
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান বলেছেন, সংস্কার নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর আলোচনায় কিছু বিষয়ে ঐকমত্য হলেও অনেক বিষয়ে মতভেদ রয়েই গেছে। তবে এ ভিন্নতা গণতান্ত্রিক চর্চারই অংশ। তাই যেসব বিষয়ে ঐকমত্যে পৌঁছানো সম্ভব নয়, সেগুলো জনগণের হাতে ছেড়ে দেয়ার আহ্বান জানিয়েছেন তিনি। সোমবার (৮ সেপ্টেম্বর) ঠাকুরগাঁও জেলা বিএনপির দ্বিবার্ষিক সম্মেলনে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে এসব কথা বলেন তিনি।
তারেক রহমানের বক্তব্যের মূল বিষয়
তারেক রহমান বলেন, জনগণই বিএনপির রাজনৈতিক শক্তির মূল উৎস। তাই জনগণের মতামত ছাড়া কোনো সিদ্ধান্ত টেকসই হতে পারে না। তিনি অভিযোগ করে বলেন, বর্তমান সরকার জনগণের ভোটাধিকার কেড়ে নিয়েছে, নির্বাচনী প্রক্রিয়া ধ্বংস করেছে এবং প্রায় ৩ কোটির বেশি নতুন ভোটারকে ভোটাধিকার থেকে বঞ্চিত করেছে।
তারেক রহমান আরও বলেন, “যদি রাজনৈতিক দলগুলো নিজেদের মধ্যেই আলাপ-আলোচনায় আটকে থাকে এবং জনগণকে বাইরে রাখা হয়, তবে অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতি তৈরি হতে পারে। এতে স্বৈরাচারের পুনরুত্থান ঘটতে পারে।”
বিএনপির সংস্কার প্রক্রিয়া
বিএনপির অভ্যন্তরে দলীয় কাঠামো সংস্কার নিয়ে আলোচনা চলছে বেশ কিছুদিন ধরে। একাধিক রাজনৈতিক ইস্যুতে ভিন্ন মত থাকলেও, সামগ্রিকভাবে দলকে নতুনভাবে সংগঠিত করার বিষয়ে সকলে একমত। নির্বাচনী প্রক্রিয়ায় অংশগ্রহণের প্রস্তুতি এবং সাংগঠনিক শক্তি বৃদ্ধি করাই এখন দলের অগ্রাধিকার।
২০১৪ ও ২০১৮ সালের নির্বাচন বর্জনের পর বিএনপি যে চাপে পড়েছিল, সেখান থেকে বেরিয়ে আসতে দল এখন নতুন কৌশল গ্রহণ করেছে। সংস্কারের মাধ্যমে নেতৃত্ব থেকে শুরু করে স্থানীয় পর্যায় পর্যন্ত বিএনপিকে পুনর্গঠন করার চেষ্টা করছে বলে জানিয়েছেন দলের নেতারা।
রাজনৈতিক প্রভাব ও প্রতিক্রিয়া
তারেক রহমানের এই বক্তব্য রাজনৈতিক অঙ্গনে নতুন আলোচনার জন্ম দিয়েছে। বিএনপির পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, জনগণের মতামতের ওপর গুরুত্ব আরোপ করাই গণতান্ত্রিক সংস্কৃতিকে টিকিয়ে রাখার মূল উপায়। অন্যদিকে, ক্ষমতাসীন দলের নেতারা বলছেন, তারেক রহমানের বক্তব্যের মধ্যে স্পষ্ট কোনো রোডম্যাপ নেই, বরং এটি জনগণকে বিভ্রান্ত করার কৌশল।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, বিএনপি জনগণের কাছে সরাসরি বার্তা পাঠাতে চাইছে যে দলটি গণতান্ত্রিক মূল্যবোধে বিশ্বাসী। তবে বাস্তবে জনগণকে সিদ্ধান্তগ্রহণ প্রক্রিয়ায় কতটা সম্পৃক্ত করা সম্ভব, তা এখনো অনিশ্চিত।
গণতন্ত্র ও জনগণের ভূমিকা
গণতান্ত্রিক সমাজে মতভেদ স্বাভাবিক বিষয় উল্লেখ করে তারেক রহমান বলেন, “সব রাজনৈতিক প্রশ্নে একমত হওয়া সম্ভব নয়। বরং জনগণের হাতে বিষয়গুলো ছেড়ে দিলে গণতন্ত্র আরও শক্তিশালী হবে।”
এ বক্তব্যে তিনি ইঙ্গিত দিয়েছেন যে, নির্বাচনী প্রক্রিয়া ও গণভোটের মাধ্যমেই জনগণের মতামত প্রতিফলিত করা উচিত। বিশেষ করে তরুণ প্রজন্মকে রাজনীতিতে সম্পৃক্ত করার ওপর জোর দেন তিনি।
ভবিষ্যতের পথচলা
তারেক রহমান জানিয়েছেন, গণতান্ত্রিক অধিকার পুনঃপ্রতিষ্ঠা না হওয়া পর্যন্ত বিএনপির আন্দোলন অব্যাহত থাকবে। তিনি বলেন, “জনগণের শান্তি-শৃঙ্খলা নষ্ট হয় এমন কোনো পথ আমরা বেছে নেব না। তবে জনগণের অধিকার নিশ্চিত করতে আমরা যেকোনো হুমকির মোকাবিলা করব।”
এ সময় তিনি দলীয় নেতাকর্মীদের ঐক্যবদ্ধ থাকার আহ্বান জানান এবং জনগণের আস্থা অর্জনের মাধ্যমে গণআন্দোলনকে শক্তিশালী করার প্রতিশ্রুতি দেন।
পরিশেষে
তারেক রহমানের বক্তব্যে স্পষ্ট হয়েছে, বিএনপি এখন জনগণের মতামতকেই চূড়ান্ত সিদ্ধান্তের মূল ভিত্তি হিসেবে দেখতে চায়। যদিও বাস্তবতায় এ কৌশল কতটা কার্যকর হবে, তা নির্ভর করছে আগামীর রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটের ওপর। তবে একটি বিষয় পরিষ্কার—বিএনপি গণতন্ত্র ও জনগণের অধিকার পুনঃপ্রতিষ্ঠার দাবিকে সামনে রেখেই তাদের আন্দোলন চালিয়ে যেতে চাইছে।
এম আর এম – ১২৩৯,Signalbd.com