তালেবানের আমন্ত্রণে আফগানিস্তান সফরে মামুনুল হকসহ সাত আলেম

ইমারাত-ই-ইসলামিয়া সরকারের (তালেবান সরকার) আনুষ্ঠানিক আমন্ত্রণে আফগানিস্তান সফরে গেছেন বাংলাদেশের শীর্ষস্থানীয় সাতজন আলেম। তাঁদের মধ্যে রয়েছেন বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের আমির মাওলানা মামুনুল হকসহ দেশের বিভিন্ন ইসলামী সংগঠনের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিত্ব। প্রতিনিধিদলটি কাবুলে তালেবান সরকারের উচ্চপর্যায়ের ব্যক্তিদের সঙ্গে সাক্ষাৎ ও মতবিনিময়ে অংশ নেবেন বলে জানা গেছে।
সফরের বিস্তারিত
বুধবার সকালে আলেমদের এই প্রতিনিধি দল আফগানিস্তানের রাজধানী কাবুলে পৌঁছান। দলের নেতৃত্বে রয়েছেন মাওলানা মামুনুল হক। তাঁর সঙ্গে আছেন হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশের নায়েবে আমির মাওলানা আবদুল হামিদ (মধুপুরের পীর), মাওলানা আবদুল আউয়াল, মাওলানা আবদুল হক, মাওলানা হাবিবুল্লাহ মাহমুদ কাসেমী, মাওলানা মনির হোসাইন কাসেমী ও মাওলানা মাহবুবুর রহমান।
সফরের অংশ হিসেবে তাঁরা আফগানিস্তানের প্রধান বিচারপতি, একাধিক মন্ত্রী, শীর্ষ আলেম ও কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করবেন। এসময় নারী অধিকার, মানবাধিকার ও সাম্প্রতিক আন্তর্জাতিক সমালোচনাসহ বিভিন্ন প্রসঙ্গে সরাসরি মতামত ও তথ্য বিনিময় করবেন বলে দলের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে।
সফর
বাংলাদেশ ও আফগানিস্তানের আলেমদের মধ্যে ঐতিহাসিকভাবে একটি সম্পর্ক বিদ্যমান। বিশেষত ইসলামী আন্দোলন, শরিয়াভিত্তিক রাষ্ট্রচিন্তা ও ধর্মীয় শিক্ষা বিনিময়ে এই সম্পর্ক অতীতে একাধিকবার আলোচনায় এসেছে। তবে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে আফগানিস্তানে তালেবান ক্ষমতায় ফেরার পর বাংলাদেশি আলেমদের এ ধরনের সফর খুব একটা দেখা যায়নি।
এর আগে ১৪ সেপ্টেম্বর মামুনুল হকসহ বাংলাদেশের আলেমদের এই প্রতিনিধিদল সৌদি আরবে ওমরাহ পালন করেন। সেখান থেকে সংযুক্ত আরব আমিরাত হয়ে তাঁরা কাবুলে পৌঁছান।
আলোচনার মূল বিষয়
বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের পাঠানো সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, এই সফরে দুই দেশের আলেমদের মধ্যকার সম্পর্ক জোরদার, কূটনৈতিক যোগাযোগ বৃদ্ধি এবং শিক্ষা, চিকিৎসা ও ব্যবসা-বাণিজ্য খাতে পারস্পরিক সহযোগিতা বাড়ানোর বিষয়টি গুরুত্ব পাবে।
এছাড়া সাম্প্রতিক সময়ে আফগানিস্তানে সংঘটিত ভয়াবহ ভূমিকম্পে ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা পরিদর্শন করারও পরিকল্পনা রয়েছে প্রতিনিধিদলের। মানবিক সহায়তার ক্ষেত্রেও আলোচনার সুযোগ সৃষ্টি হতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
প্রতিক্রিয়া ও বিশ্লেষণ
সফরটি ঘিরে ইতোমধ্যেই আলোচনার ঝড় বইছে। একদল মনে করছেন, এই সফর বাংলাদেশ ও আফগানিস্তানের ধর্মীয় ও কূটনৈতিক সম্পর্ক নতুন মাত্রা পাবে। আবার অনেকেই বলছেন, আন্তর্জাতিক মহলে তালেবান সরকারকে ঘিরে যে সমালোচনা রয়েছে, তার মধ্যে এই সফর বাংলাদেশি আলেমদের একটি নতুন অবস্থান প্রকাশ করছে।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করেন, যদি এই সফর বাস্তব সহযোগিতার দ্বার উন্মোচন করতে পারে, তবে দুই দেশের মধ্যে শিক্ষা ও স্বাস্থ্য খাতে ইতিবাচক পরিবর্তন আসতে পারে। তবে সমালোচকদের মতে, মানবাধিকার ও নারী অধিকার নিয়ে তালেবান সরকারের নীতি এখনো বিতর্কিত, ফলে এই সফরকে ঘিরে প্রশ্ন থেকেই যাবে।
বিশেষজ্ঞ মতামত
রাজনীতি ও আন্তর্জাতিক সম্পর্কের বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, ধর্মীয় ভিত্তিতে হওয়া এই সফর মূলত কূটনৈতিক বার্তা বহন করছে। বাংলাদেশ সরাসরি তালেবান সরকারের সঙ্গে রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে সম্পর্ক না রাখলেও আলেমদের মাধ্যমে পরোক্ষ যোগাযোগ একটি কৌশল হতে পারে।
একজন বিশ্লেষক বলেন, “আলেমদের এই সফরকে আমরা শুধুমাত্র ধর্মীয় দৃষ্টিকোণ থেকে দেখলে ভুল হবে। এটি কূটনৈতিক নরম শক্তির (soft power) প্রয়োগ, যা ভবিষ্যতে দুই দেশের সম্পর্কে প্রভাব ফেলতে পারে।”
সাতজন শীর্ষ আলেমের এই আফগানিস্তান সফর নিঃসন্দেহে সময়োপযোগী ও আলোচিত একটি ঘটনা। এখন দেখা বাকি, সফরের আলোচনাগুলো কতটা কার্যকর পদক্ষেপে রূপ নেয় এবং দুই দেশের মধ্যে সহযোগিতার নতুন দিগন্ত উন্মোচিত হয় কি না।
এম আর এম – ১৪০৯,Signalbd.com