
গাজা সিটি: মানবিক বিপর্যয়ের নতুন অধ্যায়
২০২৫ সালের ৩০ আগস্ট, গাজা সিটি: ইসরাইলি বাহিনীর অব্যাহত আক্রমণে গাজা উপত্যকায় একদিনে আরও ৫৯ জন ফিলিস্তিনি শহীদ হয়েছেন। এদের মধ্যে বেশিরভাগই বেসামরিক নাগরিক, যাদের মধ্যে নারী, শিশু ও বৃদ্ধরা অন্তর্ভুক্ত। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, ২০২৩ সালের অক্টোবর থেকে শুরু হওয়া এই সংঘর্ষে শহীদের সংখ্যা ৬৩ হাজার ২৫ জনে পৌঁছেছে।
শুক্রবার (২৯ আগস্ট) গাজা স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, গত ২৪ ঘণ্টায় আরও ২২৪ জন ফিলিস্তিনি আহত হয়েছেন। ফলে ইসরাইলি আক্রমণে আহতের সংখ্যা এক লাখ ৫৯ হাজার ৪৯০ জনে দাঁড়িয়েছে।
মানবিক সহায়তা ও অনাহারে মৃত্যু
মানবিক সহায়তা নিতে গিয়ে ২৩ জন ফিলিস্তিনি নিহত এবং ১৮২ জন আহত হয়েছেন। ২৭ মে থেকে ত্রাণ নিতে গিয়ে নিহত ফিলিস্তিনির সংখ্যা দুই হাজার ২০৩ জনে দাঁড়িয়েছে। আহত হয়েছেন ১৬ হাজার ২২৮ জনেরও বেশি।
অনাহার ও অপুষ্টিতে আরও পাঁচজনের মৃত্যু হয়েছে। এর ফলে অনাহারে মোট মৃত্যুর সংখ্যা ৩২২ জনে দাঁড়িয়েছে, যার মধ্যে ১২১ জনই শিশু।
গাজা সিটি: যুদ্ধের কেন্দ্রবিন্দু
ইসরাইলি বাহিনী গাজা সিটিকে “ঝুঁকিপূর্ণ যুদ্ধক্ষেত্র” হিসেবে ঘোষণা করেছে এবং সেখানে মানবিক সহায়তা প্রবাহ বন্ধ করে দিয়েছে। এ পদক্ষেপের ফলে শহরের প্রায় এক মিলিয়ন বাসিন্দা চরম মানবিক সংকটে পড়েছেন। জাতিসংঘের মতে, গাজা উপত্যকার ৮৬.৩% এলাকা বর্তমানে যুদ্ধক্ষেত্র হিসেবে চিহ্নিত এবং ইসরাইলি বাহিনী ইতোমধ্যে ৭৫% এলাকা নিয়ন্ত্রণে নিয়েছে।
জাতিসংঘের উদ্বেগ ও আন্তর্জাতিক প্রতিক্রিয়া
জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস গাজায় অনাহারের পরিস্থিতিকে “ইচ্ছাকৃত” হিসেবে বর্ণনা করেছেন এবং বলেছেন, “জাতিসংঘের মানবিক সহায়তা গাজায় প্রবাহিত হতে বাধাগ্রস্ত হচ্ছে।” তিনি আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রতি জরুরি পদক্ষেপ গ্রহণের আহ্বান জানিয়েছেন।
ইউনাইটেড নেশনস রিলিফ অ্যান্ড ওয়ার্কস এজেন্সি (UNRWA) জানিয়েছে, গাজায় খাদ্য সংকট চরম আকার ধারণ করেছে এবং প্রায় ৬৪০,০০০ মানুষ “বিপর্যয়কর খাদ্য নিরাপত্তাহীনতায়” ভুগছেন।
গাজা সিটির হাসপাতালগুলোতে হামলা
গাজা সিটির হাসপাতালগুলোতে ইসরাইলি বাহিনীর হামলা অব্যাহত রয়েছে। ২৫ আগস্ট, ইসরাইলি বাহিনী খান ইউনিসের নাসের হাসপাতালে হামলা চালায়, যাতে ২২ জন নিহত হন, যাদের মধ্যে ৫ জন সাংবাদিকও ছিলেন। এই হামলাকে যুদ্ধাপরাধ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে।
আন্তর্জাতিক প্রতিক্রিয়া ও সমালোচনা
ইউরোপীয় ইউনিয়নের কয়েকটি দেশ ইসরাইলের গাজা অভিযানকে “অবৈধ” হিসেবে অভিহিত করেছে এবং এর বিরুদ্ধে পদক্ষেপ গ্রহণের আহ্বান জানিয়েছে। জার্মানি ইসরাইলকে অস্ত্র সরবরাহ স্থগিত করেছে, যা একটি ঐতিহাসিক পদক্ষেপ।
যুক্তরাষ্ট্রও ফিলিস্তিন কর্তৃপক্ষের প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আব্বাস ও ৮০ জন কর্মকর্তার ভিসা বাতিল করেছে, যা আন্তর্জাতিক অঙ্গনে সমালোচনার জন্ম দিয়েছে।
গাজায় মানবিক সংকটের ভবিষ্যৎ
গাজায় মানবিক সংকট দিন দিন আরও জটিল হচ্ছে। খাদ্য, পানি, চিকিৎসা ও আশ্রয়ের অভাবে সাধারণ মানুষ চরম দুর্দশায় পড়েছেন। জাতিসংঘের পূর্বাভাস অনুযায়ী, আগামী সেপ্টেম্বর মাসে গাজায় মানবিক বিপর্যয় আরও তীব্র হতে পারে।
গাজা উপত্যকায় চলমান যুদ্ধ ও মানবিক সংকট আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের জন্য একটি বড় চ্যালেঞ্জ। মানবাধিকার লঙ্ঘন, যুদ্ধাপরাধ ও মানবিক সহায়তা প্রবাহে বাধা প্রদান বিশ্ব শান্তি ও নিরাপত্তার জন্য হুমকি স্বরূপ। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের উচিত, গাজায় যুদ্ধবিরতি প্রতিষ্ঠা ও মানবিক সহায়তা নিশ্চিত করতে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করা।
MAH – 12550, Signalbd.com