যশোর পাউবোর রেস্ট হাউসে এক নারীকে নিয়ে অবস্থান করার সময় ছাত্রদল নেতাদের হাতে হাতেনাতে ধরা পড়েন ঝিনাইদহের মহেশপুর থানার ওসি সাইফুল ইসলাম। সামাজিক মাধ্যমে ভিডিও ভাইরাল হওয়ার পর ব্যাপক আলোচনা-সমালোচনার মুখে তাঁকে প্রত্যাহার করা হয়েছে। তদন্তে গঠিত হয়েছে তিন সদস্যের কমিটি।
ঘটনাটির বিস্তারিত
সূত্র মতে, গত ৩০ জুন সন্ধ্যা ৬টা ১০ মিনিটের দিকে যশোর পাউবোর পুরাতন রেস্ট হাউসের ‘কপোতাক্ষ’ কক্ষে উঠেছিলেন ওসি সাইফুল ইসলাম। সিসিটিভি ফুটেজে দেখা যায়, তিনি এক নারীকে স্ত্রী পরিচয়ে নিয়ে সেখানে অবস্থান করছিলেন। কিছুক্ষণের মধ্যে ছাত্রদল নেতাকর্মীরা খবর পেয়ে রেস্ট হাউসে উপস্থিত হন এবং কক্ষের দরজায় ধাক্কাধাক্কি শুরু করেন।
এক পর্যায়ে ওসি বাইরে বের হওয়ার চেষ্টা করলে তাঁকে টেনেহিঁচড়ে পুনরায় কক্ষে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে বাকবিতণ্ডা ও ধস্তাধস্তির ঘটনা ঘটে। কক্ষের কিছু আসবাবপত্রও ভাঙচুর হয় বলে জানা গেছে।
ভাইরাল ভিডিও ও সামাজিক প্রতিক্রিয়া
এই ঘটনাটি রেকর্ড হওয়া সিসিটিভি ফুটেজ সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। মাত্র কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই ভিডিওটি ভাইরাল হয়, যা জনমনে ব্যাপক সমালোচনা তৈরি করে। বিভিন্ন মহল থেকে একজন সরকারি দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তার এমন আচরণের কঠোর নিন্দা জানানো হয়।
পুলিশ প্রশাসনের পদক্ষেপ
ভিডিও ভাইরালের পরপরই ৭ জুলাই সকালে ঝিনাইদহ জেলা পুলিশ ওসি সাইফুল ইসলামকে তাৎক্ষণিকভাবে প্রত্যাহার করে। একই সঙ্গে ঘটনাটি তদন্তে তিন সদস্যের একটি কমিটি গঠন করা হয়।
ঝিনাইদহের পুলিশ সুপার মনজুর মোর্শেদ বলেন, “প্রাথমিকভাবে ঘটনা যাচাই করে ওসি সাইফুলকে প্রত্যাহার করা হয়েছে। তদন্তে দোষ প্রমাণিত হলে তার বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
রেস্ট হাউস কর্তৃপক্ষের বক্তব্য
রেস্ট হাউসের কেয়ারটেকার মিজানুর রহমান জানিয়েছেন, “সাইফুল ইসলাম নিজেই এসে স্ত্রী পরিচয়ে একটি কক্ষ নেন। পরে কিছু লোক দরজায় ধাক্কাধাক্কি করে এবং ধস্তাধস্তির ঘটনা ঘটে।”
তিনি আরও জানান, রুম বরাদ্দে তিনি সরকারি কাগজপত্র দেখে ব্যবস্থা নিয়েছেন।
পানি উন্নয়ন বোর্ড যশোর অঞ্চলের নির্বাহী প্রকৌশলী পলাশ কুমার ব্যানার্জী জানান, “ঝিনাইদহ পানি উন্নয়ন বোর্ডের পক্ষ থেকে পাঠানো অনুরোধপত্রের ভিত্তিতে রেস্ট হাউসে কক্ষ বরাদ্দ দেয়া হয়েছিল। অনাকাঙ্ক্ষিত এ ঘটনার তদন্তে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী কাজ করছে।”
ওসি সাইফুলের ব্যাখ্যা
অভিযোগ অস্বীকার করে ওসি সাইফুল ইসলাম বলেন, “আমি ব্যক্তিগত সফরে যশোরে এসেছিলাম। ওই নারী আমার পরিচিত বন্ধু। কোনো অনৈতিক কিছু ঘটেনি। ছাত্রদলের কয়েকজন নেতা এসে স্বাভাবিক কথা বলে চলে গেছে।”
তিনি আরও দাবি করেন, “একটি মহল আমার ভাবমূর্তি নষ্ট করতে অপপ্রচার চালাচ্ছে।”
ছাত্রদল নেতার বক্তব্য
জেলা ছাত্রদলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক গোলাম হাসান সনি বলেন, “স্থানীয়দের কাছ থেকে খবর পেয়ে আমরা সেখানে যাই। রেস্ট হাউসে অসামাজিক কার্যকলাপ চলছিল বলেই ধারণা করা হয়েছিল।” তবে তিনি দাবি করেন, “আমি কোনো নারীকে দেখিনি।” যদিও সিসিটিভি ফুটেজে নারীর উপস্থিতি ছিল স্পষ্ট।
পরবর্তী পদক্ষেপ কী?
এই ঘটনার তদন্ত চলছে। তদন্তে দোষী প্রমাণিত হলে ওসি সাইফুল ইসলামের বিরুদ্ধে বিভাগীয় ও আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে বলে জানিয়েছে পুলিশ প্রশাসন।
এদিকে, সাধারণ জনগণের মধ্যে প্রশ্ন উঠেছে—এ ধরনের ঘটনা পুলিশ প্রশাসনের ভাবমূর্তিকে কোথায় নিয়ে যাচ্ছে? কতটা নৈতিক অবক্ষয় ঘটছে মাঠপর্যায়ে?
“ওসি সাইফুল ইসলামকে তাৎক্ষণিকভাবে প্রত্যাহার করা হয়েছে। তদন্তে দোষী প্রমাণিত হলে তার বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।” —মনজুর মোর্শেদ, পুলিশ সুপার, ঝিনাইদহ
সারসংক্ষেপ
ঝিনাইদহের মহেশপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সাইফুল ইসলাম সম্প্রতি যশোরে পানি উন্নয়ন বোর্ডের রেস্ট হাউসে এক নারীসহ অবস্থানকালে ছাত্রদল নেতাদের হাতে ধরা পড়েন। ঘটনাটির ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে তা ব্যাপক আলোচনা সৃষ্টি করে। জেলা পুলিশ তাৎক্ষণিকভাবে তাঁকে প্রত্যাহার করে এবং তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করে।
ঘটনাটি শুধু একজন কর্মকর্তার আচরণ নিয়ে প্রশ্ন তোলে না, বরং পুরো পুলিশ প্রশাসনের প্রতি জনমনে আস্থার বিষয়টিকেও আলোচনায় এনে দেয়। তদন্তে যদি সত্যতা পাওয়া যায়, তবে এটি শুধুমাত্র একজন ব্যক্তির বিচ্যুতি নয়—বরং এক গভীর প্রাতিষ্ঠানিক সংকেত। তবে প্রশ্ন থেকে যায়, ভবিষ্যতে এমন আচরণ রোধে কী ব্যবস্থা গ্রহণ করবে প্রশাসন?
এম আর এম – ০২১৪, Signalbd.com



