আঞ্চলিক

কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রী ও তাঁর মায়ের মরদেহ উদ্ধারের ঘটনায় কবিরাজ আটক

Advertisement

কুমিল্লায় এক হৃদয়বিদারক ঘটনার পর র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র‌্যাব) এক সন্দেহভাজন কবিরাজকে আটক করেছে। কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের লোক প্রশাসন বিভাগের শিক্ষার্থী সুমাইয়া আফরিন (২৩) ও তাঁর মা তাহমিনা বেগম (৫২)-এর মরদেহ উদ্ধারের ঘটনায় এই গ্রেপ্তার হয়। র‌্যাবের প্রাথমিক তথ্যমতে, আটককৃত ব্যক্তির নাম আবদুর রব (৭৩), যিনি জেলার নাঙ্গলকোট উপজেলার বাসিন্দা। প্রাথমিক তদন্তে জানা গেছে, নিহতদের সঙ্গে তাঁর ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ ছিল।

কোথায় ও কিভাবে মরদেহ উদ্ধার হলো

সোমবার সকাল ৭টার দিকে নগরের কালিয়াজুরী এলাকার পিটিআই মাঠসংলগ্ন নেলী কটেজ নামের একটি ভাড়া বাসার দ্বিতীয় তলা থেকে মা ও মেয়ের মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখা যায়, দুটি মরদেহ আলাদা দুটি কক্ষে পড়ে আছে। মেয়ের দেহ খাটে এবং মায়ের দেহ পাশের ঘরে মেঝেতে পাওয়া যায়।

পুলিশ জানায়, ঘটনাস্থলের চেহারা দেখে মনে হয়েছে পরিকল্পিতভাবে তাঁদের হত্যা করা হয়েছে। প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে, তাঁদের শ্বাসরোধ করে হত্যা করা হয়েছে।

সন্দেহভাজন কবিরাজের গ্রেপ্তার

র‌্যাব-১১ সিপিসি-২ কুমিল্লার কোম্পানি অধিনায়ক মেজর সাদমান ইবনে আলম সাংবাদিকদের জানান, সিসিটিভি ফুটেজ এবং গোয়েন্দা তথ্য বিশ্লেষণের ভিত্তিতে আবদুর রব নামের ওই কবিরাজকে নাঙ্গলকোট থেকে আটক করা হয়েছে। তিনি নিয়মিত ওই বাসায় আসা–যাওয়া করতেন। নিহতদের সঙ্গে সর্বশেষ তিনিই কথা বলেছিলেন বলে প্রাথমিকভাবে নিশ্চিত হওয়া গেছে।

সিসিটিভি ফুটেজে দেখা যায়, মাথায় টুপি ও পাঞ্জাবি-পায়জামা পরিহিত একজন ব্যক্তিকে একাধিকবার ওই বাসায় যাতায়াত করতে। এখন তদন্তে দেখা হচ্ছে ফুটেজের সেই ব্যক্তিই কি আবদুর রব।

পরিবারের বর্ণনা

নিহত তাহমিনা বেগমের স্বামী নুরুল ইসলাম ছিলেন কুমিল্লা আদালতের কর্মকর্তা। তাঁর মৃত্যু হয় গত বছর। এরপর থেকে তিন সন্তান নিয়ে তাহমিনা বেগম এই ভাড়া বাসায় থাকতেন। বড় ছেলে তাজুল ইসলাম একজন আইনজীবী, ছোট ছেলে সাইফুল ইসলাম একটি শিল্পকারখানায় চাকরি করেন। ঘটনার রাতে দুই ভাই ঢাকা থেকে কুমিল্লায় ফেরেন। বাড়ি ফিরে তাঁরা তাঁদের মা ও বোনের নিথর দেহ দেখতে পান এবং পরে পুলিশে খবর দেন।

তাজুল ইসলাম বলেন, “আমরা বুঝতে পারছি না কে বা কারা আমাদের মা ও বোনকে হত্যা করল। ঘর থেকে কোনো মূল্যবান জিনিস খোয়া যায়নি। সবকিছু পরিকল্পিতভাবে হয়েছে বলে আমাদের ধারণা।”

বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীদের প্রতিক্রিয়া

খবর ছড়িয়ে পড়তেই কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের মধ্যে ক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে। সহপাঠীরা ক্যাম্পাসে জড়ো হয়ে হত্যাকারীদের দ্রুত গ্রেপ্তারের দাবি জানান। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী শারমিন আক্তার বলেন, “আমরা দ্রুত খুনিদের গ্রেপ্তার চাই। না হলে শিক্ষার্থীরা কঠোর কর্মসূচি দিতে বাধ্য হবে।”

বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক আবদুল হাকিম জানান, প্রশাসন ঘটনাটি নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করছে। প্রয়োজনে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেবে।

এলাকার মানুষের প্রতিক্রিয়া

কালিয়াজুরী এলাকার বাসিন্দা ও নেলী কটেজের মালিক আনিছুল ইসলাম বলেন, নিহত পরিবারটি ছিল শান্ত-স্বভাবের। তাঁরা কারও সঙ্গে শত্রুতা করতেন না। “আমরা চাই এই হত্যাকাণ্ডের সঠিক তদন্ত হোক এবং খুনিদের আইনের আওতায় আনা হোক,” বলেন তিনি।

এলাকাবাসীর মতে, এ ধরনের নৃশংস ঘটনা এলাকায় আগে ঘটেনি। ফলে তারা আতঙ্কিত হয়ে পড়েছেন।

পুলিশের প্রাথমিক ধারণা

কুমিল্লা কোতোয়ালি মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. মহিনুল ইসলাম বলেন, “ঘটনাটি পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড বলে মনে হচ্ছে। নিহতদের শরীরে আঘাতের চিহ্ন তেমন নেই, তবে মেয়ের গলায় দাগ পাওয়া গেছে। মায়ের একটি চোখ রক্তাক্ত ছিল। আমরা বিষয়টি গুরুত্ব সহকারে তদন্ত করছি।”

ভবিষ্যৎ তদন্ত ও করণীয়

আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর একাধিক ইউনিট বর্তমানে তদন্তে কাজ করছে। সিসিটিভি ফুটেজ বিশ্লেষণ, ফরেনসিক রিপোর্ট এবং আটককৃত কবিরাজের জিজ্ঞাসাবাদের মাধ্যমে সত্য উদঘাটনের চেষ্টা চলছে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী জানিয়েছে, তদন্ত শেষ না হওয়া পর্যন্ত চূড়ান্ত কিছু বলা যাচ্ছে না।

পরিশেষে

কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ও তাঁর মায়ের হত্যাকাণ্ড পুরো এলাকায় শোক ও আতঙ্ক ছড়িয়ে দিয়েছে। একদিকে পরিবারের আহাজারি, অন্যদিকে সহপাঠীদের ক্ষোভ—সব মিলিয়ে বিষয়টি এখন আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু। তবে সবাই আশা করছে, দ্রুত তদন্তের মাধ্যমে খুনিদের শনাক্ত করে আইনের আওতায় আনা হবে।

এম আর এম – ১২৪৩,Signalbd.com

মন্তব্য করুন
Advertisement

Related Articles

Back to top button