যুক্তরাষ্ট্রের ইসরায়েলকে ৫১ কোটি ডলারের বোমার সরঞ্জাম বিক্রি

যুক্তরাষ্ট্র সরকার সম্প্রতি ইসরায়েলের কাছে প্রায় ৫১ কোটি মার্কিন ডলারের বোমার সরঞ্জাম বিক্রির অনুমোদন দিয়েছে। এই বিক্রির মধ্যে রয়েছে অত্যাধুনিক ‘বম্ব গাইডেন্স কিট’সহ বিভিন্ন অস্ত্রসামগ্রী, যা বোমাকে নির্দিষ্ট লক্ষ্যে পৌঁছে দিতে সাহায্য করে। এই সিদ্ধান্ত মধ্যপ্রাচ্যের ক্রমবর্ধমান উত্তেজনা এবং বিশেষ করে ইরানের সঙ্গে ইসরায়েলের সাম্প্রতিক সংঘাতের প্রেক্ষিতে নেওয়া হয়েছে।
যুক্তরাষ্ট্রের ঘোষণায় কী আছে?
যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিরক্ষা নিরাপত্তা সহযোগিতা সংস্থা (ডিএসসিএ) এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, এই সরঞ্জাম বিক্রি ইসরায়েলকে বর্তমান ও ভবিষ্যতের হুমকি থেকে রক্ষা করতে সহায়তা করবে। তাদের বক্তব্য, ‘এই সরঞ্জাম ইসরায়েলকে তাদের সীমান্ত, গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা ও জনবসতি সুরক্ষায় আরও সক্ষম করে তুলবে।’
বিবৃতিতে আরও বলা হয়েছে, ‘যুক্তরাষ্ট্র ইসরায়েলের নিরাপত্তার প্রতি অঙ্গীকারবদ্ধ এবং ইসরায়েলের আত্মরক্ষার সক্ষমতা যাতে সর্বোচ্চ স্তরে থাকে, তা নিশ্চিত করা যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় স্বার্থের জন্য অপরিহার্য।’
ইসরায়েল-ইরান সংঘাতের পটভূমি
গত কয়েক বছরে মধ্যপ্রাচ্যে বিশেষ করে ইসরায়েল ও ইরানের মধ্যে উত্তেজনা ক্রমাগত বেড়েই চলেছে। ২০১৮ সালে, তখনকার মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ইরানের সঙ্গে পারমাণবিক চুক্তি থেকে যুক্তরাষ্ট্রকে প্রত্যাহার করেন। এরপর থেকে ইরান বিরোধী কঠোর অবস্থান গ্রহণ করেছে ওয়াশিংটন।
সম্প্রতি, ইরানের পারমাণবিক কেন্দ্র ও শীর্ষ বিজ্ঞানী ও সেনা কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে ইসরায়েল বড় ধরনের বিমান হামলা চালায়। ইসরায়েলের দাবি, তারা ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচি বন্ধ করাতে চায়, যা ইরান বেসামরিক বলে দাবি করলেও পশ্চিমা দেশগুলো মনে করে ইরান পারমাণবিক অস্ত্র তৈরির চেষ্টা করছে।
কংগ্রেসের অনুমোদন বাকি
যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তর ইতোমধ্যেই এই বোমার সরঞ্জাম বিক্রির অনুমোদন দিয়েছে এবং ডিএসসিএ বিষয়টি কংগ্রেসকে জানিয়েছে। তবে কংগ্রেসের আনুষ্ঠানিক অনুমোদন এখনও দেওয়া হয়নি। এই বিক্রয় ব্যাপারটি নিয়ে ওয়াশিংটনে বিভিন্ন পর্যায়ে আলোচনা এবং রাজনৈতিক চাপের মুখে রয়েছে।
মধ্যপ্রাচ্যে ভবিষ্যৎ কি?
গত সপ্তাহে ইরান ও ইসরায়েলের মধ্যে সাময়িক যুদ্ধবিরতি ঘোষণা হলেও ইসরায়েল দাবি করেছে তারা কখনোই ইরানকে পারমাণবিক শক্তি অর্জনে সহায়তা করবে না। ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু স্পষ্ট জানিয়েছেন, তারা ইরানকে পারমাণবিক স্থাপনা পুনরায় গড়ে তুলতে দেবেন না।
বিশ্লেষকরা বলছেন, এই ধরনের অস্ত্র সরবরাহ মধ্যপ্রাচ্যের উত্তেজনা আরও বাড়াতে পারে এবং দীর্ঘমেয়াদে অঞ্চলটির স্থিতিশীলতায় নতুন চ্যালেঞ্জ তৈরি করতে পারে। তবে যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষে এই পদক্ষেপ ইসরায়েলের প্রতিরক্ষা সক্ষমতা জোরদার করতেই গুরুত্বপূর্ণ।
মার্কিন পররাষ্ট্রনীতির পরিবর্তন
ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রশাসনে ইরানের বিরুদ্ধে কঠোর নীতি গ্রহণ করা হয়। তিনি ইরানের পারমাণবিক চুক্তি থেকে সরে গিয়ে কূটনৈতিক পরিবর্তে সামরিক পদক্ষেপের পথ নেন। তার এই নীতির ফলে ইরান ও ইসরায়েলের মধ্যে উত্তেজনা তীব্র হয়।
বর্তমান প্রশাসনও ইসরায়েলের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে এই ধরনের অস্ত্র বিক্রির মাধ্যমে সমর্থন বজায় রেখেছে। যুক্তরাষ্ট্র তাদের মিত্র ইসরায়েলের সঙ্গে প্রতিরক্ষা সহযোগিতা জোরদার করে মধ্যপ্রাচ্যের শক্তি সামঞ্জস্য রক্ষায় নজর রাখছে।
ইসরায়েলের জন্য কেন গুরুত্বপূর্ণ?
ইসরায়েল গত কয়েক বছর ধরে ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচি ও সামরিক হুমকির মুখোমুখি। তাদের লক্ষ্য হলো দেশের সুরক্ষা নিশ্চিত করা এবং সীমান্ত নিরাপত্তা জোরদার করা। এই বোমার গাইডেন্স কিট ইসরায়েলের কাছে অত্যন্ত মূল্যবান, কারণ এটি নির্দিষ্ট লক্ষ্যে সঠিকভাবে বোমা পৌঁছে দিতে সাহায্য করে, ফলে সামরিক হামলার সময় ক্ষতি কমানো যায় এবং অধিক কার্যকারিতা অর্জিত হয়।
কেন গুরুত্বপূর্ণ এই বিক্রি?
- মধ্যপ্রাচ্যের নিরাপত্তা ও স্থিতিশীলতা: যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েলের এই ধরনের সামরিক সহযোগিতা উত্তেজনা বাড়াতে পারে তবে অন্যদিকে ইসরায়েলকে নিরাপদ রাখতেও সাহায্য করে।
- পারমাণবিক হুমকি মোকাবিলা: ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচি নিয়ে আন্তর্জাতিক উদ্বেগের প্রেক্ষাপটে, ইসরায়েলের সক্ষমতা বৃদ্ধি প্রয়োজন।
- যুক্তরাষ্ট্রের আন্তর্জাতিক কূটনীতি: ট্রাম্প প্রশাসনের সময় থেকে পরিবর্তনশীল যুক্তরাষ্ট্রের নীতি, যেখানে সামরিক বিকল্প গুরুত্ব পেয়েছে কূটনৈতিক সমাধানের পাশাপাশি।
- বিশ্বজনীন প্রতিরক্ষা ও অস্ত্র বাজার: এই বিক্রি আন্তর্জাতিক অস্ত্র বাজারে বড় একটি লেনদেন, যা মার্কিন প্রতিরক্ষা শিল্পকে সমর্থন করে।
মধ্যপ্রাচ্যে নতুন করে উত্তেজনা বেড়েই চলেছে। যুক্তরাষ্ট্রের এই ৫১ কোটি ডলারের বোমার সরঞ্জাম বিক্রি ইসরায়েলের সামরিক সক্ষমতা বাড়াতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। তবে একই সঙ্গে এটি অঞ্চলটিতে উত্তেজনা ও সংঘাতের ঝুঁকিও বাড়াতে পারে। ভবিষ্যতে এই সিদ্ধান্ত কী প্রভাব ফেলবে, তা সময়ই বলবে।