অর্থনৈতিক অঞ্চলে বিনিয়োগকারীদের আহ্বান: সরকার যেন প্রতিশ্রুতি রক্ষা করে

বাংলাদেশে বিনিয়োগের পরিবেশ উন্নত হলেও নীতির অস্থিরতা, আমলাতান্ত্রিক জটিলতা এবং অবকাঠামোগত দুর্বলতা এখনো বড় চ্যালেঞ্জ হিসেবে থাকছে বলে মনে করছেন দেশি–বিদেশি বিনিয়োগকারীরা। তাঁদের আহ্বান, বর্তমান সরকার যেসব প্রতিশ্রুতি দিয়েছে, তা যেন বাস্তবায়ন করা হয়।
আজ মঙ্গলবার নারায়ণগঞ্জের আড়াইহাজারে অবস্থিত বাংলাদেশ বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল (BSEZ) পরিদর্শনকালে বিনিয়োগকারীরা এসব মতামত তুলে ধরেন। এই সফর আয়োজন করা হয় চার দিনব্যাপী আন্তর্জাতিক বিনিয়োগ সম্মেলনের অংশ হিসেবে।
আন্তর্জাতিক বিনিয়োগকারীদের সফর
চীন, জাপান, যুক্তরাষ্ট্র, ভারত, সৌদি আরব ও সংযুক্ত আরব আমিরাতসহ সাতটি দেশের ৩৬ জন বিনিয়োগকারী ও প্রতিষ্ঠান প্রতিনিধি আজ BSEZ পরিদর্শনে যান। সফরে তাঁরা জাপানি অর্থনৈতিক অঞ্চলের অবকাঠামো ও সুযোগ-সুবিধা ঘুরে দেখেন, বিশেষ করে সেখানে অবস্থিত সিঙ্গার বাংলাদেশ লিমিটেডের কারখানা।
BSEZ-এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক তারো কাওয়াচি বলেন, “মাত্র ২০ মাসে সিঙ্গার তাদের কারখানা নির্মাণ শেষ করে ৭৮ মিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ করেছে। এখান থেকে প্রতি মাসে ৫০ হাজার ফ্রিজ ও ১০ হাজার টেলিভিশন উৎপাদিত হচ্ছে।”
তিনি আরও জানান, বন্ডেড ট্রান্সপোর্ট সুবিধা থাকায় কাঁচামাল আমদানিতে কাস্টমস জটিলতা নেই, ফলে বিনিয়োগকারীরা নির্বিঘ্নে কাজ করতে পারবেন।
বিনিয়োগকারীদের মতামত
চীনা প্রযুক্তি কোম্পানি জিনিউ বাংলাদেশ লিমিটেডের সিইও নিকোলাস কী বলেন, “বাংলাদেশে বিনিয়োগের সম্ভাবনা বিশাল, তবে সরকারের নীতির ধারাবাহিকতা না থাকা বড় বাধা।”
চীনের গ্রিন অ্যান্ড স্মার্ট এনার্জি অর্গানাইজেশন-এর প্রতিনিধি উইও জিয়ানবো বলেন, “বাংলাদেশের বাজার আকর্ষণীয় হলেও অবকাঠামোগত দুর্বলতা ও সাংস্কৃতিক ব্যবধান চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়ায়।”
যুক্তরাষ্ট্র থেকে আগত প্রবাসী বিনিয়োগকারী ইফতেখার মাহমুদ বলেন, “BSEZ বিনিয়োগের জন্য পুরোপুরি প্রস্তুত। সরকারের সদিচ্ছা থাকলে এমন অঞ্চল আরও গড়ে তোলা সম্ভব।”
সমঝোতা চুক্তি সই
আজ সকালে সুইডেনভিত্তিক নিলর্ন বাংলাদেশ নামের একটি গার্মেন্টস অ্যাকসেসরিজ উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে সমঝোতা চুক্তি করেছে BSEZ কর্তৃপক্ষ। প্রতিষ্ঠানের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. আব্দুল কাইয়ুম জানান, তাঁরা ধাপে ধাপে ১.১০ থেকে ১.৪০ কোটি মার্কিন ডলার বিনিয়োগ করবেন এবং এতে প্রায় ৩০০ কর্মসংস্থান তৈরি হবে।
তিনি বলেন, “স্বতন্ত্রভাবে কারখানা স্থাপন করলে অনেক বাধা থাকে। সরকার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে, অর্থনৈতিক অঞ্চলে সব সুবিধা দেবে। সেই আশাতেই আমরা এগোচ্ছি, তবে সরকারকে প্রতিশ্রুতি রক্ষা করতে হবে।”
সরকারের বক্তব্য
প্রধান উপদেষ্টার উপ-প্রেস সচিব মোহাম্মদ আবুল কালাম আজাদ মজুমদার জানান, “বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকার বিনিয়োগবান্ধব পরিবেশ তৈরিতে কাজ করছে। ওয়ানস্টপ সার্ভিস সেন্টার চালু হয়েছে এবং নিয়ন্ত্রণমূলক বাধা ও সুশাসনের ঘাটতি দূর করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।”