গাজায় ইসরায়েলের হামলায় এক দিনে নিহত ৯৫

ফিলিস্তিনের গাজা উপত্যকায় ইসরায়েলি যুদ্ধবিমান ও সামরিক বাহিনীর ভয়াবহ বিমান হামলা থামছেই না। গতকাল ৩০ জুন, সোমবার এককালে একাধিক স্থানে বিমান হামলা চালিয়ে গাজা উপত্যকাকে এক বিরাট বেদনার মঞ্চে পরিণত করেছে ইসরায়েল। বিশেষ করে গাজা শহরের উত্তরাঞ্চলে অবস্থিত আল-বাকা ক্যাফেটেরিয়ায় ভয়াবহ বিমান হামলায় অন্তত ৩৯ জন নিহত হয়েছেন। সার্বিকভাবে গাজায় এক দিনে মৃত্যু হয়েছে ৯৫ জনের, আহত হয়েছেন আরও অসংখ্য মানুষ।
এই হামলায় নিহতদের মধ্যে রয়েছেন স্বনামধন্য সাংবাদিক ইসমাইল আবু হাতাবসহ অসংখ্য শিশু, নারী ও বৃদ্ধ। আহতদের মধ্যে অনেকেই এখনো আশঙ্কাজনক অবস্থায় হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। নিহতদের সংখ্যা প্রতিনিয়ত বাড়তে থাকায় মৃত্যুর প্রকৃত সংখ্যা আরো বেশি হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।
আল-বাকা ক্যাফে — যেখানে প্রাণ গুলিতে ছিন্নভিন্ন হলো শান্তির প্রতীক
গাজার আল-বাকা ক্যাফে ছিল সাধারণ মানুষের জন্য একটি শান্তির আসর। সেখানে জন্মদিন, পারিবারিক জমায়েত ও সামাজিক অনুষ্ঠান হতো। কিন্তু সেই স্বপ্ন বায়ু সেনার নির্বিচারে বোমাবর্ষণে ধ্বংসস্তুপে পরিণত হয়।
প্রত্যক্ষদর্শীরা বলছেন, হামলার সময় ক্যাফেটিতে শিশু, নারী এবং বৃদ্ধসহ অন্তত ৫০-৬০ জন মানুষ ছিলেন, যারা কোনোভাবেই সামরিক বা রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত ছিল না।
ইউনিসেফসহ বিভিন্ন মানবাধিকার সংস্থা অভিযোগ করেছে, এ হামলা ছিল একটি সিরিজ যুদ্ধবিরোধী অপরাধ। আল–জাজিরার সাংবাদিক হানি মাহমুদ জানান, হামলার আগে কোনো পূর্ব সতর্কতা দেওয়া হয়নি, তাই ওই স্থানে আটকে পড়ে অনেক নিরীহ মানুষ।
প্রত্যক্ষদর্শী ইয়াহিয়া শরিফ জানান, “ক্যাফেতে হামলার পর পুরো স্থানটা ধ্বংস হয়ে যায়। মাটিতে বিশাল এক গর্ত তৈরি হয়। সেখানে যারা ছিলেন তাদের ছিন্নভিন্ন অবস্থায় পাওয়া গেছে। এটা কোনো সামরিক লক্ষ্য ছিল না, বরং এক শান্তিপূর্ণ জমায়েত।”
গাজার অন্যান্য স্থানে বিমান হামলা — উদ্বাস্তুদের আশ্রয়কেন্দ্রে ভয়াবহ আঘাত
একই দিনে গাজা শহরের বিভিন্ন অংশেও হামলা চালানো হয়। ইয়াফা বিদ্যালয়, যেখানে শতশত উদ্বাস্তু ফিলিস্তিনি আশ্রয় নিয়েছিলেন, সেখানে হামলা হয়। ঐ স্কুল থেকে আশ্রয়প্রার্থীদের দ্রুত তাড়ানো হয়, তাদের দেওয়া সময় ছিল মাত্র পাঁচ মিনিট, যা একেবারেই অমানবিক বলে বিচার করা হচ্ছে।
গাজার মধ্যাঞ্চলের দেইর–এল–বালাহ এলাকার আল–আকসা হাসপাতাল প্রাঙ্গণেও ইসরায়েলি বায়ুসেনা হামলা চালিয়েছে, যেখানে হাজার হাজার উদ্বাস্তু নির্ঘুম। এই হাসপাতাল ও আশ্রয়কেন্দ্রগুলোর ওপর হামলা আন্তর্জাতিক মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ এনে বিশ্বজুড়ে সমালোচনার ঝড় উঠেছে।
গাজার বেদনা — শিশু থেকে বৃদ্ধ, কেউ বাঁচলো না
ইসরায়েলি হামলার ফলে গাজা উপত্যকা এখন মানবতার এক ভয়াবহ রূপে পরিণত হয়েছে। শিশুদের চিৎকার, নারী ও বৃদ্ধদের কান্নার ধ্বনি চারদিকে। বহু পরিবার সম্পূর্ণ নিঃস্ব, গৃহহীন। সারা বিশ্ব মানবিক সহায়তার হাত বাড়িয়ে দিয়েছে, তবে নিরাপত্তা ও স্থায়ী শান্তি দূরত্বে।
গাজা থেকে সম্প্রতি প্রকাশিত ছবি ও ভিডিওগুলো হৃদয় ভেঙে দেয়। বহু শিশু, মা ও বৃদ্ধা আহত অবস্থায় হাসপাতালে ভর্তি, অনেকেই জীবনের জন্য লড়ছে। বেসামরিক লোকজনের ওপর এমন আঘাত আন্তর্জাতিক আইনে যুদ্ধবিরোধী অপরাধ হিসেবে বিবেচিত।
আন্তর্জাতিক প্রতিক্রিয়া ও মানবাধিকার অধিকারীদের কণ্ঠ
জাতিসংঘ ও বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (WHO) গাজার বেসামরিক অবকাঠামোর ওপর হামলার কঠোর নিন্দা জানিয়েছে। মানবাধিকার সংস্থা অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল বলেছে, “নিরীহ বেসামরিক নাগরিকদের ওপর এই হামলা মানবতাবিরোধী অপরাধ এবং আন্তর্জাতিক আইন লঙ্ঘন।”
বিভিন্ন দেশ এবং আন্তর্জাতিক নেতারা ইসরায়েলের এই নির্বিচারে বিমান হামলার কড়া নিন্দা জানিয়েছেন এবং সহিংসতা অবিলম্বে বন্ধের আহ্বান জানাচ্ছেন।
গাজার শান্তি ও পুনর্গঠনের আশায়
দীর্ঘ দিন ধরে সংঘাতের জের থেকে গাজা উপত্যকা আজও শান্তির অপেক্ষায়। বারবারের এই ধরনের হামলা মানুষকে আরও ক্ষতিগ্রস্ত করছে। আন্তর্জাতিক কমিউনিটি, ফিলিস্তিনি এবং ইসরায়েলি নেতাদের একাত্মতা ও আলোচনার মাধ্যমে স্থায়ী শান্তি প্রতিষ্ঠার কোনো বিকল্প নেই।
গাজার সাধারণ মানুষ শুধুমাত্র শান্তিতে বাঁচতে চায়, তাদের জীবন ও স্বপ্নগুলো আর রক্তাক্ত হতে চাই না। বিশ্ববাসীকে এখন গাজার মানবিক পরিস্থিতি বুঝে সহায়তার হাত বাড়াতে হবে এবং সামরিক সংঘাত দ্রুত বন্ধ করতে হবে।
সংক্ষেপে:
- গাজা উপত্যকায় ৩০ জুন একদিনে ইসরায়েলের বিমান হামলায় নিহত ৯৫, আহত অনেকে।
- আল–বাকা ক্যাফেতে হামলায় নিহত ৩৯, আহত অসংখ্য।
- ইয়াফা বিদ্যালয় ও আল–আকসা হাসপাতালসহ অন্যান্য উদ্বাস্তু আশ্রয়কেন্দ্রেও হামলা।
- নিহতদের মধ্যে সাংবাদিক, শিশু ও নারী রয়েছে।
- হামলা পূর্বে কোনো সতর্কতা দেওয়া হয়নি।
- আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থা ও জাতিসংঘ নিন্দা প্রকাশ করেছে।
- বিশ্ব শান্তির জন্য দ্রুত যুদ্ধবিরোধী পদক্ষেপের দাবি।
কীভাবে সাহায্য করবেন:
গাজার মানুষের পাশে দাঁড়াতে চাইলে বিভিন্ন আন্তর্জাতিক মানবিক সংগঠন যেমন ইউএনএইচসিআর, ইউনিসেফ ও স্থানীয় এনজিওর মাধ্যমে দান ও সহযোগিতা করতে পারেন।
সিংগনালবিডি’র পক্ষ থেকে:
গাজার নিরীহ মানুষদের জন্য আমরা সহমর্মিতা ও শান্তির আকাঙ্ক্ষা ব্যক্ত করছি। তাদের জীবন ও স্বপ্ন বাঁচাতে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে আরও উদ্যোগ নিতে হবে।