
বাংলাদেশের দক্ষিণ-পশ্চিম ও দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলে আগামী দিনগুলোতে অতি ভারী বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে। খুলনা, বরিশাল ও চট্টগ্রাম বিভাগে আগামী ২৪ ঘণ্টার মধ্যে মাঝারি থেকে ভারী এবং কোথাও কোথাও অতি ভারী বৃষ্টির আভাস দিয়েছে বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদপ্তর।
এই তথ্য আজ বুধবার (৩০ জুলাই) বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদপ্তরের জ্যেষ্ঠ আবহাওয়াবিদ ড. মো. ওমর ফারুকের কাছে থেকে জানা গেছে। তিনি জানান, আবহাওয়া পরিবর্তনের প্রেক্ষাপটে এই বিভাগগুলিতে বিশেষ সতর্কতা অবলম্বন করা প্রয়োজন।
বিস্তারিত আবহাওয়া পূর্বাভাস
আবহাওয়া অধিদপ্তরের সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, আগামী বৃহস্পতিবার (৩১ জুলাই) সকাল ৯টা পর্যন্ত ঢাকা, খুলনা, বরিশাল ও চট্টগ্রাম বিভাগের অধিকাংশ এলাকা, পাশাপাশি রংপুর, রাজশাহী, ময়মনসিংহ ও সিলেটের অনেক এলাকায় দমকা হাওয়াসহ হালকা থেকে মাঝারি ধরনের বৃষ্টি বা বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে। সারাদেশে তাপমাত্রা দিন-রাত প্রায় অপরিবর্তিত থাকবে।
পরবর্তী ২৪ ঘণ্টায়, অর্থাৎ বৃহস্পতিবার সকাল ৯টা থেকে শুক্রবার সকাল ৯টা পর্যন্ত, ঢাকা, ময়মনসিংহ, খুলনা, বরিশাল, চট্টগ্রাম ও সিলেটের অধিকাংশ এলাকায় এবং রাজশাহী ও রংপুরের অনেক জায়গায় দমকা হাওয়া সহ বৃষ্টি অব্যাহত থাকতে পারে। বিশেষ করে খুলনা, বরিশাল ও চট্টগ্রাম বিভাগে মাঝারি থেকে অতি ভারী বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা বেশি থাকবে।
শুক্রবার (১ আগস্ট) সকাল ৯টা থেকে শনিবার (২ আগস্ট) সকাল ৯টা পর্যন্ত বরিশাল, চট্টগ্রাম ও সিলেটের অধিকাংশ এলাকা, এবং রংপুর, রাজশাহী, ঢাকা, ময়মনসিংহ ও খুলনার অনেক জায়গায় দমকা হাওয়া সহ হালকা থেকে মাঝারি ধরনের বৃষ্টি হতে পারে। বরিশাল ও চট্টগ্রাম বিভাগে ভারী থেকে অতি ভারী বৃষ্টিপাতের শঙ্কা রয়েছে।
শনিবার (২ আগস্ট) থেকে রবিবার (৩ আগস্ট) পর্যন্ত রংপুর, রাজশাহী, ঢাকা, ময়মনসিংহ, সিলেট, খুলনা, বরিশাল ও চট্টগ্রামের অধিকাংশ এলাকায় হালকা থেকে মাঝারি বৃষ্টি ও দমকা হাওয়া অব্যাহত থাকবে। সেই সঙ্গে সারাদেশে কোথাও কোথাও ভারী থেকে অতি ভারী বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা রয়েছে। তাপমাত্রা সামান্য কমার আশঙ্কাও করা হচ্ছে।
রোববার (৩ আগস্ট) সকাল থেকে পরবর্তী ২৪ ঘণ্টায় সারাদেশেই বৃষ্টিপাতের প্রবণতা অব্যাহত থাকতে পারে। এই দিনগুলিতে দমকা হাওয়া, বজ্রপাত এবং মাঝারি থেকে ভারী বৃষ্টির কারণে ভ্রমণ ও কৃষি কাজে সতর্কতা অবলম্বন করার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।
আবহাওয়ার পেছনের কারণ
বাংলাদেশের আবহাওয়া বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বর্তমানে বঙ্গোপসাগরে সক্রিয় মৌসুমি বায়ু এবং নিম্নচাপের অস্থায়ী অবস্থান বাতাসের গতিপথ ও আর্দ্রতার মাত্রা বাড়িয়ে দিয়েছে। এই কারণে দক্ষিণ-পশ্চিম ও দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলের আকাশ মেঘাচ্ছন্ন ও বৃষ্টিপূর্ণ থাকবে।
এছাড়া, গ্রীষ্মকালীন বায়ুপ্রবাহের কারণে বাতাসের গতিতে ওঠানামা, দমকা হাওয়া ও বজ্রপাতের কারণ তৈরি হয়েছে। বিশেষ করে খুলনা, বরিশাল ও চট্টগ্রাম বিভাগের উপকূলীয় এলাকায় বৃষ্টিপাতের পরিমাণ অনেক বেশি হতে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন আবহাওয়াবিদরা।
প্রভাব ও প্রস্তুতি
বিভিন্ন বিভাগে ভারী থেকে অতি ভারী বৃষ্টির কারণে নিকটবর্তী এলাকায় জলাবদ্ধতার সম্ভাবনা রয়েছে। কৃষকরা এখন থেকেই সতর্ক হতে বলছেন বিশেষজ্ঞরা, কারণ অতিরিক্ত বৃষ্টিপাত ফসলের ক্ষতির কারণ হতে পারে।
শহরাঞ্চলে দুর্বল বৃষ্টির সঙ্গে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হতে পারে, যা যাতায়াত ও দৈনন্দিন জীবনে বিঘ্ন ঘটাবে। বিশেষ করে খুলনা, বরিশাল ও চট্টগ্রাম শহরে যানজট ও দুর্ভোগের আশঙ্কা করছেন নগর কর্তৃপক্ষ।
সরকারি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোকে জরুরি প্রস্তুতি নিতে বলা হয়েছে। বিআইডব্লিউটিএ, পানি উন্নয়ন বোর্ড, পরিবহন বিভাগ এবং দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তরকে বিশেষভাবে সচেতন থাকার নির্দেশ দেয়া হয়েছে।
আবহাওয়া পরিবর্তনের প্রভাব: দীর্ঘমেয়াদি ভাবনা
বাংলাদেশ একটি জলাভূমি এবং নদীমুখী দেশ। বৃষ্টি ও বন্যার প্রবণতা বাড়তে থাকায় মানুষের জীবনযাত্রা এবং কৃষিক্ষেত্রে ব্যাপক প্রভাব পড়ছে। আবহাওয়া পরিবর্তনের কারণে বর্ষার ধরন ও সময়সূচিতে পরিবর্তন আসছে, যা পরবর্তীতে খাদ্য নিরাপত্তা, অর্থনীতি এবং জনস্বাস্থ্যের ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে।
এই প্রেক্ষিতে, আবহাওয়া অধিদপ্তর ও পরিবেশ বিশেষজ্ঞরা বলছেন, দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে বিশেষ করে নিম্নাঞ্চল ও উপকূলীয় এলাকায় সঠিক দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা পরিকল্পনা গ্রহণ করা এখন সময়ের দাবি।
ভ্রমণ ও জনসাধারণের জন্য সতর্কবার্তা
- ভ্রমণ পরিকল্পনায় সতর্কতা: খুলনা, বরিশাল ও চট্টগ্রামসহ দক্ষিণাঞ্চলের বিভিন্ন রুটে যাত্রী ও যানবাহন চলাচলে দেরি হতে পারে। দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়ায় অপ্রয়োজনীয় ভ্রমণ এড়াতে বলা হয়েছে।
- কৃষক ও মৎস্যজীবীদের জন্য: যেকোনো ভারী বৃষ্টিপাত ও বন্যার জন্য প্রস্তুতি নিতে হবে। পানির নিকাশি ব্যবস্থা ঠিক রাখতে হবে। বিশেষ করে মাছ চাষিদের তাদের খামারে নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করতে হবে।
- বাসিন্দাদের জন্য: ঘরবাড়ি ঝুঁকিপূর্ণ হলে তা মেরামত বা সুরক্ষার ব্যবস্থা নিতে হবে। দুর্যোগকালীন সেবাগুলো সম্পর্কে স্থানীয় কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ রাখতে হবে।
সারাদেশে পাঁচ দিনের বৃষ্টিপাত প্রবণতা অব্যাহত
আবহাওয়া অধিদপ্তর জানিয়েছে, আগামী পাঁচ দিনের মধ্যে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে বৃষ্টিপাতের প্রবণতা বজায় থাকবে। বিশেষ করে খুলনা, বরিশাল ও চট্টগ্রাম বিভাগের কয়েকটি এলাকায় মাঝারি থেকে ভারী বৃষ্টিপাত হতে পারে। অন্যান্য অঞ্চলেও হালকা থেকে মাঝারি বৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে।
আবহাওয়াবিদরা সতর্ক করেছেন, নদীর পানি বাড়ার কারণে প্লাবন ও জলাবদ্ধতার পরিস্থিতি দেখা দিতে পারে। তাই জনসাধারণকে সজাগ থাকার জন্য অনুরোধ জানানো হয়েছে।
বাংলাদেশের আবহাওয়া বর্তমানে বেশ অনিশ্চিত। খুলনা, বরিশাল ও চট্টগ্রাম বিভাগসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে ভারী বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা স্বাভাবিক জীবনে ব্যাঘাত ঘটাতে পারে। সরকারি এবং ব্যক্তিগত পর্যায়ে যথাযথ প্রস্তুতি নেওয়া এখন অত্যন্ত জরুরি।
আসন্ন কয়েকদিনে আবহাওয়া পরিবর্তনের ওপর বিশেষ নজর রাখা এবং সরকারি দফতরগুলোর সঙ্গে সহযোগিতা করে জনগণ নিজেদের নিরাপদ রাখাই এখন সময়ের চাহিদা।
MAH – 12039, Signalbd.com