আঞ্চলিক

তারাগঞ্জে দু’জনকে পিটিয়ে হত্যার ঘটনায় ৮ পুলিশ সদস্য সাময়িক বরখাস্ত

Advertisement

রংপুরের তারাগঞ্জ উপজেলায় চোর সন্দেহে দুইজনকে পিটিয়ে হত্যার ঘটনায় পুলিশ প্রশাসন ৮ জন কর্মকর্তাকে সাময়িক বরখাস্ত করেছে। বুধবার রাত সাড়ে ১০টার দিকে রংপুর পুলিশ সুপারের নির্দেশে এই পদক্ষেপ নেওয়া হয়। বরখাস্ত হওয়া কর্মকর্তা এবং কনস্টেবলরা দায়িত্বে অবহেলার অভিযোগে এই শাস্তির মুখে পড়েছেন।

বরখাস্তকৃত পুলিশের নাম

রংপুর জেলা পুলিশের সূত্রে জানা গেছে, বরখাস্তকৃতরা হলেন তারাগঞ্জ থানার এসআই আবু জোবায়ের, রংপুর পুলিশ লাইন্স থেকে এসআই সফিকুল ইসলাম, এবং কনস্টেবল ফারিকুদ আখতার জামান, ধিরাজ কুমার রায়, হাসান আলী, ফিরোজ কবির, মোক্তার হোসেন ও বাবুল চন্দ্র রায়। এদের দায়িত্বে থাকা মোবাইল টিম ঘটনাস্থলে দ্রুত উপস্থিত না হওয়ায় অভিযোগ উঠেছে।

ঘটনার প্রেক্ষাপট

শনিবার রাত ৯টার দিকে তারাগঞ্জের সয়ার ইউনিয়নের বটতলা এলাকায় উচ্ছৃঙ্খল জনতার গণপিটুনিতে নিহত হন রূপলাল দাস এবং তার ভাগনির স্বামী প্রদীপ লাল। প্রদীপের বাড়ি মিঠাপুকুর উপজেলার বালুয়াভাটা গ্রামে। রূপলাল স্থানীয় বাজারে জুতা সেলাই করতেন, আর প্রদীপ ভ্যান চালিয়ে জীবিকা নির্বাহ করতেন।

স্থানীয়রা জানান, পুলিশ মোবাইল টিম ঘটনাস্থলে আসলেও জনতার ভিড়ে তারা কার্যকরভাবে ব্যবস্থা নিতে পারেননি। ঘণ্টাখানেক পর সেনাবাহিনীর সহায়তায় দু’জনকে উদ্ধার করা হয়, কিন্তু হাসপাতালে নেওয়ার আগেই একজন মারা যান। অপরজন চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান কয়েক ঘণ্টার মধ্যে।

পুলিশ প্রশাসনের প্রতিক্রিয়া

তারাগঞ্জ থানার ওসি এম এ ফারুক জানিয়েছেন, “থানা থেকে ঘটনাস্থল বেশ দূরে। যখন মব তৈরি হয়, তখন স্কুল মাঠে তিন-চার হাজার লোক উপস্থিত ছিল। পুলিশ তাদের রক্ষার চেষ্টা করছিল, কিন্তু জনতা সরছিল না। এমন পরিস্থিতিতে সবাইকে রক্ষা করা সম্ভব হয়নি।”

এছাড়া, এই হত্যাকাণ্ডের তদন্ত কর্মকর্তা এসআই আবু জোবায়েরকে তদন্ত কার্যক্রম থেকে সরিয়ে তারাগঞ্জ থানার পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) রফিকুল ইসলামকে নতুন তদন্ত কর্মকর্তা হিসেবে নিয়োগ করা হয়েছে।

স্থানীয়দের প্রতিক্রিয়া

স্থানীয় জনগণ ও প্রত্যক্ষদর্শীরা পুলিশের কার্যক্রম নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। তারা অভিযোগ করেছেন, “মবের ভয়ে পুলিশ আমাদের রক্ষা করতে ব্যর্থ হয়েছে। যদি পুলিশ দ্রুত পদক্ষেপ নিত, হয়তো এমন ভয়াবহ ঘটনা ঘটত না।”

স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরাও ঘটনার নিন্দা জানিয়েছেন এবং দ্রুত ন্যায়বিচার দাবি করেছেন।

বিশ্লেষণ ও বিশেষজ্ঞ মতামত

আইন বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন, পুলিশ কর্তৃপক্ষের দায়িত্ব হলো সাধারণ মানুষকে সুরক্ষিত রাখা। দায়িত্বে অবহেলা বা নীরব থাকা গুরুতর অপরাধ হিসেবে গণ্য হতে পারে। তারা সতর্ক করেছেন যে, এই ধরনের ঘটনায় জনতার ক্ষোভ ও আতঙ্ক আরও বাড়তে পারে, যদি প্রশাসন কার্যকর পদক্ষেপ না নেয়।

রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, “জনতার বিশ্বাস ও পুলিশের প্রাতিষ্ঠানিক সক্ষমতা যাচাই করার জন্য এই ঘটনায় যথাযথ তদন্ত জরুরি।”

সামগ্রিক পরিস্থিতি

এই ঘটনার পর রংপুর জেলা পুলিশ প্রশাসন কঠোর হুঁশিয়ারি দিয়েছে এবং দায়িত্বে অবহেলা করলে আরও কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস দিয়েছে। বর্তমানে তারাগঞ্জ থানার পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রয়েছে, তবে স্থানীয়দের মধ্যে আতঙ্ক ও উদ্বেগ রয়েছে।

বিশ্লেষকদের মতে, এই ঘটনা পুলিশি কার্যক্রমের পুনর্মূল্যায়ন এবং জনতার নিরাপত্তার জন্য নতুন ব্যবস্থা গ্রহণের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ নজির হতে পারে।

সংক্ষিপ্তসার

তারাগঞ্জের এই মর্মান্তিক হত্যাকাণ্ডে ৮ পুলিশ সদস্যকে সাময়িক বরখাস্ত করায় প্রশাসন তৎপরতার ইঙ্গিত দিয়েছে। তবে বিশ্লেষকরা মনে করেন, পুরো পরিস্থিতির পরিপ্রেক্ষিতে জনগণ এবং আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে সতর্কভাবে কাজ করতে হবে। পরবর্তী দিনগুলোতে এই ঘটনায় তদন্ত ও প্রতিক্রিয়ার প্রভাব আরও স্পষ্ট হবে।

এম আর এম – ০৮৫৪, Signalbd.com

মন্তব্য করুন
Advertisement

Related Articles

Back to top button