খেলা

ইসরায়েলি হামলায় ফুটবলার নিহত, মৃত্যুর কারণ গোপন করায় উয়েফার বিরুদ্ধে ক্ষোভ ভক্তদের

Advertisement

গত সপ্তাহে গাজার দক্ষিণ অঞ্চলে ইসরায়েলি হামলায় মারা গেছেন ফিলিস্তিনি ফুটবলার সুলাইমান আল-ওবাই, যাকে ‘ফিলিস্তিনি পেলে’ বলা হয়। দীর্ঘদিনের ক্রীড়া জীবনে অসাধারণ অবদান রাখা এই ফুটবলারের মৃত্যুকে ঘিরে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ও ফুটবল ভক্তদের মধ্যে ব্যাপক ক্ষোভ দেখা দিয়েছে। এর প্রধান কারণ হলো ইউরোপীয় ফুটবল সংস্থা উয়েফার পক্ষ থেকে মৃত্যুর প্রকৃত কারণ গোপন রাখা এবং ইসরায়েলি বাহিনীর ভূমিকা স্পষ্ট না করানো। এই নিয়ে ব্যাপক সমালোচনা চলছে।

ইসরায়েলি হামলায় সুলাইমান আল-ওবাইয়ের মৃত্যু: ঘটনা ও উয়েফার প্রতিক্রিয়া

সুলাইমান আল-ওবাই ৪১ বছর বয়সে গাজার দক্ষিণে খাদ্য সহায়তার জন্য অপেক্ষারত অবস্থায় ইসরায়েলি সেনাবাহিনীর গুলিতে নিহত হন। আন্তর্জাতিক ফুটবল মহল ও বিশেষ করে উয়েফা তাঁর প্রতি শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করলেও মৃত্যুর পেছনের রাজনৈতিক বাস্তবতা এবং হামলার দায় স্বীকার থেকে তারা বিরত রয়েছে। উয়েফার পক্ষ থেকে শুধু জানানো হয়েছে, সুলাইমানের মৃত্যু গভীর দুঃখজনক ঘটনা, কিন্তু কীভাবে তিনি মারা গেছেন সে বিষয়ে বিস্তারিত কিছু প্রকাশ করা হয়নি।

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে একাধিক বার্তাবাহক এ ব্যাপারে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। সাংবাদিক ও ইতিহাসবিদরা বিশেষ করে বলছেন, এই ধরনের গোপনীয়তা সত্য প্রকাশে বাধা দেয় এবং হত্যাকাণ্ডের নিন্দা জানাতে ব্যর্থ হয়।

সুলাইমান আল-ওবাই: ফুটবলের কিংবদন্তি

সুলাইমান আল-ওবাই জন্ম নেন ১৯৮৪ সালের ২৪ মার্চ গাজার খাদামাত আল-শাতি ক্লাবে। তার ফুটবল ক্যারিয়ার শুরু থেকে সাফল্যের ধারাবাহিকতা বজায় রেখেছিলেন। তিনি ফিলিস্তিনি ফুটবলের অন্যতম প্রতিভাবান ফুটবলারের একজন ছিলেন।

তার ক্যারিয়ারে তিনি ১০০’রও বেশি গোল করেন এবং জাতীয় দলের হয়ে ২৪ ম্যাচে অংশগ্রহণের মাধ্যমে দুটি গুরুত্বপূর্ণ গোল করেন। বিশেষ করে ২০১০ সালে পশ্চিম এশিয়ান ফুটবল ফেডারেশন চ্যাম্পিয়নশিপে ইয়েমেনের বিরুদ্ধে তার সিসার-কিক গোলটি এখনও ফুটবল প্রেমীদের স্মৃতিতে অমলিন।

তার ক্রীড়াজীবন এবং সামাজিক অবদান তাকে ফিলিস্তিনি জনগণের কাছে ‘ফিলিস্তিনি পেলে’ হিসেবে পরিচিতি দিয়েছে।

গাজার বর্তমান সংকট ও ফুটবল সম্প্রদায়ের ক্ষতি

ফিলিস্তিনি ফুটবল ফেডারেশনের পরিসংখ্যান অনুসারে, সাম্প্রতিক বছরগুলোতে ইসরায়েলি হামলায় গাজার ফুটবল সম্প্রদায়ের অন্তত ৩২১ জন নিহত হয়েছে। গাজা অঞ্চলের রাজনৈতিক অস্থিরতা এবং সামরিক সংঘাতের ফলে স্থানীয় ক্রীড়া কার্যক্রম স্থবির হয়ে পড়েছে।

খেলোয়াড়রা কেবল মাঠে খেলাই নয়, নিরাপত্তাহীনতার কারণে তাঁদের পরিবার ও জীবনের জন্যও উদ্বিগ্ন। খাদ্য, চিকিৎসা এবং মৌলিক সহায়তা পেতে গাজার মানুষদের লাইন দিতে হয়, আর সেই লাইনেই প্রিয় ফুটবল তারকা সুলাইমান আল-ওবাই প্রাণ হারিয়েছেন।

আন্তর্জাতিক ফুটবল সংস্থার নীরবতা ও সমালোচনা

উয়েফার বিরুদ্ধে সবচেয়ে বড় অভিযোগ হলো তারা সুলাইমানের মৃত্যুর পেছনের সত্য ঘটনা গোপন করেছে এবং ইসরায়েলি বাহিনীর ভূমিকা স্পষ্ট করেনি। এতে করে ফিলিস্তিনি ও আন্তর্জাতিক ফুটবল ভক্তদের মধ্যে হতাশা ও ক্ষোভ তৈরি হয়েছে।

সামাজিক মাধ্যমে বেশ কয়েকজন ফুটবল বিশ্লেষক ও সাংবাদিক বলেছেন, “যখন সুলাইমান গাজার জনগণের খাদ্যের জন্য অপেক্ষা করছিলেন, তখন ইসরায়েলি বাহিনী তাকে হত্যা করেছে। উয়েফা যদি সত্য প্রকাশ করত, তাহলে বিশ্বব্যাপী ফুটবলপ্রেমীরা এ ঘটনার বিরুদ্ধে একত্রিত হতে পারত।”

রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট ও মানবিক সংকট

গাজার সংঘর্ষ ও রাজনৈতিক উত্তেজনার ফলে ফিলিস্তিনি জনগণ দীর্ঘদিন ধরেই ব্যাপক মানবিক সংকটে রয়েছে। খাদ্যের ঘাটতি, চিকিৎসার অভাব, বিদ্যুৎ এবং পানি সেবার সীমাবদ্ধতা, এসব কারণে সাঁওতালি ফুটবলসহ অন্যান্য সামাজিক কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে।

এই পরিস্থিতিতে একজন ফুটবল তারকার মৃত্যু শুধু খেলা জগতের ক্ষতি নয়, পুরো গাজার মানুষের জন্য একটি আঘাত। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের দৃষ্টি আকর্ষণ করতেই এই ধরনের তথ্য গোপন রাখা হচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে।

ভবিষ্যৎ প্রভাব ও ফিলিস্তিনি ফুটবলের দৃষ্টিভঙ্গি

সুলাইমান আল-ওবাইয়ের মৃত্যু ফুটবল সম্প্রদায়ের মাঝে শোকের ছায়া ফেলে দিয়েছে। এর প্রভাব শুধু গাজার ফুটবল ক্ষেত্রেই সীমাবদ্ধ নয়, বরং পুরো ফিলিস্তিনি সমাজের মোরালে প্রভাব ফেলবে।

বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, গাজায় নিরাপত্তা এবং স্থিতিশীলতা ছাড়া ফুটবলসহ কোনো সামাজিক কার্যক্রম বিকশিত হতে পারবে না। ফুটবল একটি সামাজিক সংহতির মাধ্যম হিসেবে কাজ করে, যা এই সংকটে একটি ঐক্যবদ্ধ বার্তা দিতে পারে।

সারসংক্ষেপ  

সুলাইমান আল-ওবাইয়ের মৃত্যুর পেছনে সত্য ঘটনা গোপন রাখা এবং ইসরায়েলি বাহিনীর ভূমিকা অস্বীকার করা ফিলিস্তিনি জনগণ এবং ফুটবল ভক্তদের মধ্যে বড় ধরনের আক্ষেপ ও ক্ষোভ সৃষ্টি করেছে। উয়েফা এবং অন্যান্য আন্তর্জাতিক সংস্থার কাছে জনগণ দাবি করছে, প্রকৃত তথ্য প্রকাশ করতে এবং নির্দোষ মানুষের প্রতি সহানুভূতি প্রদর্শন করতে।

বিশ্লেষকরা বলছেন, এই ঘটনাটি কেবল ফুটবল জগতের নয়, মানবাধিকার রক্ষার দিক থেকেও গুরুত্বপূর্ণ। বিশ্ববাসী এখন দেখছে, কিভাবে আন্তর্জাতিক সংস্থা ও রাষ্ট্রগুলো মানবিক সংকট ও সংঘাতের সময় মানবিক মূল্যবোধকে প্রাধান্য দেয়।

ফিলিস্তিনি ফুটবল তারকার মৃত্যু নিয়ে যেভাবে তথ্য গোপন রাখা হয়েছে, তা ভবিষ্যতে আন্তর্জাতিক ক্রীড়া ও মানবাধিকার সংস্থাগুলোর জন্য বড় প্রশ্নচিহ্ন তুলেছে। ফুটবল বিশ্বের এই দৃষ্টিভঙ্গি ও দায়িত্বশীলতার প্রশ্ন এখন সবার সামনে।

এম আর এম – ০৭৬৫, Signalbd.com

মন্তব্য করুন
Advertisement

Related Articles

Back to top button