ইন্দোনেশিয়ার প্রতিরক্ষামন্ত্রী ঘোষণা করেছেন, দেশের সামরিক আধুনিকীকরণের অংশ হিসেবে চীন, তুরস্ক ও ফ্রান্স থেকে মোট ১৩২টি যুদ্ধবিমান কেনা হবে। এই পদক্ষেপ দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার আঞ্চলিক নিরাপত্তা ও ভূরাজনীতিতে নতুন প্রভাব ফেলতে পারে।
ঘটনা ও ঘোষণার বিস্তারিত
ইন্দোনেশিয়ার প্রতিরক্ষামন্ত্রী সামাসোয়েদিন বুধবার ঘোষণা করেছেন যে দেশটি চীন, তুরস্ক ও ফ্রান্স থেকে মোট ১৩২টি অত্যাধুনিক যুদ্ধবিমান কিনবে। এর মধ্যে চীন থেকে ৪২টি চেংদু জে-১০সি, তুরস্ক থেকে ৪৮টি কান এবং ফ্রান্স থেকে ৪২টি রাফায়েল যুদ্ধবিমান নেওয়া হবে। প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র ব্রিগেডিয়ার জেনারেল ফ্রেগা ওয়েনাস জানান, এই বিমানগুলো দ্রুত ইন্দোনেশিয়ার আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থায় যুক্ত হবে।
অর্থমন্ত্রী পূর্বায়া যুধি সাদেওয়া নিশ্চিত করেছেন যে চীন থেকে বিমান কেনার জন্য প্রয়োজনীয় বাজেট অনুমোদন করা হয়েছে, যার পরিমাণ ৯ বিলিয়ন ডলারেরও বেশি। এর মাধ্যমে ইন্দোনেশিয়ার সামরিক বাহিনী তার আধুনিকীকরণ পরিকল্পনার বড় ধাপ সম্পন্ন করতে যাচ্ছে।
কেন এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হলো?
ইন্দোনেশিয়ার বিমানবাহিনীর অনেক যুদ্ধবিমান পুরনো হয়ে গেছে এবং বিভিন্ন দেশে তৈরি বিমানগুলোর ওপর নির্ভরশীলতা সীমিত। চীনের জে-১০সির মাধ্যমে প্রথমবারের মতো পশ্চিমা দেশগুলো ছাড়া অন্য কোনো দেশ থেকে যুদ্ধবিমান কেনা হচ্ছে।
গত কয়েক বছর ধরে ইন্দোনেশিয়ার প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় চীন, ফ্রান্স, তুরস্ক, রাশিয়া ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ভ্রমণ করেছে, যাতে সামরিক সরঞ্জাম এবং সীমান্ত প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা আধুনিকায়িত করা যায়। বর্তমান প্রশাসনের লক্ষ্য হচ্ছে দেশটির আঞ্চলিক নিরাপত্তা সক্ষমতা বাড়ানো এবং প্রতিরক্ষা শিল্পকে শক্তিশালী করা।
বিমানগুলোর বৈশিষ্ট্য ও সংখ্যা
- চীনের জে-১০সি: ৪২টি বিমান, ৪.৫ প্রজন্মের প্রযুক্তি ব্যবহার।
- তুরস্কের কান যুদ্ধবিমান: ৪৮টি বিমান, আধুনিক আক্রমণ ও প্রতিরক্ষা ক্ষমতা।
- ফ্রান্সের রাফায়েল যুদ্ধবিমান: ৪২টি বিমান, উন্নত রাডার ও ফ্লাইট সিস্টেমের সঙ্গে।
মোট ১৩২টি বিমান শিগগিরই ইন্দোনেশিয়ার আকাশে ভ্রমণ শুরু করবে, যা দেশের সামরিক শক্তি বহুগুণ বাড়াবে।
আঞ্চলিক প্রভাব ও বিশ্লেষণ
বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, এই চুক্তি দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার ভূরাজনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব ফেলবে। ইন্দোনেশিয়ার জন্য এটি কেবল সামরিক আধুনিকীকরণ নয়, বরং আঞ্চলিক কূটনৈতিক সম্পর্কের নতুন মাত্রা।
ইন্দোনেশিয়া ইনস্টিটিউট ফর ডিফেন্স অ্যান্ড স্ট্র্যাটেজিক স্টাডিজের বিশ্লেষক বেনি সুকাদিস বলেন, “দীর্ঘদিন পশ্চিমা দেশগুলোর ওপর নির্ভরশীল থাকার পর চীনের কাছ থেকে বড় অস্ত্র কেনা আঞ্চলিক নিরাপত্তা ও রাজনৈতিক প্রভাবের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ। এটি দক্ষিণ চীন সাগরের সংবেদনশীলতাকেও বাড়াতে পারে।”
তিনি আরও বলেন, “রাজনৈতিকভাবে জোট নিরপেক্ষ থাকা সত্ত্বেও এই সিদ্ধান্তে চীনের ক্রমবর্ধমান সামরিক প্রভাব দেখা যাচ্ছে, যা ইন্দোনেশিয়ার নিরাপত্তা নীতিতে পরিবর্তন নির্দেশ করছে।”
আন্তর্জাতিক প্রতিক্রিয়া
এই চুক্তি আন্তর্জাতিক মিডিয়ায় গুরুত্বপূর্ণ আলোচনার বিষয় হয়ে উঠেছে। বিভিন্ন দেশ ইন্দোনেশিয়ার এই সিদ্ধান্তকে নজরদারির আওতায় রেখেছে। বিশেষ করে যুক্তরাষ্ট্র, রাশিয়া এবং পশ্চিমা দেশগুলো লক্ষ্য রাখছে, যাতে আঞ্চলিক সামরিক ভারসাম্য বজায় থাকে।
তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়েপ এরদোয়ান জুনে ঘোষণা করেন যে তার দেশ ইন্দোনেশিয়ায় ৪৮টি কান যুদ্ধবিমান সরবরাহ করবে। ফ্রান্স ইতোমধ্যেই ৪২টি রাফায়েল যুদ্ধবিমানের প্রথম ডেলিভারির জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছে, যা ২০২৬ সালের প্রথম দিকে ইন্দোনেশিয়ায় পৌঁছাবে।
ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা ও সম্ভাবনা
ইন্দোনেশিয়ার সরকার ভবিষ্যতে আরও আধুনিক অস্ত্র ব্যবস্থা, নজরদারি এবং সীমান্ত প্রতিরক্ষা ক্ষমতা বাড়ানোর জন্য পরিকল্পনা করছে। এছাড়া দেশের প্রতিরক্ষা শিল্পকে শক্তিশালী করার পদক্ষেপও নেওয়া হচ্ছে। সামরিক বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, এই পদক্ষেপ দেশের আঞ্চলিক প্রভাব ও নিরাপত্তা নীতিতে নতুন মাত্রা যোগ করবে।
সবমিলিয়ে ইন্দোনেশিয়ার ১৩২টি যুদ্ধবিমান কেনার সিদ্ধান্ত কেবল সামরিক আধুনিকীকরণ নয়, এটি আঞ্চলিক নিরাপত্তা, ভূরাজনীতি ও প্রতিরক্ষা কৌশলের একটি বড় পদক্ষেপ। আগামী কয়েক বছরে এই বিমানগুলো ইন্দোনেশিয়ার আকাশে উড়ে যাওয়া শুরু করলে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার সামরিক ভারসাম্যে বড় পরিবর্তন আসবে।
এম আর এম – ১৮১১,Signalbd.com



