাম অনুযায়ী আগামীকাল রোববার থেকে দেশের বাজারে হলমার্ক করা প্রতি ভরি (১১.৬৬৪ গ্রাম) ২২ ক্যারেট মানের সোনা ১ লাখ ৪৮ হাজার ৩৪৩ টাকা, ২১ ক্যারেট সোনা ১ লাখ ৪১ হাজার ৬০১ টাকা, ১৮ ক্যারেট সোনা ১ লাখ ২১ হাজার ৩৭৬ টাকায় বিক্রি হবে। এ ছাড়া সনাতন পদ্ধতির প্রতি ভরি সোনার দাম কমে হবে ৯৯ হাজার ৮৯১ টাকা।

আজ শনিবার পর্যন্ত প্রতি ভরি ২২ ক্যারেট মানের সোনা ১ লাখ ৫০ হাজার ৯৬৭ টাকা, ২১ ক্যারেট মানের সোনা ১ লাখ ৪৪ হাজার ৯৭ টাকা, ১৮ ক্যারেট মানের সোনা ১ লাখ ২৩ হাজার ৫১০ টাকা ও সনাতন পদ্ধতির প্রতি ভরি সোনা ১ লাখ ১ হাজার ৭২২ টাকায় বিক্রি হয়েছে।

আগামীকাল রোববার থেকে প্রতি ভরি ২২ ক্যারেটের সোনায় ২ হাজার ৬২৪ টাকা, ২১ ক্যারেটে ২ হাজার ৪৯৬ টাকা, ১৮ ক্যারেটে ২ হাজার ১৩৪ টাকা ও সনাতন পদ্ধতির সোনায় ১ হাজার ৮৩১ টাকা দাম কমবে।

সোনার বাজারে ওঠানামা: সাম্প্রতিক প্রবণতা
সোনার বাজারে বিগত কয়েক মাসে ব্যাপক অস্থিরতা লক্ষ্য করা গেছে। বিশ্ববাজারে সোনার মূল্য ওঠানামার প্রভাব সরাসরি দেশের বাজারেও পড়ছে। আন্তর্জাতিক বাজারে ডলারের বিনিময় হার, কেন্দ্রীয় ব্যাংকগুলোর নীতিমালা এবং রাজনৈতিক অস্থিরতার কারণে সোনার দাম প্রায়শই পরিবর্তিত হচ্ছে।

বিশেষজ্ঞদের মতে, বিশ্ব অর্থনীতির অনিশ্চয়তা এবং মুদ্রাস্ফীতি বৃদ্ধির কারণে বিনিয়োগকারীরা সোনার দিকে ঝুঁকছেন, যা কখনো দাম বাড়ায় আবার কখনো কমায়। সম্প্রতি আন্তর্জাতিক বাজারে সোনার দাম কমার কারণে বাংলাদেশেও দাম সমন্বয় করা হয়েছে।

ভবিষ্যতে সোনার দাম নিয়ে বিশেষজ্ঞদের মতামত
বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, চলতি বছরের দ্বিতীয়ার্ধে সোনার বাজার আরও পরিবর্তন হতে পারে। যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল রিজার্ভের সুদের হার নীতির পরিবর্তন, ইউরোপীয় অর্থনৈতিক নীতিমালা এবং মধ্যপ্রাচ্যের ভূরাজনৈতিক পরিস্থিতির ওপর নির্ভর করবে সোনার ভবিষ্যৎ দাম।

বাংলাদেশে বিয়ের মৌসুমে এবং উৎসবের সময় সোনার চাহিদা বেড়ে যায়, যা দাম বৃদ্ধির অন্যতম কারণ হতে পারে। তবে বর্তমান মূল্য হ্রাস ক্রেতাদের জন্য কিছুটা স্বস্তির খবর নিয়ে এসেছে।

ক্রেতা ও বিক্রেতাদের প্রতিক্রিয়া
সোনার দাম কমায় সাধারণ ক্রেতাদের মধ্যে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা যাচ্ছে। যারা বিয়ে বা অন্যান্য প্রয়োজনে সোনা কিনতে চান, তারা এই দাম কমার বিষয়টি ইতিবাচকভাবে নিয়েছেন। তবে জুয়েলারি ব্যবসায়ীরা বলছেন, দাম কমে যাওয়ায় তাদের লাভের পরিমাণ কিছুটা কমবে। অনেক ব্যবসায়ী মনে করছেন, দাম কমার ফলে বিক্রি বাড়তে পারে, যা বাজারের স্থিতিশীলতা বজায় রাখতে সাহায্য করবে।

সোনার দাম পরিবর্তনের কারণ
সোনার দাম ওঠানামার পেছনে বেশ কয়েকটি কারণ কাজ করে:

  1. আন্তর্জাতিক বাজারের প্রভাব: বিশ্ববাজারে সোনার চাহিদা ও সরবরাহ পরিবর্তন হলে স্থানীয় বাজারেও প্রভাব পড়ে।
  2. ডলারের বিনিময় হার: মার্কিন ডলারের দাম কমলে সোনার দাম বাড়ে এবং উল্টোটা হলে দাম কমে।
  3. অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক পরিস্থিতি: যেকোনো অর্থনৈতিক সংকট বা রাজনৈতিক অস্থিরতা সোনার বাজারে প্রভাব ফেলে।
  4. দেশীয় নীতিমালা ও আমদানি শুল্ক: বাংলাদেশে সোনার আমদানির ওপর আরোপিত কর ও শুল্কও দামের পরিবর্তনে ভূমিকা রাখে।

সোনার দাম কমার ফলে ক্রেতাদের জন্য এটি ভালো খবর হলেও ব্যবসায়ীদের জন্য মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা যাচ্ছে। আগামী দিনগুলোতে সোনার বাজার কীভাবে পরিবর্তিত হয়, তা নির্ভর করবে আন্তর্জাতিক বাজারের গতিবিধির ওপর।

মন্তব্য করুন

Related Articles

Back to top button