অর্থনীতি

ফ্ল্যাট কেনার সহজ গাইড: ঋণ ও প্রয়োজনীয় কাগজপত্র

Advertisement

নিজস্ব ফ্ল্যাট বা বাড়ি কেনার স্বপ্ন সবারই থাকে। কিন্তু সীমিত আয়ের মানুষের সবচেয়ে বড় বাধা হলো অর্থের জোগান। ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো বহু বছর ধরে গৃহঋণ দিয়ে আসছে। তবুও ঋণ নেওয়ার শর্ত, কাগজপত্র কিংবা কিস্তি শোধের নিয়ম নিয়ে সাধারণ মানুষের জানাবোঝার ঘাটতি রয়ে যায়।

গৃহঋণ: কী, কেন ও কিভাবে?

গৃহঋণ হলো একটি দীর্ঘমেয়াদি ঋণ, যা সাধারণত ৫ লাখ থেকে ২ কোটি টাকা পর্যন্ত দেওয়া হয়। ব্যাংকভেদে এ পরিমাণ কিছুটা কমবেশি হতে পারে। তবে একটি বিষয় সবখানেই প্রায় একই—ঋণ সাধারণত ৭০ বনাম ৩০ অনুপাতে দেওয়া হয়। অর্থাৎ ১ কোটি টাকার ফ্ল্যাট কিনতে চাইলে ব্যাংক দেবে সর্বোচ্চ ৭০ লাখ টাকা, বাকিটা গ্রাহককে নিজের জোগান দিতে হবে। ব্যাংকগুলো এখনো ১২ থেকে ১৩ শতাংশ পর্যন্ত সুদে আবাসন খাতে ঋণ দিচ্ছে। আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো অবশ্য ফ্ল্যাট কেনার ঋণে ১৫ থেকে ১৬ শতাংশ পর্যন্ত সুদ নিচ্ছে। ঋণ পরিমোধের মেয়াদ ১ বছর থেকে শুরু করে ২৫ বছর পর্যন্ত।

গৃহঋণের জন্য যোগ্যতা

সরকারি-বেসরকারি চাকরিজীবী, ব্যবসায়ী, শিক্ষক, চিকিৎসক, প্রকৌশলী, এমনকি স্বনির্ভর ব্যক্তি বা বাড়ির মালিক—সবার জন্যই গৃহঋণের দরজা খোলা। তবে বয়স হতে হবে ২৫ থেকে ৬৫ বছরের মধ্যে। চাকরিজীবীদের মাসিক আয় থাকতে হবে ন্যূনতম ২৫ থেকে ৩০ হাজার টাকা। তবে আপনি কতটা ঋণ পাবেন, সেটা নির্ভর করবে আপনার আয়ের পরিমাণ, আয়ের উৎসসহ বিভিন্ন বিবেচনা থেকে। বিষয়টি নির্ভর করবে সংশ্লিষ্ট ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠানের ওপর।

গৃহঋণ নেওয়ার আগে যা জানা জরুরি

নিজের বাড়ি বা ফ্ল্যাট কেনা দীর্ঘমেয়াদি আর্থিক বিনিয়োগ। তাই ঋণ নেওয়ার আগে আয়ের স্থায়িত্ব, ব্যয়ের ধরন, সঞ্চয়ের লক্ষ্য ও ভবিষ্যতের আর্থিক পরিকল্পনা পরিষ্কারভাবে নির্ধারণ করা জরুরি। সঠিক পরিকল্পনা ও নির্ভরযোগ্য আর্থিক প্রতিষ্ঠানের সহায়তা পেলে স্বপ্ন পূরণে বাধা থাকে না।

প্রয়োজনীয় কাগজপত্র

অনেকেই মনে করেন, ব্যাংক থেকে ঋণ নেওয়া মানেই প্রচুর কাগজপত্রের ঝামেলা। বাস্তবে কাগজপত্র সঠিক থাকলে প্রক্রিয়াটি বেশ সহজ। ফ্ল্যাট বা জমির ঋণের ক্ষেত্রে লাগবে—

  • ডেভেলপারের সঙ্গে করা ক্রয়চুক্তির সত্যায়িত কপি
  • জমির মালিক ও ডেভেলপারের চুক্তিপত্রের কপি
  • অনুমোদিত নকশা ও অনুমোদনপত্রের কপি
  • রেজিস্ট্রি বায়নাপত্র ও বরাদ্দপত্র

বাড়ি নির্মাণ ঋণের জন্য দরকার হবে—

  • অনুমোদিত নকশা
  • মূল দলিল ও নামজারি খতিয়ান
  • খাজনা রসিদ
  • সিএস, এসএ, আরএস, বিএস খতিয়ানের কপি
  • ১২ বছরের তল্লাশিসহ নির্দায় সনদ (এনইসি)
  • সরকারি জমির ক্ষেত্রে বরাদ্দপত্র ও দখল হস্তান্তরপত্র

যাচাই করার বিষয়সমূহ

গৃহঋণ নেওয়ার আগে কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিষয় যাচাই করা জরুরি। সেগুলো হলো—

  • কেনা ফ্ল্যাট বা জমির মালিকানার প্রমাণ
  • নামজারি ঠিক আছে কি না
  • জমির হালনাগাদ খাজনা পরিশোধ করা হয়েছে কি না
  • ভবনের জন্য রাজউকের অনুমোদন আছে কি না
  • ফ্ল্যাটটি অন্য কারও কাছে আগে বিক্রি হয়েছে কি না
  • কোনো ব্যাংক বা প্রতিষ্ঠানের কাছে ইতিমধ্যেই বন্ধক আছে কি না

সবচেয়ে জরুরি হলো ভবিষ্যতের ঝামেলা এড়াতে সব ধরনের মাশুল, নিবন্ধন ফি ও দায়দায়িত্ব স্পষ্টভাবে জেনে নেওয়া।

মর্টগেজ বা বন্ধকি ঋণ

অনেকে বাড়ি বা ফ্ল্যাট কেনার সময় বন্ধকি ঋণ নেন। এটি মূলত দীর্ঘমেয়াদি ঋণ, যেখানে স্থায়ী সম্পদ জামানত রাখতে হয়। সবচেয়ে প্রচলিত জামানত হলো জমির দলিল। সাধারণত ৫ থেকে ২০ বছর মেয়াদে এ ঋণ নেওয়া যায়।

প্রাথমিক আবেদনের সময় লাগবে জাতীয় পরিচয়পত্র, গত এক বছরের ব্যাংক বিবরণী, ট্যাক্স ক্লিয়ারেন্স সার্টিফিকেট, ইউটিলিটি বিলের কপি, স্যালারি সার্টিফিকেট, জামিনদারের কাগজপত্র ইত্যাদি।

শেষমেশ বলা যায়, স্বপ্নের ফ্ল্যাট বা বাড়ির পথে গৃহঋণ বড় সহায়। শর্ত, কাগজপত্র ও প্রক্রিয়া সম্পর্কে আগেভাগে ধারণা রাখলে অযথা দুশ্চিন্তা বা জটিলতায় পড়তে হয় না। নিয়ম মেনে চললে স্বপ্নের বাড়ি হাতের নাগালেই।

MAH – 12605,  Signalbd.com

মন্তব্য করুন
Advertisement

Related Articles

Back to top button